Header Ads

  • সর্বশেষ

    একটি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল যেটি কোনও গ্যালাক্সীর অন্তর্ভুক্ত নয়।

    যখন দুটি গ্যালাক্সীর সংঘর্ষ হয়, তখন তারকারাজির মাঝে সব ধরণের অরাজকতা দেখা যায়। ব্যাপারটা ঘটে মিলিয়ন বছর সময় ধরে, এবং যেদুটি গ্যালাক্সীর মাঝে সংঘর্ষ হচ্ছে তাদের সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল দুটি মিলিত হয়ে আরও বড় একটি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল তৈরি করে। এই ঘটনায় নক্ষত্র গ্যালাক্সী থেকে বেরিয়ে যেতে পারে এবং শেষে ঐ নক্ষত্র অসীম মহাকাশে কোন গ্যালাক্সী ছাড়াই একা একা চলতে থাকে। এই ধরণের নক্ষত্রকে আমরা বলি এতিম নক্ষত্র বা Rogue Star। যদি ব্যাপারটই কোনও গ্রহের সাথে ঘটে তবে তাকে বলি এতিম গ্রহ বা Rogue Planet। এতিম নক্ষত্র বা গ্রহ যেমন আছে তেমনই এতিম সুপারম্যসিভ ব্ল্যাকহোলও তো থাকতে পারে।  

    সম্প্রতি জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের একটি আন্তর্জাতিক দল একটি নতুন গবেষণার ফলাফল হিসেবে বলেছে যে সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলও মাঝে মাঝে গ্যালাক্সীর সংঘর্ষের কারণে ছিটকে বাইরে বেরিয়ে যেতে পারে। নাসার চান্দ্রা এক্স-রে অবজারভেটরি  এবং কিছু অন্য টেলিস্কোপের ডেটা থেকে বিজ্ঞানীরা এমন একটি জ্যোতিষ্কের অবস্থান নির্দিষ্ট করতে পেরেছেন যেটিকে তাঁরা বলছেন “রেনেগেড সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল এটি তার নিকটতম গ্যালাক্সী থেকে প্রতিনিয়ত দূরে সরে যাচ্ছে। এই গবেষণা পত্রটি “A Potential Recoiling SupermassiveBlack Hole, CXO J101527.2+625911 এস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এই সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলটি পৃথিবী থেকে প্রায় ৩.৯ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থান করছে এবং একটি সূর্যের চেয়ে প্রায় ১৬০ মিলিয়ন গুণ বেশী ভারী।
    দলটি কয়েক হাজার গ্যালাক্সীর মাঝে ছুটে চলেছে এমন একটি গ্যালাক্সী খুঁজতে গিয়ে এই গ্যালাক্সীটি আবিষ্কার করে। তাঁরা দ্রুত বর্ধনশীল সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলের আরও একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য উজ্জ্বল এক্স-রে নির্গমন। এই ব্যাপারটী তাঁরা ধরতে পারেন স্লোন ডিজিটাল স্কাই সারভে’র টেলিস্কোপ দিয়ে। এরপর তাঁরা হাবল স্পেস টেলিস্কোপের সাহায্য নিয়ে ঐ উজ্জ্বল এক্স-রে পর্যবেক্ষণ করেন। এ থেকেই তাঁরা নিশ্চিত হন যে জ্যোতিষ্কটি একটি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলের জোড়া বা একটি চলমান সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল। পরবর্তীতে তাঁরা  স্লোন ডিজিটাল স্কাই সার্ভে থেকে পাওয়া স্পেক্ট্রাল ডেটা সংগ্রহ করে যা থেকে বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোর পরিমাণ নির্ণয় করেন। স্লোন ডিজিটাল স্কাই সার্ভে ও হাওয়াইয়ের কেক অবজারভেটরী থেকে পর্যবেক্ষণের পর বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হন যে এই সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলের অবস্থান তার গ্যালাক্সীর কেন্দ্র থেকে বাইরের দিকে। তাঁরা আরও পর্যবেক্ষণ করেন যে সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলটির গতিবেগ তার গ্যালাক্সী থেকে আলাদা, যার অর্থ দাঁড়ায় এটি তার নিজস্ব গতিতে চলছে। নিচের ছবিটি হাবল স্পেস টেলিস্কোপ থেকে পাওয়া তথ্য থেকে তৈরি। এতে গ্যালাক্সীর কেন্দ্রের কাছাকাছি দুটি উজ্জ্বল বিন্দু দেখা যাচ্ছে। ডানদিকের যে আলোকবিন্দু (সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল) সেটি কেন্দ্র থেকে প্রায় ৩০০০ আলোকবর্ষ দূরে। এক্স-রে ও অপটিক্যাল ডেটা থেকে যা তথ্য পাওয়া গেছে তার সবই প্রমাণ করে যে ব্ল্যাকহোলটি গ্যালাক্সীর কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে গেছে। 

    এটা কেন ঘটেছে তার উত্তর দিতে গিয়ে দলটির পক্ষ থেকে বলা হয় এই ব্ল্যাকহোলটি হয়ত তৈরি হয়েছে যখন দুটি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল সংঘর্ষে পতিত হয় এবং তারা একটির সাথে আরেকটি মিশে যায়। এই সংঘর্ষের কারণে তৈরি হওয়া গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ একত্রিত হওয়া সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলটিকে গ্যালাক্সীর কেন্দ্র থেকে বাইরের দিকে ঠেলে বের করে দিয়েছে। আরেকটি উল্লেখযোগ্য ব্যাখ্যা হল গ্যলাক্সীটির কেন্দ্রে দুটি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল আছে যার একটি কোন ধরণের রেডিয়েশন নির্গমন করছেনা। যার অর্থ হচ্ছে ঐ সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলটি খুবই ধীর গতিতে বেড়ে উঠছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা এই দুটি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল নিকট অতীতে মিলিত হয়েছিল। যদিও দুটি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল মিলিত হয় তখনই যখন তাদের গ্যালাক্সী দুটি মিলিত হয়। টেলিস্কোপের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্যে দেখা যায় যে সেখানে তারা তৈরির হার অনেক বেশী। এই তথ্য কম্পিউটার সিমুলেশনে করা দুটি গ্যালাক্সীর সংঘর্ষের সময় যে তারা তৈরির হার বেড়ে যাওয়া দেখা যায় তার সাথে মিলে যায়। কিন্তু যে কোন চূড়ান্ত কারণ নিশ্চিত হবার জন্য আরও গবেষণার প্রয়োজন।    


    No comments

    Post Top Ad

    Post Bottom Ad