Header Ads

  • সর্বশেষ

    নেপচুন। সৌরজগতের সবচেয়ে দূরের গ্রহ।

    আইস জায়ান্ট নেপচুনই হল প্রথম গ্রহ যেটি গাণিতিক ভবিষ্যদ্বাণীর মাধ্যমে আবিষ্কার করা হয়। গ্যালিলিও নেপচুনকে লিখেছিলেন একটি স্থির নক্ষত্র। তিনি তার সাধারণ টেলিস্কোপ ব্যাবহার করে ১৬১২ ও ১৬১৩ সালের মাঝে পর্যবেক্ষণ করে তার সিদ্ধান্ত লিখেছিলেন। যখন দেখা গেলো যে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা যে গণনা করছেন ইউরেনাস সে অনুসারে চলছেনা, ফ্রেঞ্চ গণিতবিদ আরবাইন জোসেফ লে ভেরিয়ার ইউরেনাসের পরে আরও একটি গ্রহ আছে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেন। এই অজানা গ্রহের গ্র্যাভিটির প্রভাবেই ইউরেনাস গণনা অনুসারে চলছেনা। আরবাইন জোসেফ লে ভেরিয়ার অজানা গ্রহটির অবস্থান ও ভরও বলে দেন।আরবাইন জোসেফ লে ভেরিয়ারের এই গণনা ফ্রেঞ্চ জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা গুরুত্ব দেন নি সে সময়। তাই তিনি তার পর্যবেক্ষণের ফলাফল জার্মান জ্যোতির্বিজ্ঞানী গটফ্রিড গ্যালে'র কাছে বার্লিন অবজারভেটরিতে পাঠান। গটফ্রিড গ্যালে আরবাইন জোসেফ লে ভেরিয়ারের গণনা অনুসারে পর্যবেক্ষণ শুরু করার প্রথম রাতেই নেপচুনকে খুঁজে পান। সালটা ছিল ১৮৪৬। নেপচুনের আবিষ্কারের ১৭ দিন পরই নেপচুনের বৃহত্তম চাঁদ ট্রাইটন আবিষ্কৃত হয়। 

    সূর্য থেকে প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন কিলোমিটার দূরে নেপচুনের অবস্থান। সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে সময় নেয় পৃথিবীর প্রায় ১৬৫ বছর। অত্যন্ত দূরের বলে পৃথিবী থেকে নেপচুনকে খালি চোখে দেখা যায়না। নেপচুনের কক্ষপথ খুবই উপবৃত্তাকার হবার কারণে পৃথিবীর প্রত্যেক ২৪৮ বছরে একবার নেপচুন প্লুটোর চেয়েও দূরবর্তী গ্রহে পরিণত হয়। প্লুটোর সাথে নেপচুনের সংঘর্ষ হয়না কারণ সূর্যের চারিদিকে নেপচুনের প্রত্যেক তিনটি পূর্ণ প্রদক্ষিণে প্লুটোর দুটি পূর্ণ প্রদক্ষিণ হয়। একই কারণে গ্রহ দুটি নিজেদের খুব কাছাকাছিও আসতে পারেনা। 
    নেপচুনের চৌম্বকক্ষেত্রের অক্ষ তার নিজ অক্ষের সাথে প্রায় ৪৭ ডিগ্রী কোণে অবস্থান করছে। অনেকটা ইউরেনাসের মত যার চৌম্বকক্ষেত্রের অক্ষ তার নিজ অক্ষের সাথে প্রায় ৬০ ডিগ্রী কোণে অবস্থান করছে। নেপচুনের চৌম্বকক্ষেত্র পৃথিবীর চেয়ে প্রায় ২৭ গুণ শক্তিশালী।
    নেপচুনের বায়ুমন্ডল অনেক গভীর।এর কোর বা কেন্দ্রের আকার প্রায় পৃথিবীর সমান। নেপচুনের নীল রঙের কারণ তার বায়ুমন্ডলের মিথেন। ইউরেনাসের নীল রঙের কারণও মিথেন।কিন্তু নেপচুনের নীল অনেক উজ্জ্বল। সেখানে হয়ত কোন অজানা যৌগ থাকতে পারে যার জন্য নেপচুনের নীল রং এতটা উজ্জ্বল। 
    সূর্য থেকে অনেক দূরে হওয়াতে নেপচুন খুব বেশী শক্তি পায়না। তারপরও নেপচুনের বাতাসের গতি পৃথিবীর সর্বোচ্চ গতির চেয়ে প্রায় তিনগুন বেশী। ১৯৮৯ সালে ভয়েজার ২ নেপচুনের দক্ষিণ গোলার্ধে একটি বিরাট ডিম্বাকৃতির ঝড় দেখতে পায়। এই "গ্রেট ডার্ক স্পট" আকারে সম্পূর্ণ পৃথিবীর সমান। ঝড়টি ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে ঘোরে। প্রতিনিয়ত এটি পশ্চিম দিকে এগোচ্ছে প্রায় ঘন্টায় ১,২০০ কিলোমিটার বেগে। পরবর্তীতে হাবল স্পেস টেলিস্কোপের সাহায্য এই ঝড়টিকে পর্যবেক্ষণ করতে গেলে ঝড়টি আর পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে গত দশকে এরকম আরও দুটি ঝড় দেখা যায় যা শেষ হয়ে যায়। ভয়েজার ২ এর ক্যামেরায় উপরের মেঘের কারণে নিচের মেঘে ছায়া পড়ছে এমন দৃশ্যও ধরা পড়ে যার মাধ্যমে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মেঘের ঐ দুটি স্তরের মাঝের দূরত্ব বের করতে সক্ষম হন।

