Header Ads

  • সর্বশেষ

    হ্যালী'র ধুমকেতু কি দিয়ে তৈরি?

    গিওটো ও ভেগা মিশন হ্যালী'র ধুমকেতুর পৃষ্ঠ ও গঠন সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের সর্ব প্রথম ধারণা দেয়। অন্য ধুমকেতুর মত হ্যালী'র ধুমকেতুও সূর্যের যত কাছে যায় তার উদ্বায়ী পদার্থগুলি তার নিউক্লিয়াসের পৃষ্ঠ থেকে বাষ্প হয়ে বেরিয়ে যেতে থাকে। এগুলোর মাঝে আছে পানি, কার্বন মনোক্সাইড, কার্বন ডাই অক্সাইড এবং অন্যান্য যৌগের বরফ। এর ফলে ধুমকেতুতে একটি কোমা বা বায়ুমন্ডলের সৃষ্টি করে যার প্রশস্ততা ১,০০,০০০ কিলোমিটার। এসব ময়লা বরফ বাষ্পে পরিণত হবার ফলে ধূলিকণা নির্গত হয় যেগুলি উৎপন্ন হওয়া গ্যাসের সাথে চলতে থাকে। কোমায় যে গ্যাসের অণু থাকে সেগুলি সূর্যের আলো শোষণ করে। এরপর ভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যে পুনঃবিকিরণ করে। এই ব্যাপারটাকে ফ্লুরেসেন্স বলে। ফ্লুরেসেন্সের কারণে ধূলিকণা সূর্যের আলোর বিচ্ছুরণ ঘটায়। এতে কোমাকে পৃথিবী থেকে দেখা যায়। সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মির কারণে কিছু গ্যাসের অণু আয়ণিত হয়। এর সাথে সূর্য থেকে নির্গত চার্জড পারটিকেলের ধারার কারণে তৈরি চাপ কোমায় থাকা আয়নগুলিকে লেজে পরিণত করে। এই লেজ ১০০ মিলিয়ন কিলোমিটারেরও বেশী দীর্ঘ হতে পারে। সূর্য থেকে আসা চার্জড পারটিকেলের প্রবাহে যদি বিরতি থাকে এই লেজ ধুমকেতুর নিউক্লিয়াস থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্নও হয়ে যেতে পারে।
      
    হ্যালী'র ধুমকেতুর বিশাল কোমার তুলনায় এর নিউক্লিয়াস বেশ ছোট। এটি প্রায় ১৫ কিলোমিটার লম্বা, আট কিলোমিটার প্রশস্ত ও প্রায় আট কিলোমিটার মোটা। এর নিউক্লিয়াসকে দেখতে চীনাবাদামের মত লাগবে। এর ভর তুলনামূলক কম, প্রায় ২.২ x ১০^১৪ কেজি। গড় ঘনত্ব প্রতি ঘন সেন্টিমিটারে মাত্র ৬০০ মিলিগ্রাম। তারমানে এটি অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ দিয়ে তৈরি, নিজেদের সাথে খন্ড গুলো খুবই হালকাভাবে জোড়া লেগে আছে। পৃথিবী থেকে কোমা পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় যে হ্যালী'র ধুমকেতু তার নিজের অক্ষের উপর একবার পাক খেতে সাত দিন চার ঘন্টা সময় নেয়। এর নিউক্লিয়াসের চেহারা দেখে বোঝা যায় এর ঘূর্ণন প্রকৃতি খুবই জটিল। যতগুলি মিশন পরিচালিত হয়েছে হ্যালী'র ধুকেতুতে তাতে ধুমকেতুটির পৃষ্ঠের মাত্র ২৫%'র ছবি তোলা হয়েছে। এর পৃষ্ঠে খুবই বৈচিত্র্যময়। সেখানে পর্বতমালা, নিম্নভূমি ও কমপক্ষে একটি উল্কাপাতের ফলে সৃষ্ট ক্রেটার আছে। 

