Header Ads

  • সর্বশেষ

    স্পুটনিক-১। স্যাটেলাইট কন্সট্রাকশন প্রজেক্ট।

    ১৭ই ডিসেম্বর ১৯৫৪ সালে সোভিয়েত চীফ রকেট সাইনটিস্ট সারজেই করলেভ দিমিত্রি উস্তিনভের সাথে দেখা করেন। দিমিত্রি উস্তিনভ পরবর্তীতে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হন। সারজেই করলেভ সেই মিটিঙয়ে একটি কৃত্তিম উপগ্রহ তৈরির পরিকল্পনা ব্যাক্ত করেন। করলেভ মিখাইল তিখনরাভভের করা একটি সারাংশ উপস্থাপন করেন। মিখাইল তিখনরাভভ ছিলেন সোভিয়েত স্পেসক্র্যাফট তৈরির পথপ্রদর্শক। তিখনরাভভ তাঁর রিপোর্টে একটি অরবিটাল স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের ব্যাপারে গুরুত্ব দেন। 
    স্পুত্নিক-১ এর একটি রেপ্লিকা।
    ২৯শে জুলাই ১৯৫৫, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোয়াইট ডি আইসেনহাওয়ার তাঁর প্রেস সেক্রেটারীর মাধ্যমে ঐ বছরে একটি কৃত্তিম উপগ্রহ পাঠানোর ঘোষণা দেন। তার এক সপ্তাহ পর সোভিয়েত ইউনিয়নের পলিটব্যুরো অব দ্য কমিউনিস্ট পার্টি কৃত্তিম উপগ্রহ পাঠানোর প্রস্তাব অনুমোদন দেয়। একই বছর ৩০শে অগাস্ট আর-৭ রকেট লঞ্চ এর স্টেট কমিশনের প্রধান ভ্যাসিলি রিয়াবিকভ করলেভের সাথে একটি মিটিঙয়ে চাঁদে যাবার একটি ট্র্যাজেক্টরি দেখান। তারা স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য তিন ধাপের আর-৭ রকেট তৈরির সিদ্ধান্ত নেন।
    ৩০শে জানুয়ারী সোভিয়েত মন্ত্রী পরিষদ পৃথিবী প্রদক্ষিণ করা স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য ব্যবহারিক কাজ শুরু করার অনুমোদন দেয়।স্যাটেলাইটের প্রাথমিক নাম ছিল অবজেক্ট ডি। ১৯৫৭-৫৮ সালের ভেতর এটি শেষ করার পরিকল্পনা ছিল। অবজেক্ট ডি'র ভর ছিল প্রায় ১০০০ থেকে ১৪০০ কেজি এবং ২০০-৩০০ কেজি সাইন্টিফিক যন্ত্রপাতি বহনে সক্ষম ছিল। ১৯৫৭ সালে অবজেক্ট ডি'র উৎক্ষেপণের সূচি নির্ধারণ করা হয়। 
    স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের কাজ নিচের মত করে ভাগ করা হয়ঃ 
    ১। সোভিয়েত ইউনিয়ন একাডেমি অব সাইন্সেস সাধারণ সাইন্টিফিক নির্দেশনা দেবে ও গবেষণা যন্ত্রপাতি সরবরাহ করবে। 
    ২। প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয় এবং তাঁর প্রাথমিক ডিজাইন ব্যুরো ওকেবি-১ মূল স্যাটেলাইট তৈরি করবে।
    ৩।রেডিওটেকনিক্যাল মন্ত্রনালয় কন্ট্রোন সিস্টেম, রেডিওটেকনিক্যাল যন্ত্রপাতি ও টেলিমেট্রি সিস্টেম ডেভেলপ করবে। 
    ৪। জাহাজ তৈরির মন্ত্রনালয় গাইরোস্কোপের যন্ত্রপাতি তৈরি করবে।
    ৫। যন্ত্রপ্রকৌশল মন্ত্রনালয় গ্রাউন্ড লঞ্চিং, রিফুয়েলিং ও যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে।
    ৬। প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয় উৎক্ষেপণ পরিচালনা করবে।
    জুলাই ১৯৫৬'র ভেতর প্রাথমিক নকশার কাজ শেষ হয়ে যায়। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের আগে আগেই তাতে সাইন্টিফিক যন্ত্রপাতি বসানো হবে। এসব যন্ত্রপাতি দিয়ে বায়ুমন্ডলের ঘনত্ব ও তাতে কোন আয়ন কি কি পরিমানে আছে তা বের করা হবে। সেই সাথে সৌর বাতাস, চৌম্বকক্ষেত্র ও কসমিক রশ্মি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা যাবে। এসব তথ্য পরবর্তী স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে কাজে লাগবে। একটি গ্রাউন্ড স্টেশন তৈরি করা হয় যেখানে স্যাটেলাইট থেকে পাঠানো ডেটা সংগ্রহ করা হবে। সেই সাথে স্যাটেলাইটের অরবিট পর্যবেক্ষণ ও বিভিন্ন কমান্ড পাঠানো যাবে। সময় স্বল্পতার কারণে মাত্র ৭-১০ দিনের পর্যবেক্ষণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল। অরবিট ক্যালকুলেশনও খুব সূক্ষ্মভাবে করা হয়নি। ১৯৫৬ সালের শেষের দিকে বোঝা যায় যে অবজেক্ট ডি'র নকশা খুবই উচ্চাভিলাষী ও জটিল। সাইন্টিফিক যন্ত্রপাতি তৈরি শেষ না হওয়ায় এটির উৎক্ষেপণ ১৯৫৮ সালের এপ্রিল পর্যন্ত পিছিয়ে দেয়া হয়। অবজেক্ট ডি'র পরে স্পুটনিক-৩ হিসেবে উৎক্ষেপণ হয়। 
    ইউএসএ সোভিয়েত ইউনিয়নের আগেই স্যাটেলাইট পাঠিয়ে দিতে পারে এই ভয়ে সোভিয়েত ওকেবি-১ ১৯৫৭ সালের এপ্রিল-মে আসের দিকে একটি সাধারণ স্যাটেলাইট পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। নতুন স্যাটেলাইটটি হবে খুবই সাধারণ এবং ১০০ কেজি মত ভরের। তাতে কোন জটিল যন্ত্রপাতি থাকবেনা। শুধু একটি রেডিও ট্রান্সমিটার থাকবে। ১৫ই ফেব্রুয়ারী ১৯৫৭ সালে সোভিয়েত মন্ত্রী পরিষদ এই প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়। স্যাটেলাইটটির প্রাথমিক নাম থাকে অবজেক্ট পিএস। এটি পৃথিবী থেকে ভিজ্যুয়ালী পর্যবেক্ষণ করা হবে এবং গ্রাউন্ড বেজড রিসিভিং স্টেশনগুলি থেকে এর ট্রান্সমিশন ধরা যাবে। পরবর্তীতে এরকম দুটি স্যাটেলাইট তৈরি করা হয় যাদের নাম পিএস-১ ও পিএস-২। দুটি আর-৭ রকেট দিয়ে এর উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা অনুমোদন পায়।

    No comments

    Post Top Ad

    Post Bottom Ad