বামন গ্রহ সেরেস এর ব্যাপারে সাতটি তথ্য।
২০১৫ সালের ৬ই মার্চে নাসা’র
ডন স্পেসক্র্যাফট সেরেস’র কক্ষপথে পৌঁছায়। ডন স্পেসক্র্যাফটই হল মানুষের তৈরি প্রথম
যন্ত্র যা একটি বামন গ্রহকে প্রদক্ষিণ করেছে।
মঙ্গল ও বৃহস্পতির মাঝে
যে গ্রহাণুপুঞ্জ বা এস্টেরয়েড বেল্ট রয়েছে তার সবচেয়ে বড় বস্তু হল এই সেরেস। বামন গ্রহদের
মাঝে সবচেয়ে কাছের হল সেরেস। ডন স্পেসক্র্যাফট সেরেস’র উৎপত্তি ও সেরেস কি কি পদার্থ
দিয়ে তৈরি তা নিয়ে নানা ধরণের তথ্য পৃথিবীতে পাঠাচ্ছে।
ডন সেরেস কে প্রদক্ষিণ করার
আগে নাসা’র হাবল স্পেস টেলিস্কোপ এবং ইউরোপের হারশেল স্পেস অবজারভেটরি এর সাহায্য নিয়ে
সেরেস কে পর্যবেক্ষণ করা হত। ডন এর কার্যক্রম শুরুর আগে সেরেস এর ব্যাপারে যেসব তথ্য
জানা গেছে তাদের মাঝে সবচেয়ে অবাক করা সাতটি তথ্য নিচে দেয়া হল।
১) সেরেস হল প্রথম আবিষ্কৃত
গ্রহাণু।
সিসিলিয়ান জ্যোতির্বিদ জিউসেপ্পি
পিয়াতজী ১৮০১ সালের পয়লা জানুয়ারী প্রথম সেরেস কে শনাক্ত করেন। পিয়াতজী এর আগেই গাণিতিকভাবে
প্রমাণ করেছিলেন যে মঙ্গল ও বৃহস্পতির মাঝের ওই বিশাল ফাঁকা জায়গাতে কোন না কোনও মোটামুটি
ভারী গ্রহের মত কিছু একটা আছেই। পরবর্তীতে সেরেস কে পাওয়া গেলেও পিয়াতজীর ভবিষ্যদ্বাণীর
জায়গাতে পাওয়া যায়নি।
প্রথম দিকে সেরেস কে গ্রহ
বলা হলেও যখন ওই একই অঞ্চলে অনেকগুলি গ্রহাণু আবিষ্কার হল তখন সেরেক কে শুধু গ্রহানু’র
মরজাদাই দেয়া হল। ২০০৬ সালে সেরেস বামন গ্রহের মর্যাদা পায়।
২) সেরেস’র নামকরণ করা হয়
রোমানদের কৃষির দেবীর নামানুসারে।
পিয়াতজী তার আবিষ্কৃত গ্রহের
নাম রেখেছিলেন রোমানদের ফলন ও ভুট্টা’র দেবীর নামানুসারে। ১৮০৩ সালে মৌলিক পদার্থ সেরিয়ামের
নামকরণও করা হয় এই বামন গ্রহের নামানুসারে।
৩) এর কিছু রহস্যময় উজ্বল
চিহ্ন আছে।
ডন স্পেস ক্র্যাফট ২০১৪
ও ২০১৫ এর শুরুর দিকটায় যখন সেরেস’র নিকটবর্তী হচ্ছিল, তখন জ্যোতির্বিদেরা সেরেস’র
পৃষ্ঠে উত্তর গোলার্ধে দুটি খুবই উজ্বল ছাপ দেখতে পান। উজ্বল ছাপগুলির কাছাকাছি কোথাও
কোনও ঢিবি ছিলনা। এর মানে হল ছাপগুলির কারণ আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত নয়।
৪) সেরেস এ হয়ত পানির বাষ্পের
উদ্গীরন হয়।
হারশেল স্পেস অব্জারভেটরীর
