আকাশে মিল্কিওয়ের অবস্থান।
মনে করুন আপনি রাতের বেলায় পরিস্কার আকাশের নীচে খোলা একটি মাঠের মাঝে দাঁড়িয়ে আছেন। এবার মাটির সাথে ৩০ ডিগ্রী কোণ করে আপনার সামনের আকাশের দিকে তাকালেন। মিল্কিওয়েকে দেখতে পাবেন। মনে হবে আবছা সাদা একটা কোণ কিছুর ধারা একপাশ থেকে অন্য পাশে চলে গেছে। যতগুলি নক্ষত্র আপনি খালি চোখে দেখতে পাচ্ছেন সবই মিল্কিওয়ের নক্ষত্র। এই আবাছা ধারাটি সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য অজানা নক্ষত্রের ও অন্যান্য বস্তু থেকে আসা আলো থেকে যেগুলি মিল্কিওয়ের কেন্দ্রের দিকে অবস্থিত। এই সাদা আবছা ধারাটির মাঝে একটু পরপর কিছু অন্ধকার জায়গাও দেখা যাবে। যেমন "গ্রেট রিফট" ও "কোলস্যাক"। এরা হল আন্তঃছায়াপথ ধুলির জমায়েত। এগুলোর কারনেই পৃথিবী বা সৌরজগৎ থেকে মিল্কিওয়ের কেন্দ্রকে ভালো করে দেখা যায়না। মিল্কিওয়ের কারণে আকাশের যে অংশ দেখা যায়না তাকে বলে " জোন অব এভয়ডেন্স" বা আকাশের এড়িয়ে চলা জায়গা।
মাটি থেকে মিল্কিওয়ের উজ্জ্বলতা বেশ কম মনে হয়। তাছাড়া শহরের আলোকদূষণ বা পূর্ণিমার আলো থাকলে মিল্কিওয়েকে মোটেও ভালো করে দেখতে পাবার কথা নয়। মিল্কিওয়ে দেখতে হলে প্রত্যেক বর্গ আর্কসেকেন্ডে এপারেন্ট ম্যাগনিচুড ২০.২ থাকতে হবে। এই ম্যাগনিচুড যত কম উজ্জ্বলতা তত বেশী। সূর্যের এপারেন্ট ম্যাগনিচুড -২৭, পূর্ণিমার চাঁদের এপারেন্ট ম্যাগনিচুড -১৩। সবচেয়ে ভালো দেখা যায় যখন এপারেন্ট ম্যাগনিচুড +৫.১ এর নীচে থাকে। এজন্যই শহরের বাইরে বা চাঁদ যখন দিগন্তের নীচে থাকে তখন মিল্কিওয়েকে খুব ভালো দেখা যায়। সমগ্র পৃথিবীর তিন ভাগের একভাগ মানুষ তাদের বাড়ি থেকে মিল্কিওয়েকে দেখতে পায়না।
পৃথিবী থেকে মিল্কিওয়ের যতটুকু দেখা যায় তাতে সব মিলিয়ে ৩০টি কন্সটিলেশন আছে। মিলিওয়ের কেন্দ্র অবস্থান করছে কন্সটিলেশন স্যাজিট্যারিয়াসে। এই খানেই মিল্কিওয়েকে সবচেয়ে উজ্জ্বল দেখায়। স্যাজিট্যারিয়াস থেকে এই আবাছা সাদা আলোর ধারা চলে গেছে কন্সটিলেশন অরিগা'র দিকে। কন্সটিলেশন অরিগা মিল্কিওয়ের কেন্দ্রের বিপরীত দিকে অবস্থিত। এই আলোর ধারা রাতের আকাশকে দুটি সমান গোলার্ধে বিভক্ত করে।
মিল্কিওয়ের কেন্দ্র যে তলে আছে, পৃথিবী যে তলে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে তার সাথে প্রায় ৬০ ডিগ্রী কোণ তৈরি করেছে। উত্তরে কন্সটিলেশন ক্যাসিওপিয়া থেকে শুরু করে দক্ষিণে কন্সটিলেশন ক্রাক্স পর্যন্ত বিস্তৃত। মিল্কিওয়ের উত্তর মেরু আছে কন্সটিলেশন কোমা বেরেনিসেস আর দক্ষিণ মেরু কন্সটিলেশন স্ক্লাপ্টরিসের দিকে। এই কারণে বছরের বিভিন্ন সময়ে মিল্কিওয়েকে আকাশের বিভিন্ন উচ্চতায় দেখা যায়। বিশেষ করে যাদের বসবাস উত্তর ও দক্ষিণে ৬৫ অক্ষাংশের মাঝামাঝি তারা দিনে দুইবার মিল্কিওয়েকে ঠিক মাথার উপর পাবার কথা।
No comments