যদি বলা হয় যে সৌরজগতের একটি জায়গাতে কখনই যাওয়া ঠিক হবেনা, সেটা হল শুক্র গ্রহ। সেখানকার পরিবেশে ধাতুর তৈরি রোবটও টিকতে পারেনা। সেখানে সর্বশেষ যে প্রোব পাঠানো হয়েছিল, ভেনেরা-১৩, রাশিয়ান প্রোব, সেটি শুক্রের পৃষ্ঠে দুই ঘন্টাও টেকেনি। "শুক্র খুবই করোসিভ জায়গা।" বলেন নাসা'র গ্লেন রিসার্চ সেন্টারের রসায়নবিদ ও ম্যাটেরিয়াল সাইনটিস্ট গুস্তাভো কস্টা। তার মতে "শুক্রই নরক। খুবই বাজে জায়গা।" তিনি একটি ১৪ টনের স্টীল চেম্বার নিয়ে কাজ করছেন যেটা কৃত্তিমভাবে শুক্রের পরিবেশের মত করে বানানো হয়েছে। জিনিসটার নাম হল গ্লেন এক্সট্রীম এনভায়রনমেন্ট রিগ (GEER)। ২০১৪ সালে নাসা গুস্তাভকে প্রথমবারের মত এটাকে চালু করার অনুমতি দেয়। তিনি সিরামিক, বিভিন্ন ধরণের তার থেকে শুরু করে সব ধরণের ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতি তাতে পরীক্ষা করেন।তিনি জানতে চাচ্ছিলেন কোনটা টিকে থাকে কোনটা থাকেনা।
|
গ্লেন এক্সট্রীম এনভায়রনমেন্ট রিগ (GEER) ও গুস্তাভ কস্টা। |
শুক্র সূর্যের দ্বিতীয় গ্রহ। পৃথিবীর সাথে খুবই মিল। শুক্র গ্রহ পাথুরে।ভর পৃথিবীর ভরের ৮২% এবং গ্র্যাভিটি পৃথিবীর গ্র্যাভিটির ৯০%। পৃথিবীতে যদি কারও ভর ১৫০ পাউন্ড হয়, শুক্রে হবে ১৩৫ পাউন্ড। শুক্রের একটি স্থায়ী বায়ুমণ্ডল আছে। শুক্র সূর্যের বাসযোগ্য এলাকা বা গোলডিলকস এলাকার একদম শুরুতে অবস্থান করছে, যেখানে পানি তরল হিসেবে প্রবাহিত হতে পারে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন প্রায় দুই বিলিয়ন বছর ধরে শুক্রের আবহাওয়াও আরামদায়ক ছিল।সেখানে নীচু সমুদ্র ছিল যাতে জীবনও হয়ত ছিল। পৃথিবীকে প্রমাণ হিসেবে ধরলে জীবনের উৎপত্তি হতে প্রায় ১.২ বিলিয়ন বছরই যথেষ্ট। কিন্তু এক সময় শুক্র তার পানি হারিয়ে ফেলে, বায়ুমন্ডলে কার্বনডাই অক্সাইডের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায় যা পরবর্তীতে মারাত্মক গ্রীন হাউস ইফেক্ট ধারণ করে। তাপমাত্রা এতটাই বেড়ে যায় যে সীসা পর্যন্ত গলে যাবে। আমরা এতসব জানি শুক্রে পরিচালিত হওয়া কিছু সফল মিশনের কল্যানে। শুক্রে ৮টি অরবিটার ও ১০টি ল্যান্ডার পাঠানো হয়েছিল। এসব মিশন থেকে জানা যায় যে শুক্রে যেটা বাতাস, সেটা আসলে প্রায় ৯৭% কার্বনডাই অক্সাইড। কার্বনডাই অক্সাইডের পরিমাণ এতোটাই বেশী যে তা পৃথিবীর বাতাসের চেয়ে প্রায় ১০০ গুণ ঘন। সেই সাথে শুক্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ভয়ঙ্কর ৪৬২ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
|
শুক্রের আসল রঙের ছবি। |
কস্টা বলেন "মানুষ এসব মিশন থেকে যা কিছু শিখেছে GEER এ তার সবকিছু ব্যাবহার করা হয়েছে শুক্রের বায়ুমন্ডলের মত একটি পরিবেশ তৈরি করার জন্য।এটি একটি সুপারক্রিটিক্যাল তরল, গ্যাসের মত নয়।" সুপারক্রিটিক্যাল তরল একই সাথে তরল ও গ্যাসের মত আচরণ করে। যদি আপনি ডিক্যাফেইনড কফি খান, তবে এটা থেকে সুবিধা পাবেন। সুপারক্রিটিক্যাল কার্বন ডাই অক্সাইড কফির বীজের ভেতরে ঢুকে গিয়ে বেশীরভাগ ক্যাফেইন দ্রবীভূত করে বের করে নিয়ে আসে।
যদি আপনি শুক্রের মাটিতে হাঁটতে থাকেন তবে মনে হবে আপনি সুইমিং পুলের পানির মত ঘন বাতাসের মধ্য দিয়ে হাঁটছেন। চাপ যা অনুভত হবে তা প্রায় ৩০০০ ফুট পানির নিচের চাপের মত।কিছু মাইল গতির হালকা বাতাসের ধাক্কা আপনাকে মাটিতে ফেলে দেবে। তাপের কারনে মনে হবে আপনি প্রেশার কুকারের ভেতর আছেন। আপনি মারা গেলেই এই নির্যাতনের শেষ হবেনা। শুক্রের বাতাসে অল্প পরিমাণে হাইড্রোজেন ফ্লুরাইড, হাইড্রোজেন ক্লোরাইড, হাইড্রোজেন সালফাইড ও সালফিউরিক এসিড আছে। এগুলো এতটাই খারাপ কেমিক্যালস যেগুলো মানুষের মাংস দ্রবীভূত করে ফেলতে পারে বা বিষ হিসেবে কাজ করে। পানির মেঘ থাকার বদলে শুক্রে আছে সালফিউরিক এসিডের মেঘ। যদি শুক্রের মাটিতে পৌছাতে চান তবে এই সালফিউরিক এসিডের মেঘের ভেতর দিয়েই যেতে হবে। ব্যাপারটা আসলে গা শিউরানো।
No comments