এক পর্যবেক্ষণে সেরেস’র কমপক্ষে দুটি জায়গা থেকে পানির বাষ্প নির্গত হবার প্রমাণ পাওয়া
যায়। দুটি জায়গাই আগে উল্লেখ করা উজ্জ্বল ছাপের কাছাকাছি। এর কারণ হতে পারে সেখানে
কোনও পানির বরফের আগ্নেয়গিরি আছে।কোনও একটি উল্কাপাতের কারণেও বাষ্পের উদ্গীরন হতে
পারে বলে বিজ্ঞানীদের মতামত পাওয়া গেছে। ডন
স্পেসক্র্যাফটকে এটারও অনুসন্ধান করতে হবে।
৫) সেরেস’র মাটির নীচে পানির
মহাসগর থাকতে পারে।
বাষ্পের উদ্গীরন সেরেস’র
পৃষ্ঠের নীচে একটি মহাসাগর থাকার সম্ভবনা জোরালো করে। হয়ত সেখানে প্রাণের ধারণ ক্ষমতাও
থাকতে পারে।
সৌরজগতে বৃহস্পতির কিছু
চাঁদ যেমন ইউরোপা এবং শনির চাঁদ এনসেলেডাসে তাদের পৃষ্ঠের নীচে পানির মহাসাগর থাকতে
পারে বলে বিজ্ঞানীরা বলে আসছেন। সেখানে পানি তরল থাকতে পারে কারণ বৃহস্পতির চাঁদ দের
নিজেদের ও বৃহস্পতির গ্র্যাভিটির কারণে তৈরি হওয়া টাইডাল ফোরস। এই টাইডাল ফোরসের কারণে
যে তাপের উৎপত্তি হয় তা পানিকে তরল রাখার জন্য যথেষ্ট। সেরেস হয়ত তার আশেপাশের গ্রহগুলি
থেকে ততটা টাইডাল ফোরস পায়না, কিন্তু সেরেস’র কেন্দ্রে এখনও কিছু তেজস্ক্রিয় পদার্থ
রয়ে যেতে পারে যা থেকে পানিকে তরল রাখতে পারার মত তাপের সৃষ্টি হতে পারে।
৬) সেরেস গোলাকার।
এস্টেরয়েড বেল্টের অন্যান্য
গ্রহাণুর মত সেরেস এবড়ো থেবড়ো নয়। এর আকৃতি খুবই গোলাকার। সেরেস এর যথেষ্ট ভর আছে যা
যথেষ্ট পরিমাণ গ্র্যাভিটি তৈরি করতে পারে সেরেস কে গোলাকার আকৃতি দেবার জন্য। সেরেস’র
ব্যাস হল প্রায় ৫৯০ মাইল বা ৯৫০ কিলোমিটার। যেহেতু সেরেস গোলাকার, তাই বিজ্ঞানীদের
ধারণা সেরেস’র ভেতরটা অনেকগুলি স্তরে বিভক্ত এবং বিভিন্ন স্তরের ভিন্ন ভিন্ন গতি আছে।
সেরেস’র কেন্দ্র হয়ত পাথুরে, তার উপরের অংশ বরফের এবং সবচেয়ে উপরের অংশে পানির মহাসাগর
আছে।
৭) সেরেস’র হয়ত একটি বায়ুমণ্ডলও
আছে।
সেরেস সূর্য থেকে তুলনামূলকভাবে
অনেক দূরে অবস্থান করছে যেখানে পানি তরল অবস্থায়
থাকতে পারার কথা নয়। তবে এর তাপমাত্রা প্রায় হিমাঙ্কের নীচে প্রায় ৩৭ ডিগ্রী ফারেনহাইট
বা -৩৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠতে পারে। সেরেস’র পৃষ্ঠে যদি পানির বরফ থাকে তবে
তা সরাসরি বাষ্পে পরিণত হবে, যা থেকে একটি অস্থায়ী বায়ুমন্ডলের উৎপত্তি হতে পারে। ডন
স্পেসক্র্যাফট এটারও সত্যতা পরীক্ষা করবে।
No comments