সম্পূর্ণ নতুন ধরণের ব্ল্যাকহোল আবিষ্কার।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা অনেক আগেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে মধ্যম ভরের ব্ল্যাকহোল পাওয়া যেতে পারে যার ভর হবে সূর্যের ভরের ১০০ থেকে ১০,০০০ গুনের ভেতর। কিন্তু এতদিন খুব কমই এ ধরণের ব্ল্যাকহোলের অবস্থান ধরা পড়েছে। তাই এই নতুন পর্যবেক্ষণ বেশ আকর্ষণীয়।
আমরা কোন গ্যালাক্সীর কেন্দ্রে সাধারণত সুপারম্যসিভ ব্ল্যাকহোল দেখতে পাই। বিজ্ঞানীদের ধারণা এই সব মধ্যম ভরের ব্ল্যাকহোল গুলির ব্যাপারে গবেষণা ঐ সব সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ সূত্র দিতে পারবে। "আমরা একটি মধ্যম ভরের ব্ল্যাকহোল খুঁজে পেতে চাই কারণ হয়ত তারাই সুপারম্যসিভ ব্ল্যাকহোল সৃষ্টির রহস্য উন্মোচন করতে পারবে। এগুলোই হয়ত সুপারম্যসিভ ব্ল্যাকহোল তৈরির প্রাথমিক বীজ।" বলেন হার্ভার্ড- স্মিথসোনিয়ান সেন্টার ফর এস্ট্রোফিজিক্সের প্রথম সারির একজন গবেষক বিউলেন্ট কিজিল্ট্যান।
সর্বশেষ ধরা পড়া মধ্যম ভরের ব্ল্যাকহোল পাওয়া গেছে ৪৭ টিউকেনি স্টার ক্লাস্টারে। পৃথিবী থেকে বেশ কাছাকাছি এই ব্ল্যাকহোলের দূরত্ব প্রায় ১৩০০০ আলোকবর্ষ। এই স্টার ক্লাস্টারে হাজারের উপরে নক্ষত্র আছে সেই সাথে আছে দুই ডজন পালসার। সম্পূর্ণ এই স্টার ক্লাস্টারের ব্যাস মাত্র ১২০ আলোকবর্ষ। বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে এর কেন্দ্রে এরকম একটি ব্ল্যাকহোল আশা করছিলেন।
ধারণা করা হয় সূর্যের চেয়ে কমপক্ষে আটগুণ ভারী কোন নক্ষত্র তার জীবনের শেষে নিজের গ্র্যাভিটির কারণে নিজের কেন্দ্রের দিকে সংকুচিত হতে থাকে, তারপর অসীম ঘনত্ব অর্জন করে, এবং সবশেষে ব্ল্যাক হোলে পরিণত হয়। একটি স্টার ক্লাস্টারের ভেতরে ব্ল্যাক হোলের অবস্থান আবিষ্কার করা বেশ কঠিন কাজ। কারণ ব্ল্যাক হোল তার গ্র্যাভিটি দিয়ে আশেপাশের সমস্ত বস্তু তার নিজের দিকে টানতে থাকে।তার গ্র্যাভিটি এড়িয়ে আলো পর্যন্ত বাইরে বের হতে পারেনা। তাইতো এর নাম ব্ল্যাকহোল। সাধারণত জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ব্ল্যাক হোল থেকে আসা এক্স-রে থেকে ব্ল্যাক হোলের অবস্থান বের করেন। কিন্তু এই পদ্ধতি তখনি কাজে লাগে যখন ব্ল্যাকহোলটি তার আশেপাশের বস্তু বা গ্যাস খেতে থাকে। মজার ব্যাপার হল ৪৭ টিউকেনি স্টার ক্লাস্টারের কেন্দ্রে যথেষ্ট পরিমাণ গ্যআস নেই যা টেনে নেবার পর এক্স-রে বিকিরণ সম্ভব। তাই এর কেন্দ্রের ব্ল্যাক হোলকে সহজে শনাক্ত করা যায়নি। শনাক্ত করার আরেকটি উপায় হল ব্ল্যাক হোলের সাথে তার কাছের নক্ষত্রগুলির প্রভাব। কিন্তু ৪৭ টিউকেনি স্টার ক্লাস্টারে নক্ষত্রের সংখ্যা এততাই বেশী যে এই পদ্ধতিও কাজে লাগানো যায়নি।
নতুন এই গবেষণায় গবেষক দলটি দুটি ভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। প্রথমে উনারা দুই একটি নক্ষত্র পর্যবেক্ষণে না রেখে সম্পূর্ণ ৪৭ টিউকেনি স্টার ক্লাস্টারের গতিবিধির উপর নজর রাখছিলেন। এতে দেখা যায় যে কিছু একটা ৪৭ টিউকেনি স্টার ক্লাস্টারের নক্ষত্র গুলিকে চারিদিকে ছড়িয়ে দিতে থাকে। এতে নক্ষত্রগুলি প্রচন্ড গতি প্রাপ্ত হয়। এ ধরণের প্রচন্ড গতি দেবার শক্তি শুধুমাত্র এক ধরণের মহাজাগতিক বস্তুরই থাকতে পারে। সেটি হল একটি ব্ল্যাকহোল। ৪৭ টিউকেনি স্টার ক্লাস্টারের যে পালসার গুলি ছিল সেগুলিও ব্ল্যাকহোলটির গ্র্যাভিটিতে বাইরের দিকে বেরিয়ে যাচ্ছিল। যদি কেন্দ্রে একটি ব্ল্যাক হোল না থাকে তবে পালসারকে তার গতিপথ পরিবর্তন করানোর শক্তি আর কোনও কিছুরই নেই। কম্পিউটার সিমুলেশনে ৪৭ টিউকেনি স্টার ক্লাস্টারের কেন্দ্রে মধ্যম ভরের ব্ল্যাকহোল থাকার ব্যাপারটা প্রমাণিত হয়। সমস্ত তথ্য উপাত্ত থেকে বোঝা যায় যে কেন্দ্রে যে ব্ল্যাকহোলটি আছে তার ভর সূর্যের প্রায় ১৪০০ থেকে ৩৭০০ গুনের ভেতরে। এগুলো মধ্যম ভরের ব্ল্যাকহোলের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
গবেষকেরা এই গবেষণা চালিয়ে যাবেন এই মধ্যম ভরের ব্ল্যাকহোল কিভাবে কাজ করে তা জানার জন্য। তাদের মতে অন্য স্টার ক্লাস্টারেও আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ রহস্য লুকিয়ে আছে। যত বেশী আবিষ্কার হবে সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল সৃষ্টির রহস্য উন্মোচনের তত কাছাকাছি পৌঁছানো সম্ভব হবে।
এই গবেষণাটি নেচার জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
No comments