    নেপচুনের এখন পর্যন্ত ছয়টি রিং আবিষ্কার হয়েছে। ভয়েজার ২ এর পর্যবেক্ষণে জানা যায় যে রিং গুলি সব জায়গাতে একই রকম নয়। চারটি জায়গাতে রিঙের পদাথের ঘনত্ব বেশী। এসব জায়গাকে আর্ক বলে। রিং গুলির বয়স বেশী নয় এবং খুব বেশীদিন স্থায়ীও হয়না।
    নেপচুনের স্বীকৃত চাঁদের সংখ্যা ১৩টি। এগুলোর মাঝে ভয়েজার ২এর মাধ্যমে আবিষ্কার হয় ছয়টি। ২০১৪ সালে একটি ছোট, নিষ্প্রভ চাঁদ আবিষ্কার হয় যা এখনও স্বীকৃতির অপেক্ষায় আছে। নেপচুনের বৃহত্তম চাঁদ ট্রাইটন, অন্যান্য চাঁদ নেপচুনকে যে দিকে প্রদক্ষিণ করে তার বিপরীত দিক দিয়ে প্রদক্ষিণ করে। সুদূর অতীতে ট্রাইটন নেপচুনের গ্র্যাভিটিতে আটকা পড়ে। ট্রাইটন খুবই ঠান্ডা। এর পৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা মাইনাস ২৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এত কম তাপমাত্রার কারণে ভয়েজার ২ সেখানে গেইসার সনাক্ত করে। এসব গেইসার বরফজাত পদার্থ প্রায় ৮ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত ছুড়ে দেয়। ভয়েজার ২ ট্রাইটনে খুবই পাতলা একটি বায়ুমন্ডল আবিষ্কার করে। পৃথিবী থেকে এই বায়ুমন্ডল পর্যবেক্ষণে দেখা যায় যে এর তাপমাত্রা প্রতিনিয়ত বাড়ছে, কিন্তু কেন বাড়ছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি এখনও।

    2 comments:

    1. নেপচুনের স্বীকৃত চাঁদের সংখ্যা ১৩টি। এগুলোর মাঝে ভয়েজার ২এর মাধ্যমে আবিষ্কার হয় ছয়টি। ২০১৮ সালে একটি ছোট, নিষ্প্রভ চাঁদ আবিষ্কার হয় যা এখনও স্বীকৃতির অপেক্ষায় আছে

      এখানে সাল ২০১৮ কি করে হয়। দয়া করে সংশোধন করে নিন। ২০১৮ সাল তো এখনো আসেনি

      ReplyDelete

    Post Top Ad

    Post Bottom Ad