Header Ads

  • সর্বশেষ

    তত্বগ্রহ প্ল্যানেট এক্স।


    ক্যালটেক রিসার্চার রা আমাদের সৌরজগতের গভীরে একটি গ্রহ থাকার গাণিতিক প্রমাণ পান। গ্রহটির নামকরণ করা হয় “প্ল্যানেট এক্স” বলে। গাণিতিক হিসাবে এই গ্রহটি আকারে নেপচুনের চেয়েও বড়। এর কক্ষপথ প্লুটো থেকেও দূরে এবং খুবই উপবৃত্তাকার, ইংরেজীতে যাকে বলা হচ্ছে “Highly Eliptic.” বিজ্ঞানীরা এই প্রস্তাবিত গ্রহটির আরও একটি নাম দিয়েছেন “প্ল্যানেট নাইন।“ ধারণা করা হয় এর ভর পৃথিবীর চেয়ে কমপক্ষে ১০ গুন এবং এর কক্ষপথ নেপচুন থেকে সূর্যের গড় দূরত্বের অন্ততঃ প্রায় ২০ গুন বেশী। প্ল্যানেট নাইনের এক বছর হতে পৃথিবীর প্রায় ১০,০০০ থেকে ২০,০০০ বছরের মাঝামাঝি সময় লাগে।

    এই ঘোষণার মানে এই ছিলনা যে সৌরজগতে আরও একটি নতুন গ্রহ আবিষ্কার হয়েছে। এখন পর্যন্ত এই গ্রহের অস্তিত্ব শুধুমাত্র তাত্ত্বিকভাবেই আছে এবং সরাসরি এই গ্রহকে দেখা যাওয়া সম্ভব হয় নি। এই গাণিতিক হিসাব কাইপার বেল্টে অবস্থানকারী কিছু জ্যোতিষ্কের কক্ষপথের অনন্য কক্ষপথ থাকাটা ব্যাখ্যা করে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এখনও এই গ্রহটি খুঁজছেন।

    ২০১৫ সালের জানুয়ারী মাসে ক্যাল্টেক জ্যোতির্বিদ কন্সট্যান্টিন ব্যাটিজিন এবং মাইক ব্রাউন সম্মিলিতভাবে করা তাদের নতুন গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেন যা সৌরজগতের বাইরের দিকে অস্বাভাবিকভাবে উপবৃত্তাকার কক্ষপথের একটি বিশাল গ্রহের অস্তিত্বের ভবিষ্যদ্বাণী দেন। এই ভবিষ্যদ্বাণীর ভিত্তি ছিল গাণিতিক যুক্তি ও কম্পিউটার সিমুলেশন। এই ভবিষ্যদ্বাণীর পর কাইপার বেল্ট এলাকায় অন্ততঃ পাঁচটি নতুন জ্যোতিষ্কের আবিষ্কার হয়।

    নাসার প্ল্যানেটারী সায়েন্স ডিভিশনের পরিচালক জিম গ্রীন বলেন “প্ল্যানেটারী সায়েন্টিস্ট হিসেবে একটি নতুন গ্রহের ভবিষ্যদ্বাণী আমাদের জন্য খুবই উত্তেজনাকর ব্যাপার। কিন্তু তার মানে এই না যে গ্রহটি আবিষ্কার হয়ে গেছে। যে অবস্থানের কথা বলা হয়েছে সেখানে আদৌ কোন গ্রহ আছে কিনা তা অব্জারভেশন ছাড়া বলা অসম্ভব।“

    ব্যাটিজিন ও ব্রাউন এই সম্ভাব্য গ্রহটির নাম দেন “প্ল্যানেট নাইন।“ কিন্তু কোন জ্যোতিষ্কের নাম কি হবে তা দেবার অধিকার থাকে শুধুমাত্র যিনি জ্যোতিষ্কটি আবিষ্কার করেছেন তাঁর। আবিষ্কার হবার আগে এই সম্ভাব্য গ্রহটিকে প্ল্যানেট এক্স বলে সম্বোধন করা হচ্ছে। এই সম্ভাব্য গ্রহটি আবিষ্কার হলে সেটির নাম ইন্টারন্যাশনাল এস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন থেকে তা অনুমোদিত হতে হবে। গ্রহদের নামকরণ করা হয় রোমান দেবতাদের নামানুসারে।

    জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা প্ল্যানেট এক্সের অবস্থানের ব্যাপারে আশাবাদী কারণ একই গাণিতিক হিসাব ব্যবহার করে কাইপার বেল্ট এলাকাতে কিছু বামন গ্রহ আবিষ্কার হয়েছে। আবিষ্কৃত এইসব বামন গ্রহের গতিপথ স্বাভাবিক হিসাবনিকাশের সাথে মেলেনি। বিজ্ঞানীদের ধারণা এই অমিলের পেছনের কারণ হল প্ল্যানেট এক্সের গ্র্যাভিটি।

    ব্যাটিজেন ও ব্রাউন সহ ক্যালটেকের অন্যান্য জ্যোতির্বিদেরা গ্রহটি খুঁজে পেতে পৃথিবীর অন্যতম শক্তিশালী সব টেলিস্কোপ ব্যবহার করছেন। যে অবস্থানের কথা ভবিষ্যদ্বাণীতে বলা হয়েছে সেই দূরত্বের যেকোনো বস্তু খুবই অনুজ্বল দেখাবে, যার কারণে তা সনাক্ত করাটা খুবই দুরহ হবে। ব্রাউন বলেন “আমি যদি গ্রহটি নিজে আবিষ্কার করতে পারি তবে যতটা খুশি হব, অন্যকেউ আবিষ্কার করলেও ততটাই খুশি হব। যাতে অন্যরাও গ্রহটি খুঁজে পায় সেজন্যই তো গবেষণাটি প্রকাশ করা হয়েছে।আমি আশা করি গবেষণাটি অন্যরা পড়ে গ্রহটি আবিষ্কার করতে অনুপ্রাণিত হবে এবং আবিষ্কার করতে সমর্থ হবে।“

    গ্রীন বলেন “যখন এরকম অসাধারণ ধারণা আমরা পাই তখন আমরা সবসময় কার্ল সেগানের জটিল চিন্তার নিয়মগুলি ব্যবহার করি। কার্ল সেগান প্রথমে ফ্যাক্ট টির স্বপক্ষে সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করতেন, তারপর সেগুলো দিয়ে ফ্যাক্ট টি নিশ্চিত করতেন, তারপর ওই ব্যাপারটির অন্য কোনও ব্যাখ্যা দাঁড় করাতেন। সবশেষে তিনি সবাইকে বৈজ্ঞানিক বিতর্কের আমন্ত্রন জানাতেন। যদি প্ল্যানেট এক্স সেখানে থাকে তবে আমরা সবাই মিলে সেটা আবিষ্কার করব। যতদিন না পারব, ততদিন প্রাপ্ত তথ্যগুলি দিয়ে না খুঁজে পাবার কারণ ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করব।“

    No comments

    Post Top Ad

    Post Bottom Ad