জাপানী বিজ্ঞানীদের মতে মঙ্গল তৈরি হয়েছে এস্টোরয়েড বেল্টে।
বর্তমানে পৃথিবী ও মঙ্গল খুবই আলাদা গ্রহ। কিন্তু
দুটি গ্রহই সৌরজগতের খুবই ছোট, পাথুরে গ্রহ। নতুন প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে
পৃথিবী ও মঙ্গলের উৎপত্তি আলাদা উৎস থেকে। টোকিও ইন্সটিউট অব টেকনোলজীর গবেষকেরা
দাবী করেছেন যে মঙ্গল গ্রহ যা যা দিয়ে তৈরি তা নিয়ে বিশ্লেষণের পর তাঁরা বুঝতে
পেরেছেন যে মঙ্গলের উৎপত্তি এস্টোরয়েড বেল্টে। সেখানে তৈরি হবার পর এটি সৌরজগতের
ভেতরের দিকে এসেছে।
গবেষক দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন গ্রহ বিজ্ঞানী র্যামন
ব্রেসার। পৃথিবী থেকে মঙ্গলে কিছু মৌলের আলাদা আইসোটোপ আছে, বিশেষ করে ক্রোমিয়াম,
টাইটানিয়াম ও অক্সিজেনের, এই তথ্যের ভিত্তিতেই এই গবেষণা শুরু হয়েছিল। এটা মঙ্গল
গ্রহ যে সৌরজগতের বাইরের দিকে উৎপন্ন হয়েছে তা নির্দেশ করেছে। এখন পর্যন্ত আমরা
যতটুকু জানি তা হল সৌরজগৎ থালার মত গ্যাস ও ধুলির চাকতি থেকে তৈরি হয়েছে। নতুন
সূর্য তার গ্র্যাভিটি দিয়ে পরবর্তীতে এই চাকতিকে সংকুচিত করে। আস্তে আস্তে গ্রহ,
গ্রহাণু বা ধুমকেতু তৈরি হয়েছে। বিজ্ঞানীদের মতে পাথুরে গ্রহ গুলির উৎপত্তি
সৌরজগতের ভেতরের দিকে। কারণ এই সব গ্রহগুলির বায়ুমন্ডলের গ্যাস সৌর বাতাসের কারণে
অনেকটা ক্ষয়ে গেছে বা নিশ্চিহ্ন হয়েছে। গ্যাস জায়ান্ট গ্রহ সাধারণত সৌরজগতের
বাইরের দিকে তৈরি হয়। কিভাবে একটি গ্রহ তার নক্ষত্র থেকে দূরে তৈরি হয়ে ধীরে ধীরে
নক্ষত্রের কাছাকাছি চলে আসে তা এখনও বোধগম্য নয়, কিন্তু অসংখ্য এক্সোপ্ল্যানেটের
উদাহরণ দেখে বোঝা যায় যে এটা খুবই সম্ভব। অন্যান্য সৌরজগতে অসংখ্য “হট জুপিটার”
আছে। হট জুপিটার হল হল সেসব গ্যাস জায়ান্ট গ্রহ যেগুলি তার নক্ষত্রের খুব কাছাকাছি
কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করছে।
মঙ্গল গ্রহ সৌরজগতের বাইরের দিকে তৈরি হয়েছে – এটা
প্রমাণ করতে প্রথমে আমলে আনতে হবে এটা কিভাবে তৈরি হয়েছে। তাঁরা পৃথিবী, পৃথিবীর
চাঁদ ও এস্টোরয়েড ভেস্টা’র সাথে মঙ্গলের তুলনা করেন। ফলাফলে দেখা যায় পৃথিবী ও
পৃথিবীর চাঁদের চেয়ে এস্টোরয়েড ভেস্টা’র সাথে
মঙ্গলের গঠনগত মিল বেশী। এস্টোরয়েড ভেস্টা’র অবস্থান মঙ্গল ও বৃহস্পতির মধ্যকার
এস্টোরয়েড বেল্টে। মঙ্গল যে সৌরজগতের বাইরে তৈরি হয়ে ভেতরের দিকে এসেছিল সেটা
প্রমান করতে এটুকুই যথেষ্ট নয়। যদি মঙ্গল এস্টোরয়েড বেল্টে তৈরি হয়ে থাকে তবে
মঙ্গলের গায়ে তার চেয়ে ছোট অসংখ্য বস্তুর সাথে সংঘর্ষ হবার কথা। কম্পিউটার
সিমুলেশন বলে মঙ্গল তার বর্তমান আকারে এসেছে সৌরজগত সৃষ্টির পাঁচ থেকে দশ মিলিয়ন
বছরের ভেতরেই। এস্টোরয়েডের সাথে সংঘর্ষের কারণে মঙ্গলের হয়ত শক্তির অনেক ক্ষয়
হয়েছে এবং সিমুলেশন অনুসারে প্রায় ১০০ মিলিয়ন বছরের ভেতরেই মঙ্গলের কক্ষপথ সূর্যের
কাছাকাছি হয়ে যায়। এতে সূর্যের তাপ যত বাড়তে থাকে, মঙ্গল তার বায়ুমন্ডল হারাতে
থাকে সেই সাথে মঙ্গলের মাটি থেকে পানি হারিয়ে যেতে থাকে।
এই গবেষণা পরবর্তী ধাপ হল আরও সিমুলেশন চালানো
যাতে এখন যে মতবাদ দেয়া হচ্ছে তার অনুকূলে আরও বেশ কিছু ধারণা পাওয়া যায়। যদি
বিজ্ঞানীরা মঙ্গলের মাইগ্রেশনের ব্যাপারটিকে একটি সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে
পারেন তবে অন্যান্য পাথুরে গ্রহগুলি কিভাবে তৈরি হয়েছে সেসব প্রশ্নের উত্তর হয়ত
পাওয়া যাবে।
Nice Bro
ReplyDelete