Header Ads

  • সর্বশেষ

    ইউরেনাস। সৌরজগতের সপ্তম গ্রহ।

    দূরত্ব অনুসারে সৌরজগতের সপ্তম গ্রহ ইউরেনাস। সেই সাথে তৃতীয় বৃহত্তম ব্যাসের অধিকারী এই গ্রহ খুব ঠান্ডা ও ঝড়ো। এই আইস জায়ান্টের ১৩টি রিং আছে। এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত চাঁদের সংখ্যা ২৭টি। ইউরেনাস তার কক্ষপথের তলের সাথে প্রায় ৯০ ডিগ্রী কোণে নিজের অক্ষের উপর ঘুরছে। এই টিল্টের কারণে ইউরেনাস গড়ানো বলের মত করে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে বলে মনে হয়। 

    এটিই প্রথম গ্রহ যেটি আবিষ্কারে টেলিস্কোপের সাহায্য নিতে হয়েছে। জ্যোতির্বিজ্ঞানী উইলিয়াম হারশেল ১৭৮১ সালে প্রথম ইউরেনাস আবিষ্কার করেন। তিনি অবশ্য এটাকে ধুমকেতু বা নক্ষত্র ভেবেছিলেন। গ্রহ হিসেবে স্বীকৃতি পেতে আরও দুই বছর লাগে। জোহান এলারট বোডের পর্যবেক্ষণ শেষে ইউরেনাস গ্রহের স্বীকৃতি পায়। উইলিয়াম হারশেল গ্রহটির নাম রাজা জর্জ থ্রি'র নামানুসারে জিয়রজিয়াম সিডাস রাখতে চেয়েছিলেন।পরে গ্রীকদের আকাশের দেবতা ইউরেনাসের নামানুসারে নামকরণ করতে জোহান বোডে প্রস্তাব করেন।


    আকার ও দূরত্ব।

    ১৫,৭৫৯.২ মাইল বা ২৫,৩৬২ কিলোমিটার ব্যাসের ইউরেনাস পৃথিবীর চেয়ে প্রায় চার গুণ প্রশস্ত। যদি পৃথিবী একটি নিকেল হয় তবে ইউরেনাস সফটবলের আকারের হবে।

    সূর্য থেকে এর গড় দূরত্ব প্রায় ১.৮ বিলিয়ন মাইল যা প্রায় ১৯.৮ এস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিট। এক এস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিট হল পৃথিবী ও সূর্যের দূরত্বের সমান। ইউরেনাসে সূর্যের আলো পৌছাতে প্রায় দুই ঘন্টা চল্লিশ মিনিট সময় লাগে।

