গ্যালিয়াম নাইট্রাইড প্রসেসর- মহাকাশ অভিযানের ভবিষ্যত প্রযুক্তি।
যৌগটির নাম গ্যালিয়াম নাইট্রাইড।
পাওয়ার ইলেক্ট্রনিক্সের পরবর্তী সেমিকন্ডাক্টর হিসেবে এর আবির্ভাব হতে যাচ্ছে। মহাকাশ
গবেষণার জন্যও এটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। ইউজি ঝাও, এরিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির
ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং একজন গবেষক। তিনি এই গ্যালিয়াম নাইট্রাইড
দিয়ে সেমিকন্ডাক্টর বানানোর পরিকল্পনা করেছেন। এই সেমিকন্ডাক্টর ভবিষ্যৎ মহাকাশ অভিযানের ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটিয়ে দিতে
পারে।
গ্যালিয়াম নাইট্রাইড মূলতঃ
লাইট এমিটিং ডায়োড বা LED তে ব্যাবহার করা হয়। সিলিকনের চেয়ে এই যৌগের ইলেকট্রন ট্রান্সফারের
সক্ষমতা প্রায় ১০০০ গুণ বেশী। এই যৌগটি গতিতে, তাপমাত্রার স্থিতিতে, বিদ্যুৎ পরিবহণে
সিলিকন ভিত্তিক সেমিকন্ডাক্টরকে সহজেই হারিয়ে দিতে পারবে। ইউজি ঝাও এই পদার্থটি ব্যবহার
করে স্পেসে ব্যবহারের জন্য এক ধরণের হাই টেম্পারেচার মাইক্রোপ্রসেসর তৈরি করতে চান।
তার এই প্রজেক্টের জন্য তিনি নাসা’র হট অপারেটিং টেম্পেরেচার টেকনোলজি প্রোগ্রামের
আওতায় তিন বছরের জন্য $৭৫০,০০০ এর ফান্ড পেয়েছেন। ঝাও এর মতে “এই পদার্থটি ইলেক্ট্রনিক্স
সিস্টেমকে একটি নতুন মাত্রা দেবে। সিলিকন ভিত্তিক সেমিকন্ডাক্টরের চেয়ে এটির কার্যক্ষমতা
অনেক বেশী। কারণ এর আকার ও ভর সিলিকন ভিত্তিক সেমিকন্ডাক্টরের চেয়ে অনেক কম, সেই সাথে
উচ্চ তাপমাত্রা সহ্য করার ক্ষমতাও অনেক বেশী। এসব কারণে এটির ব্যবহার মহাকাশে অভিযানের
ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নতুন মাত্রা এনে দেবে।
ক্রেডিটঃ এরিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটি |
ঝাও আরও বলেন সিলিকনের আভ্যন্তরীন
ধর্মের কারনে এর সাহায্যে তৈরি ইন্ট্রিগেটেড সার্কিট গুলি ৩০০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের বেশী
তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে না। গ্যালিয়াম নাইট্রাইড উচ্চতাপমাত্রায় সক্রিয় এবং নষ্ট
হয়না। তাই উচ্চ তাপমাত্রায় এবং তেজস্ক্রিয় পরিবেশে এটাকে নিয়ন্ত্রন করা সহজ হবে। তাছাড়া
গ্যালিয়াম নাইট্রাইড হাই ইলেকট্রন মবিলিটি ট্রান্সিস্টর টেকনোলজি বিভিন্ন ধরণের গ্যালিয়াম
নাইট্রাইড ভিত্তিক ডিভাইসকে হাই ফ্রিকুয়েন্সি রেসপন্স দেখায় মনোলিথিক ইন্টিগ্রেশনের
মাধ্যমে। এই প্রজেক্টে সফলতা পাওয়া খুব একটা সহজ হবে না এবং যথেষ্ট পরিমাণ ট্রায়াল
এন্ড এরর থাকবে।
ঝাও বলেন “এই প্রজেক্টে প্রথান সমস্যা
হতে পারে তিনটি দিক থেকেঃ ডিভাইস, সিস্টেম এবং নির্ভরতা বা রিলায়েবিলিটি। ডিভাইস লেভেলে
তাপ সহনীয় গ্যালিয়াম নাইট্রাইড এনহান্সড/ডিপ্লেশন-মোড এন-টাইপ এবং পি-টাইপ মেটাল-অক্সাইড-সেমিকন্ডাক্টর
তৈরি করতে হবে। এটার জন্য বিশেষ গ্রোথ টেকনিক, স্ট্রাকচার ডিজাইন এবং সংযোগ থাকতে হবে।
সিস্টেম লেভেলে গ্যালিয়াম নাইট্রাইড ট্রান্সিস্টরের সাহায্যে NOR গেট ও NAND গেটের
মত IC বিল্ডিং ব্লক থাকতে হবে। সিলিকন চিপের চেয়ে গ্যালিয়াম নাইট্রাইড চিপের ডিজাইন
ও ফেব্রিকেশন যথেষ্ট ভিন্ন ধরণের”। এই প্রজেক্টে ঝাও এক ধরণের গ্যালিয়াম নাইট্রাইড
বেসড মাইক্রোপ্রসেসর তৈরি করতে চান যেটি অন্ততঃ ৫০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রাতেও কাজ
করতে পারে। আর এই কাজটি করতে গেলে গ্যালিয়াম নাইট্রাইড ডিভাইসের ওপর উচ্চ তাপমাত্রার
কি কি প্রভাব আছে তা নিয়ে যথেষ্ট গবেষণা দরকার। এসবের মাঝে আছে উচ্চ তাপামত্রায় কি
কি ডিফেক্ট থাকতে পারে, ইলেকট্রন পরিবহনের উপর উচ্চ তাপমাত্রার প্রভাব, তাপ সহ্য করার
ক্ষমতা, সেই সাথে ডিভাইসটি উচ্চ তাপমাত্রায় তার পারফর্মেন্স ধরে রাখতে পারে কিনা সেটাও
খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ঝাও আরও বলেন “ যেসব মিশনে
স্পেসক্রাফটকে উচ্চতাপমাত্রার পরিবেশে যাওয়া লাগবে সেখানে এই ধরণের ডিভাইস খুবই উপকারে
আসবে। যেমন শুক্রের মাটিতে, বুধের মাটিতে বা গ্যাস জায়ান্ট গ্রহগুলির ভেতরে যেসব জায়াগাতে
তাপমাত্রা অনেক বেশী থাকে। “ গ্যালিয়াম নাইট্রাইড বেসড এই মাইক্রোপ্রসেসর তৈরির প্রজেক্ট
খুবই চ্যালেঞ্জিং এবং দীর্ঘ হবে বলে ঝাও এর ধারণা। নাসা কবে নাগাদ এসব মাইক্রোপ্রসেসর
বসিয়ে মিশন পরিচালনা করতে পারবে তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে ঝাও আশাবাদী
যে আগামী বছর দশেকের ভেতর তিনি কোনও না কোন ভাল খবর দিতে পারবেন।
No comments