    যেসব ধুমকেতু বার বার ফেরত আসে,যেমন ধুমকেতু এঙ্কে, ধুমকেতু হোমস, তাদের মাঝে হ্যালী'র ধুমকেতু সবচেয়ে প্রাণবন্ত। কমপক্ষে দ্বিগুণ। এর যেদিকে সূর্যের আলো পড়ে সেদিকটা অন্য দিকের চেয়ে বেশী সক্রিয়। স্পেসক্র্যাফটের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে যেসব পদার্থ হ্যালী'র ধুমকেতু থেকে নির্গত হয় তার ৮০% পানির বাষ্প, ১৭% কার্বন মনোক্সাইড আর ৩-৪% কার্বনডাই অক্সাইড, সাথে খুব অল্প পরিমানে হাইড্রোকার্বন যৌগ, মিথেন ও এমোনিয়াও আছে। যেসব ধুলাকণা নির্গত হয় সেগুলি মূলত কার্বন-নাইট্রোজেন-হাইড্রোজেন-অক্সিজেন এর সমন্বয়ে তৈরি যৌগ যেগুলি সৌরজগতের বাইরের দিকটায় যথেষ্ট পরিমানে আছে এবং সিলিকেট যৌগ, যেগুলি পৃথিবীর পাথরে পাওয়া যায়। ধূলিকণার আকার ০.০০১ মাইক্রোমিটার পর্যন্তও শনাক্ত করা গেছে। হ্যালী'র ধুমকেতুতে পাওয়া পানির বাষ্পে হাইড্রোজেন ও ডিউটেরিয়ামের অনুপাত পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় তা পৃথিবীর পানির মতই। এতে বোঝা যায় যে এই ধরণের ধুমকেতু গুলিই হয়ত সুদূর অতীতে পৃথিবীতে পানি নিয়ে এসেছিল। পরের কিছু গবেষণায় দেখা যায় যে এই অনুপাত পৃথিবীর পানির চেয়ে বেশী, ফলে মেনে নেয়া হয় যে এসব ধুমকেতু পৃথিবীর পানির আদি উৎস নয়। 
    ভেগা মিশনে তোলা হ্যালী'র ধুমকেতুর নিউক্লিয়ার বা মূল শরীর।
    গিওটো মিশনে ফ্রেড হুইপ্পল'র ধুমকেতু সৃষ্টি নিয়ে দেয়া প্রস্তাব "ডারটি স্নোবল" প্রথম প্রমাণ পায়। হুইপ্পল তার প্রস্তাবে বলেন যে ধুকেতুরা বিভিন্ন যৌগের বা মৌলের বরফের তৈরি বস্তু যার সূর্যের কাছে আসলে তাপে তাদের পদার্থ বাষ্পে পরিণত হয় এবং বাইরের দিকে উদ্বায়ী পদার্থের প্রবাহ তৈরি হয়। গিওটো মিশন দেখায় যে এই প্রস্তাব অনেকখানি সঠিক। হ্যালীর ধুমকেতুতে পতিত সূর্যের আলোর মাত্র ৪% প্রতিফলিত হয় যা কয়লার সমান। তাই পৃথিবী থাকে হ্যালী'র ধুমকেতুকে সাদা উজ্জ্বল মনে হলেও আসলে এটি কয়ালার মত কালো। এর পৃষ্ঠ থেকে বাষ্পে পরিণত হওয়া ময়লা বরফের তাপমাত্রা মাইনাস ১০৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস (এ সময় সবচেয়ে বেশী আলোর প্রতিফলন হয়) থেকে মাইনাস ৫৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস (এ সময় সবচেয়ে কম আলোর প্রতিফলন হয়)। ভেগা-১ মিশনে হ্যালী'র ধুমকেতুর পৃষ্ঠ তাপমাত্রা পাওয়া যায় ৩০-১৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াস।  এতে বোঝা যায় যে এর মাত্র ১০% সক্রিয় ছিল বাকী বিরাট অংশ ঘন কাল রঙের ধুলার স্তরে ঢাকা যা তাপ ধরে রাখে। এসব পর্যবেক্ষণ থেকে বোঝা যায় যে হ্যালীর ধুমকেতুর বেশীর ভাগই উদ্বায়ী নয় এমন পদার্থ দিয়ে তৈরি। তার মানে একটা সময় আসবে যখন হ্যালী'র ধুমকেতুর আর লেজ থাকবেনা। 

    No comments

    Post Top Ad

    Post Bottom Ad