"যখন মিথ্যা বলা হয়, মস্তিষ্ক আরও বড় মিথ্যার জন্য পরিবর্তিত হয়।" গবেষণার ফলাফল।
ছোট মিথ্যা কথা মানুষের মস্তিষ্ককে আরও বড় মিথ্যা ও অসততার জন্য পরিবর্তন করে। গেসিং গেম খেলার সময় একটি ব্রেইন স্ক্যানে দেখা যায় যে প্রথম মিথ্যা বলার সময় আবেগের কিছু পরিবর্তন থাকলেও পরে আস্তে আস্তে তা কমে আসে। প্রথম দিকে তারা ছোট ছোট মিথ্যা বলে।পরে আরও সুবিধা নেবার জন্য বেশী মিথ্যা কথা বলে ধোকা দেয়।
গবেষকরা যারা এই গবেষণাটি নেচার নিউরোসাইন্স জার্নালে প্রকাশ করেন তারা সবাইকে সত্য কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। কারণ মিথ্যার ব্যাপক ব্যবহারের অসংখ্য খারাপ প্রতিক্রিয়া আছে। ইউনিভার্সিটি কলেজ অব লন্ডনের ড. টালী শ্যারট বলেছেন "ব্যাক্তি জীবনে ছোট অসততা সময়ের সাথে সাথে বাজে আকার ধারন করে। এটা খুবই সত্যি কথা। ট্যাক্স ফাঁকি, বিশ্বাসঘাতকতা, খেলায় ডোপিং করা, বৈজ্ঞানিক কোন উপাত্ত নিজ ইচ্ছামত পরিবর্তন করা বা টাকার জালিয়াতি সবই মিথ্যার ভেতর পড়ে। ধোঁকাবাজেরা নিজেদের ছোট কুকর্মগুলি থেকে শিক্ষা নিয়ে আরও বড় অপরাধের দিকে যায়। এটা ইমোশনাল এডাপ্টেশনের মত। ধরুন কেউ একজন বাজেভাবে আঘাত পাওয়া মৃতদেহের ছবি দেখে প্রথমবার অনেক শক পায়। কিন্তু একই ছবি বার বার দেখালে সে অভ্যস্ত হয়ে যায়। তার আবেগের কোন পরিবর্তন আসেনা"। ড. শ্যারট আরও বলেন "এর পেছনে আরও অনেক কারণ থাকতে পারে। তার মাঝে ব্রেইন এর একটা প্রসেস আছে।"
৮০ জন ভলান্টিয়ারের উপর এই গবেষণায় কাজ হয়েছে। তাদের নিয়ে একটি খেলার আয়োজন করা হয় যেটায় তাদের সৎ থাকতে হবে। খেলায় তারা বলবে তার পার্টনারের কছে কতটি পয়সা আছে। কাউকে কাউকে বলা হত তারা যদি সঠিকের কাছকাছি উত্তর দিতে পারে তবে আর্থিকভাবে লাভবান হবে। বাকীদের বলা হত যে সঙ্গী যদি ভুল উত্তর দেয় তবে সে লভবান হবে। এই পরীক্ষায় দেখা যায় প্রথম দিকে তারা কম মিথ্যা বলছে, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে মিথ্যার মাত্রা বাড়ছে। এই সময়টায় এম আর আই স্ক্যানারে দেখা যায় যে তাদের আবেগের সাথে ব্রেইনের একটা অংশ জড়িত। অংশটি হল "অ্যামিগডালা"। প্রথম দিকে এই অংশের প্রতিক্রিয়া বেশী ছিল। কিন্তু পরে যখন প্রতিযোগীরা বেশী অসততা দেখাচ্ছিল তখন এই অংশের প্রতিক্রিয়া ছিল খুবই কম।
"যখন আমরা ব্যাক্তিগত স্বার্থের জন্য মিথ্যা বলি তখন অ্যামিগডালায় ঋণাত্মক প্রভাব হয়।" বলেন ড. শ্যারট। "এই প্রভাব মিথ্যার সাথে সাথে কমতে থাকে। যত বড় মিথ্যা, তত কম ঋণাত্মক প্রভাব। এটা এমন একটা পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে যখন ছোট ছোট অসততাগুলি বড় অপরাধের অনুপ্রেরণা যোগাবে।তার সহকর্মী ড. নেইল গ্যারেট বলেন এই জিনিসটি অন্য স্বভাবের উপরও প্রভাব ফেলতে পারে যেমন সহিংসতা। আমরা এই পরীক্ষাটি করেছি অসততা পরীক্ষা করার জন্য, একই পরীক্ষা ঝুঁকি নেবার ইচ্ছা ও সহিংস স্বভাবের পরিমাপ করার জন্যও করা যেতে পারে।"
গবেষকরা এই পরীক্ষাকে সতর্কতা হিসেবে নিতে বলেছেন।
No comments