Header Ads

  • সর্বশেষ

    ইউরেনাসের চাঁদ টাইটানিয়া ও মিরান্ডায় বসবাস করতে কেমন লাগবে?

    ঘুরে আসার জন্য ইউরেনাস হবে একটি অসাধারণ জায়গা, কিন্তু সেখানে বাস করা খুবই কঠিন হবে। কিন্তু চাঁদ গুলিতে বসবাস ভিন্ন ব্যাপার হবে। ইউরেনাসের সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ২৭টি চাঁদ আছে, তাদের ভেতর পাঁচটি বড় বড় চাঁদ কে বলা হয় "মেজর মুনস।" যদি আমরা ইউরেনাসের কোন চাঁদে বেস তৈরি করতে চাই তবে টাইটানিয়া ও মিরান্ডা হবে সবচেয়ে ভালো জায়গা।
    টাইটানিয়া
    টাইটানিয়ার গ্র্যাভিটি সবচেয়ে বেশী, পৃথিবীর প্রায় ৪%। মিরান্ডার সারফেস অনুসন্ধান চালানোর জন্য খুবই উপযুক্ত। কারণ শুধুমাত্র ভয়েজার ২ই ইউরেনাস সিস্টেম ঘুরে এসেছে। পৃথিবীর ছানারা ইউরেনাসের চাঁদগুলির সম্পর্কে খুব বেশী কিছু জানেনা। ১৯৮৬ সালে যখন ভয়েজার ২ ইউরেনাস সিস্টেম প্রদক্ষিণ করে তখন সবগুলি চাঁদের উত্তর গোলার্ধে শীতকাল চলছিল। ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত নাসার এমেস রিসার্চ সেন্টারের গ্রহ বিজ্ঞানী জেফ মুর বলেন "ঐ সময় ভয়েজার ২ এর পক্ষে ইউরেনাসের সবগুলি চাঁদ এক একটি করে প্রদক্ষিণ করা সম্ভব হয়নি। সম্পূর্ণ ইউরেনাস সিস্টেমকে একবারে প্রদক্ষিণ করেছিল ভয়েজার ২।"
    ভয়েজার ২ এর তোলা ছবিগুলো থেকে দেখা যায় যে টাইটানিয়ার দক্ষিণ গোলার্ধে প্রচুর ক্রেটার এবং ্টেকটোনিক ভূবৈচিত্র্য যেমন গিরিখাত ও ভাঙ্গন। এসব জায়গা দেখে আসার জন্য দারুন হতে পারে। টাইটানিয়ার সবচেয়ে বড় ক্রেটারটি প্রায় ২০৩ মাইল প্রশস্ত। সবচেয়ে বড় যে গিরিখাত তার দৈর্ঘ্য ৯৩০ মাইলেরও বেশী যা টাইটানিয়ার নিরক্ষ অঞ্চল থেকে দক্ষিণমেরু পর্যন্ত বিস্তৃত। 
    অন্যদিকে মিরান্ডার সারফেসে ব্যপক বৈচিত্র্য আছে। মনে হয় যেন একটি জিগস পাজল না সাজিয়ে রেখে দেয়া হয়েছে। ডিমের মত আকৃতির এক ধরণের গঠন আছে অনেকটা দৌড়ের ট্র্যাকের মত, নাম করোনা। মিরান্ডায় বিশাল বিশাল গিরিখাত সম্বলিত সমভূমিও আছে। কিছু কিছু খাত আছে যার গভীরতা পৃথিবীর গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের চেয়ে প্রায় ১২ গুণ। এর অন্যতম কারণ মিরান্ডার দুর্বল গ্র্যাভিটি যার পৃথিবীর মাত্র প্রায় ১%। একটা পাথর যদি খাতের চূড়া থেকে ফেলা হয় তবে মাটি স্পর্শ করতে প্রায় ১০ মিনিট লাগবে।যারা উত্তেজন খোঁজেন তাদের জন্য এসব গিরিখাত ব্যাপক আনন্দের জায়গা হবে। জেফ মুর বলেন " আমার মনে হয় এটা একটা ভয়ঙ্কর আইডিয়া, কিতু যদি মিরান্ডায় থাকা হয় তবে কিছু মানুষ অবশ্যই লাফ দেবার সাহস দেখাবে।" 
    মিরান্ডা
    ইউরেনাসের কোন চাঁদেরই বায়ুমন্ডল নেই। তাই সেখানে আবহাওয়া, আকাশের রং এমনকি বায়ুচাপও নেই। জায়গাগুলি অসম্ভব ঠান্ডা। টাইটনিয়ার গড় তাপমাত্রা হল মাইনাস ২০৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। মারাত্মক ঠাণ্ডা ছাড়াও আর কি কি বিপদের অভিজ্ঞতা হতে পারে এসব চাঁদে সে সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা দেয়া খুব কঠিন। সেখানে ভূমিকম্প এবং ক্রায়োভল্কানিজম থাকতে পারে যার কারণে মাটি কাঁপতে থাকতে পারে। ইউরেনাসের ম্যাগনেটোস্ফিয়রের কারণে তৈরি প্রচন্ড রেডিয়েশন ঝামেলা করতে পারে, বিশেষ করে যে দিকটাতে ইউরেনাস দেখা যাবে তার উল্টো দিকে। পৃথিবীর চাঁদের মত ইউরেনাস থেকেও টাইটানিয়া ও মিরান্ডার শুধুমাত্র একটি দিকই দেখা যায়। 
    টাইটানিয়া তার নিজ অক্ষের উপর একবার পূর্ণ ঘূর্ণন দিতে পৃথিবীর নয় দিন সময় নেয় সেখানে মিরান্ডা নেয় ১.৪ দিন। যদি আপনি নিরক্ষীয় অঞ্চলে বাস করেন তবে সাধারণ দিবারাত্রির চক্র পাবেন। ইউরেনাসের টিল্ট প্রায় ৯৮ ডিগ্রী। এর মানে হল ইউরেনাস সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে যে প্রায় ৮৪ বছর সময় নেয়, তার দুই মেরুতে ৪২ বছর একটানা দিন ও বাকী ৪২ বছর একটানা রাত থাকে। যদি টাইটানিয়া ও মিরান্ডা থেকে সূর্যকে দেখা হয় তবে সূর্যকে একটি খুবই ছোট চাকতির মত মনে হবে। আর যদি মিরান্ডা ইউরেনাসকে দেখা হয় তবে আমরা পৃথিবী থেকে চাঁদকে যত বড় দেখি তার চেয়ে প্রায় ৪১ গুণ বড় দেখা যাবে,আর টাইটানিয়া থেকে ২১ গুণ বড়।টাইটানিয়া ও মিরান্ডা থেকে ইউরেনাসের সব গুলি মেজর মুনস'দের দের বেশ বড় বড় চাকতির মত দেখা যাবে। 
    যদি পৃথিবীতে আপনার কোনও বন্ধুকে টাইটানিয়া বা মিরান্ডা'র প্রাকৃতিক দৃশ্যের ছবি ইমেইল করতে চান তবে রেডিও সিগন্যাল ব্যবহার করলে প্রায় আড়াই ঘন্টা লাগবে পৃথিবীতে ছবিটি পৌছাতে।

    1 comment:

    Post Top Ad

    Post Bottom Ad