    কক্ষপথ ও ঘূূর্ণন।
    ইউরেনাসের একদিন হয় পৃথিবীর প্রায় ১৭ ঘন্টায়। মানে হল ইউরেনাস তার অক্ষের উপর একটি পূর্ণ ঘূর্ণন দিতে প্রায় ১৭ ঘন্টা সময় নেয়। আর ইউরেনাসের এক বছর হয় পৃথিবীর সময় অনুসারে প্রায় ৮৪ বছর মানে ৩০,৬৮৭ দিন। ইউরেনাস সৌরজগতের একমাত্র গ্রহ যার টিল্ট প্রায় ৯৭.৭৭ ডিগ্রী। এর সম্ভাব্য কারণ সুদূর অতীতে পৃথিবীর সমান একটি গ্রহের সাথে সংঘর্ষ। এই অস্বাভাবিক টিল্ট খুবই বাজে ঋতুর সৃষ্টি করে। ইউরেনাসের এক বছরের চার ভাগের এক ভাগ সময় মেরুর দিকে সরাসরি সূর্যের আলো পড়ে। এর অর্থ হল অন্য মেরু টানা ২১ বছর অন্ধকার শীতকালে থাকে। ইউরেনাস যে দুটি গ্রহ অন্য সব গ্রহ থেকে বিপরীত দিক দিয়ে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে তাদের মাঝে একটি। অন্য গ্রহ হল শুক্র। ইউরেনাস পূর্ব থেকে পশ্চিম এই অনুসারে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে। 
    যেভাবে তৈরি।
    ইউরেনাসের সৃষ্টি শুরু প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন বছর আগে যখন সৌরজগতের সৃষ্টি শুরু হয়েছিল। এরপর গ্র্যাভিটি আশেপাশের গ্যাস এক জায়গাতে ঘনীভূত করে এই আইস জায়ান্ট তৈরি করে।পাশের গ্রহ নেপচুনের মত ইউরেনাসও শুরুতে সূর্যের কাছাকাছি ছিল, পরে প্রায় চার বিলিয়ন বছর আগে বর্তমান অবস্থানে থিতু হয়।
    গঠন।
    ইউরেনাস সৌরজগতের দুটি আইস জায়ান্টের একটি, অন্যটি নেপচুন। এর শতকরা আশি ভাগেরও বেশী পানি, মিথেন ও এমোনিয়া'র বরফ দিয়ে তৈরি। সাথে আছে এটি বেশ ছোট পাথুরে কোর।কোরের কাছাকাছি তাপমাত্রা প্রায় ৪,৯৮২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। ইউরেনাস নেপচুনের চেয়ে সমান্য বড় কিন্তু ভর কম। ইউরেনাস সৌরজগতের সবচেয়ে কম ঘনত্বের গ্রহের মধ্যে দ্বিতীয়। সবচেয়ে কম ঘনত্ব শনির। 
    ইউরেনাস তার নীলাভ-সবুজ রং পেয়েছে তার বায়ুমন্ডলের মিথেন গ্যাসের থেকে। সূর্যের আলো ইউরেনাসের বায়ুমন্ডল ভেদ করে মেঘের উপরে বাধা পেয়ে প্রতিফলিত হয়।এ সময় মিথেন সূর্যের আলোর লাল অংশ শুষে নেয়, বাকী থাকে নীলাভ-সবুজ রং। 
    পৃষ্ঠ।
    আইস জায়ান্ট হিসেবে ইউরেনাসের কোন ভূপৃষ্ঠ নেই। গ্রহটি আসলে ঘূর্ণায়মান তরলের প্রবাহ। একটি স্পেসক্র্যাফট কখনই ইউরেনাসে অবতরণ করতে পারবেনা, এটি ইউরেনাসের বায়ুমন্ডলে উড়তেও পারবেনা। প্রচন্ড চাপ ও তাপ স্পেসক্র্যাফট টিকতে দেবেনা।
    বায়ুমন্ডল।
    ইউরেনাসের বায়ুমন্ডলের বেশিরভাগই হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম, বাকী অংশ মিথেন, পানি ও এমোনিয়া। মিথেনের কারণে ইউরেনাস নীল দেখায়।১৯৮৬ সালে ভয়েজার ২ যখন ইউরেনাসকে ফ্লাইবাই করে তখন একটি বিশাল ঘন দাগ (দ্য গ্রেট ডার্ক স্পট) ও একটি তুলনামূলক ছোট ঘন দাগ দেখতে পায়। এ থেকে বোঝা যায় ইউরেনাসের আবহাওয়া মোটেও শান্ত নয়। ইউরেনাসের পৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা ৪৯ কেলভিন বা -২২৪.২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। 
    বাতাসের গতিবেগ ঘন্টায় প্রায় ৫৬০ মাইল। বাতাস নিরক্ষরেখায় গ্রহের ঘূর্ণনের বিপরীত দিকে বহমান। কিন্তু মেরুর দিকে তা গ্রহের ঘূর্ণনের অনুকুলে।

    3 comments:

    1. পৃথিবীর অভ্যন্তরীন কোর যদি ঠান্ডা হত তাহলে পৃথিবীর প্রকৃতি কিরুপ হত জীবের বসবাসের উপযোগী হত কিনা?

      এই সম্পর্কিত একটি পোষ্ট চাই।

      ReplyDelete
      Replies
      1. খুব তাড়াতাড়ি দেবার চেস্টা করা হবে।

        Delete
    2. খুব ভালো হইছে। Thanks, Taukir Ahmed সুন্দর পোস্ট করার জন্য।

      ReplyDelete

    Post Top Ad

    Post Bottom Ad