চাঁদে কি সত্যিই পানি আছে?
চাঁদের পৃষ্ঠে পানি তরল
অবস্থায় থাকতে পারেনা। যখন পানি সূর্যের রেডিয়েশনে উন্মুক্ত হয় তখন ফটোডিসোসিয়েশন
নামক প্রক্রিয়ায় পানি ভেঙে যায় এবং মহাকাশে হারিয়ে যায়। ১৯৬০’র দশক থেকে
বিজ্ঞানীরা বলে আসছিলেন যে গ্রহাণুর আঘাতের ফলে তৈরি ক্রেটারগুলিতে কিছু পানি জমে
থাকতে পারে। তাছাড়া অক্সিজেনের প্রাচুর্য থাকা চাঁদের পাথর ও সৌরবায়ুতে থাকা চার্জড
হাইড্রোজেনের বিক্রিয়ার ফলেও কিছু পানি চাঁদে তৈরি হতে পারে। এসব পানি তুলনামূলক
ঠাণ্ডা বা রেডিয়েশনের প্রভাব যেখানে কম যেমন মেরু অঞ্চল বা ক্রেটারের ছায়া পড়েছে
এসব জায়গাতে খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। কম্পিউটার সিমুলেশন অনুসারে চাঁদে ১৪,০০০
বর্গকিলোমিটার পানি থাকার কথা শুধুমাত্র চন্দ্রপৃষ্ঠে যেসব স্থানে সরাসরি সূর্যের
আলো পড়তে পারে সেসব স্থানে। চাঁদের পানির মোট পরিমানের উপর নির্ভর করছে চাঁদে
মানুষ বসতি স্থাপনের সম্ভবনা কতখানি এবং সম্ভবনা থাকলে তাতে কি পরিমাণ ব্যয় হবে।
ধারণা করা হয় চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে যেখানে যেখানে পানির মজুদ থাকতে পারে। |
দীর্ঘদিন ধরেই চাঁদে পানি
আছে এমন প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছিল। ১৯৯৪ সালে ক্লিমেন্টাইন স্পেসক্র্যাফটের
বাইস্ট্যাটিক রেডার এক্সপেরিমেন্টে চন্দ্রপৃষ্ঠের কম গভীরতায় কিছু জমে থাকা পানির
বরফের উপস্থিতি শনাক্ত হয়। পড়ে এরেসিবো’র রেডার এক্সপেরিমেন্টে বলা হয় এগুলো নতুন
তৈরি হওয়া ইম্প্যাক্ট ক্রেটার থেকে বেরিয়ে আসা পাথরও হতে পারে। ১৯৯৮ সালে লুনার
প্রস্পেক্টর স্পেসক্র্যাফটের নিউট্রন স্পেক্ট্রমিটার দেখায় যে চাঁদের মেরু অঞ্চলের
দিকের মাটির প্রথম এক মিটারের মাঝে হাইড্রোজেনের ঘনত্ব তুলনামূলক বেশী। এপোলো ১৫
মিশনে চাঁদ থেকে যে ভলক্যানিক লাভা খন্ড আনা হয় তাতে অল্প পরিমানে পানির অস্তিত্ব
পাওয়া যায়।
২০০৮ সালে ভারতের চন্দ্রযান
১ এ থাকা মুন মিনারেলজি ম্যাপার দিয়ে চাঁদের মাটিতে পানি থাকার ব্যাপ্রটি
সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত করা হয়। মুন মিনারেলজি ম্যাপারের স্পেক্ট্রোমিটারের
পর্যবেক্ষণে কিছু এবসরপশন লাইন দেখা যায় যা শুধুমাত্র হাইড্রোক্সিল আয়নেরই হতে
পারে। এথেকে বোঝা যায় যে চাঁদের মাটিতে বড় আকারে পানির মজুদ আছে।
স্পেক্ট্রোস্কোপের পর্যবেক্ষণ অনুসারে ঘনমাত্রা দেখানো হয় কোথাও কোথাও ১০০০ পিপিএম
পর্যন্ত। ( এক পিপিএম হল দশ লক্ষ ভাগের এক ভাগ। প্রতি কেজিতে ১ মিলিগ্রাম)। ২০০৯
সালে LCROSS থেকে প্রায় ২৩০০ কেজির একটি বস্তু দিয়ে
চাঁদের মেরুতে অবস্থিত চিরস্থায়ীভাবে ছায়ায় থাকা একটি ইম্প্যাক্ট ক্রেটারের সাথে
সংঘর্ষ করানো হয়। এর ফলে যে পরিমাণ পদার্থ ছড়িয়ে পড়ে তাতে কমপক্ষে ১০০ কেজি পানি
থাকার প্রমাণ মেলে। LCROSS’র আরেকটি পরীক্ষায় প্রায় ১৬৭ কেজি
পানি ছড়িয়ে পড়ার ডেটা পাওয়া যায়।
২০১১ সালে একটি পাথরের
মাঝে ফাঁকা জায়গাতে ৬১৫-১৪১০ পিপিএম পানি পাওয়া যায়। স্যম্পলটি ছিল ১৯৭২ সালে
এপোলো ১৭ মিশনের সময়ে পৃথিবীতে আনা হয়। এটি ছিল বিখ্যাত “অরেঞ্জ গ্লাস সয়েল” যাতে
উচ্চ পরিমানে টাইটানিয়াম আছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা এই পাথর খন্ডটি ৩.৭ বিলিয়ন আগে
চাঁদে একটি আগ্লেয়গিরির উদ্গীরনের ফলে তৈরি হয়। এই ঘনমাত্রা পৃথিবীর ম্যান্টলের
উপরের দিকে থাকা পানির পরিমাণের সমান।
No comments