Header Ads

  • সর্বশেষ

    পৃথিবীর নিকটতম ব্ল্যাকহোল কত দূরে?

    বন্ধুকে কাছে রাখা যায়, কিন্তু শত্রুকে? আমরা ব্ল্যাকহোলের কথা বলছি। আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রুই তো ব্ল্যাকহোল। আমরা অবশ্যই চাই ব্ল্যাকহোল যেন পৃথিবী থেকে সবচেয়ে দূরে থাকুক। আমরা মহাকাশের সেই স্থান নিয়ে কথা বলছি যেখানে পদার্থ এতটাই ঘনীভূত হয় যে শুধুমাত্র আলোর সমান গতি ছাড়া সেই গ্র্যাভিটি থেকে বের হওয়া অসম্ভব। আর আমরা জানি যে আলোর সমান গতি পাওয়া সম্ভব নয় তাই সেই গ্র্যাভিটি থেকে মুক্তিও সম্ভব নয়। ব্ল্যাক হোলের খুব কাছে চলে গেলে চিন্তার বাইরে ঘনীভূত হতে হবে, বস্তুত একটি বিন্দুতে পরিণত হতে হবে। 
    কিন্তু ব্ল্যালহোল থেকে অনেক দূরে থাকলেও বিপদের সম্ভবনা আছে। ব্ল্যাকহোলের গ্রাভিটি আলোকবর্ষ পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। যদি এদের একটি মহাকাশে ঘুরতে ঘুরতে সৌরজগতের কাছে চলে আসে তবে পৃথিবীতে মহাবিপর্যয় শুরু হয়ে যাবে। গ্রহগুলি এমনকি সূর্যও ব্ল্যাকহোলে নিশ্চিহ্ন হতে পারে বা সৌরজগৎ থেকে বাইরে বের করে দিতে পারে। 
    ব্ল্যাকহোলকে খুন করা যায়না। যা কিছুই করতে যাওয়া হোক না কেন, সেটা ব্ল্যাক হোলকে শুধু বড়ই করবে। আমরা শুধু সময়ের সাথে সাথে ব্ল্যাকহোলের বাষ্পে পরিণত হবার জন্য অপেক্ষা করতে পারি। এটা যৌক্তিক যে সৌরজগতের আশেপাশের ব্ল্যাকহোল গুলির খোঁজ খবর রাখা উচিত আমাদের। বলা যায় না কখন আবার সৌরজগৎ ছেড়ে চলে যাওয়া লাগে। 
    তাহলে সবচেয়ে কাছের ব্ল্যাকহোলটি কোথায়?
    শিল্পীর তুলিতে V616 Mon
    ব্ল্যাকহোল দুই রকমের। একটি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল, যা একটি গ্যালাক্সীর কেন্দ্রে থাকে। অন্যটি স্টেলার মাস ব্ল্যাক হোল, যখন কোন ভারী নক্ষত্র সুপারনোভা বিস্ফোরণে ধ্বংস হয়। আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রে একটি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল আছে, যা পৃথিবী থেকে প্রায় ২৭০০০ আলোকবর্ষ দূরে। এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সীর কেন্দ্রেও আছে, দূরত্ব ২.৫ মিলিয়ন আলোকবর্ষ। এসব সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল থেকে পৃথিবী নিরাপদ দূরত্বেই আছে। 
    কিন্তু স্টেলার মাস ব্ল্যাকহোল সমস্যা করতে পারে। সমস্যা হল ব্ল্যাকহোল থেকে যেহেতু কোন আলো বের হতে পারেনা তাই এগুলোকে দেখাও যায়না। কোথাও একটি ব্ল্যাকহোল আছে কিনা তা বোঝা যায় এর পেছনের নক্ষত্র গুলির আলো বেঁকে যাচ্ছে কিনা তা থেকে। যদি তা দেখার জন্য যথেষ্ট কাছে যাওয়া হয় তবে তো শেষ। 
    এখন পর্যন্ত জানা সবচেয়ে কাছের ব্ল্যাক হোলের নাম V616 মনোসেরোটিস বা V616 Mon। প্রায় ৩০০০ আলোকবর্ষ দূরের এই ব্ল্যাকহোলের ভর সূর্যের প্রায় ৯-১৩ গুণ। আমরা এটা সেখানে আছে জানি কারণ এটি সূর্যের অর্ধেক ভরের একটি নক্ষত্রের সাথে বাইনারী স্টার সিস্টেমে অবস্থান করছে। শুধুমাত্র ব্ল্যাক হোলের কাছে থাকলেই একটি নক্ষত্রের প্রদক্ষিণ এত দ্রুত হতে পারে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ব্ল্যাক হোল দেখতে পান না, কিন্তু ঠিকই তাদের গ্র্যাভিটির নাচন ধরতে পারেন। 
    তারপরের নিকটতম ব্ল্যাকহোল সিগনাস-এক্স-১। পৃথিবী থেকে দূরত্ব প্রায় ৬০০০ আলোকবর্ষ। এর ভর সূর্যের প্রায় ১৫ গুণ। এটিও একটি বাইনারী সিস্টেমের অংশ। 
    তৃতীয় নিকটতম ব্ল্যাকহোল V404 সিগনী। দূরত্ব প্রায় ৭৮০০ আলোকবর্ষ। এটিও একটি বাইনারী সিস্টেমের অংশ। 
    সমস্যা টা বুঝতে পারছেন? মোট সংখ্যার মাত্র কয়েকটি ব্ল্যাকহোল এই পদ্ধতিতে শনাক্ত করা সম্ভব। হয়ত বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর খুব কাছেই একটি ব্ল্যাক হোল আবিষ্কার করে ফেলতে পারে। এটা আসলেই ভয়ঙ্কর শুনতে। আমি নিশ্চিত যে আপনার একটি চোখ আকাশের দিকে থাকবে। খুঁজতে থাকবে কোন নক্ষত্রের থেকে আসা আলোর কোন বক্রতা তৈরি হচ্ছে কিনা। 
    সৌরজগৎ প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন বছর ধরে নিরাপদে পার করেছে। যদি কোন ব্ল্যাক হোল সৌরজগতের কয়েক ডজন আলোকবর্ষের মাঝে চলে আসে তবে তার প্রভাব খুই বাজেভাবে পড়বে। এমনকি জীবনের বিলুপ্তিও ঘটতে পারে। সৌরজগৎ কয়েক বিলিয়ন বছরে কোন ব্ল্যাক হোলের গ্র্যাভিটি পায়নি, হয়ত আগামী বিলিয়ন ট্রিলিয়ন বছরের পরও পাবেনা। 

    No comments

    Post Top Ad

    Post Bottom Ad