কি আছে বৃহস্পতির রঙ্গিন এসব মেঘের নীচে?
ধারণা করা হয় বৃহস্পতির কেন্দ্র পাথর ও বরফের
তৈরি। এর উপরে আছে একটি তরল ধাতব হাইড্রোজেনের স্তর। সাথে কিছু হিলিয়ামও হয়ত আছে,
তার উপরে যে স্তর আছে তার বেশীরভাগই আণবিক হাইড্রোজেন। এটা একটি সাধারণ অনুমান।
ঠিক কেন্দ্রটা পাথুরে হলেও প্রচন্ড তাপ ও চাপে সেখানকার বস্তুগুলি কিরকম আচরণ করতে
পারে তা এখনও অজানা। ১৯৯৭ সালে কিছু গ্র্যাভিটেশনাল মেজারমেন্টের মাধ্যমে এই
পাথুরে কেন্দ্রের ধারণা পাওয়া যায়। বৃহস্পতির কেন্দ্র যে পৃথিবী থেকে প্রায় ১২ থেকে
৪৫ গুণ ভারী তার প্রমাণ এসব পরীক্ষা থেকেই আসে, যা সম্পূর্ণ বৃহস্পতির ভরের শতকরা ৪
থেকে ১৪ ভাগ। প্ল্যানেটারী ফরমেশনের যে তত্ব আছে তা থেকে জানা যায় যে বৃহস্পতি যে
পরিমাণ হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাস নিজের সংগ্রহে রেখেছে তা ধরে রাখার জন্য একটি
যথেষ্ট ভারী পাথুরে বা বরফের কেন্দ্র থাকতে হবে। তাছাড়া প্রোটোসোলার নেবুলা থেকে
এই পরিমাণ পদার্থ সংগ্রহ করতে ও একটি কঠিন কেন্দ্র অপরিহার্য। ধরা হয় এটি আছে এবং
বৃহস্পতির ভেতরের উত্তপ্ত তরল ধাতব হাইড্রোজেনের কারণে এটি সংকুচিত হয়েছে বলে
বিজ্ঞানীদের ধারণা।
কেন্দ্রের ঠিক বাইরের স্তর ঘন ধাতব হাইড্রোজেনের তৈরি। এই স্তর
এতটাই বিস্তৃত যে কেন্দ্রের বাইরে থেকে বৃহস্পতির সম্পূর্ণ ব্যাসার্ধের শতকরা
প্রায় ৭৮ ভাগ পর্যন্ত শুধু এই ধরণের হাইড্রোজেন পাওয়া যাবে। সাথে কিছু হিলিয়ামও
আছে। এই অংশে হিলিয়াম ও নিয়নের বৃষ্টি হয়। এ কারনে বৃহস্পতির একদম বাইরের স্তরে
এইসব মৌলিক পদার্থের পরিমাণ খুব কম বলে গবেষণায় জানা যায়।
ধাতব হাইড্রোজেনের বাইরের স্তরটা হাইড্রোজেনের একটি স্বচ্ছ
স্তর। এই গভীরতায় যে তাপ ও চাপ থাকে তা হাইড্রোজেনের ক্রিটিক্যাল তাপ ও চাপের চেয়ে
বেশী। হাইড্রোজেনের ক্রিটিক্যাল চাপ হল ১.২৮৫৮ মেগাপ্যাসকেল আর ক্রিটিক্যাল
তাপমাত্রা হল ৩২.৯৩৮ কেলভিন। এই অবস্থায় তরল ও কঠিন পদার্থ আলাদা করা যায়না। হাইড্রোজেন
এই অবস্থায় একটি সুপারক্রিটিক্যাল প্রবাহ হিসেবে থাকে। এই অবস্থা থাকে বৃহস্পতির
পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০০০ কিলোমিটার গভীর থেকে। এর উপরে হাইড্রোজেন সাধারণ গ্যাস হিসেবেই
থাকে। তার নীচের হাইড্রোজেন কে তরল বলাটা ভুল হবেনা।
বৃহস্পতির পৃষ্ঠ থেকে যত গভীরে যাওয়া যায়, তাপমাত্রার ও চাপ ধীরে ধীরে বাড়তে
থাকে। এক্ষেত্রে কেলভিন হেল্মহোল্টজ মেকানিজম অনুসরণ হয়। যেমন বৃহস্পতির যে
গভীরতায় বায়ুচাপ বা চাপ ১ মেগাপ্যাসকেল সেখানে তাপমাত্রা প্রায় ৬৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
যেখানে তরল, কঠিন ও গ্যাসীয় অবস্থার ফারাক বোঝা যায়না, অর্থাৎ হাইড্রোজেন ধাতব
হাইড্রোজেনে পরিণত হয় সেখানে চাপ প্রায় ২০০ গিগাপ্যাসকেল আর তাপমাত্রা ৯৭০০ ডিগ্রী
সেলসিয়াস। আর যেখান থেকে বৃহস্পতির কেন্দ্রের শুরু সেখানে চাপ ৩০০০ থেকে ৪৫০০ গিগাপ্যাসকেল,
তাপমাত্রা প্রায় ৩৫৭০০ ডিগ্রী সেলসয়াস।
No comments