Header Ads

  • সর্বশেষ

    বুধের ভূতাত্ত্বিক গঠন ও তিনটি প্রস্তাবনা।

    বুধ সৌরজগতের পাথুরে গ্রহগুলির মাঝে একটি। অনেকটা পৃথিবীর মতই পাথুরে। প্রায় ২৪৩৯.৭ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের এই গ্রহটি সৌরজগতের গ্রহগুলির মাঝে ক্ষুদ্রতম। বুধ মোটামুটি ৭০% ধআতু ও ৩০% সিলিকেট দিয়ে তৈরি। প্রতি কিউবিক সেন্টিমিটারে ৫.৪২৭ গ্রাম ভরের বুধকে সৌরজগতের দ্বিতীয় ঘনত্বের গ্রহে পরিণত করেছে। সবচেয়ে বেশী ঘনত্ব পৃথিবীর, প্রতি কিউবিক সেন্টিমিটারে ৫.৫১৫ গ্রাম। তবে গ্যাভিটির কারণে পৃথিবীর চেয়ে বুধ বেশী সংকুচিত। বুধের এই ঘনত্ব দিয়ে পরিমাপ করা হয় তার কেন্দ্রে কি আছে। বুধ তার কেন্দ্রের দিকে পৃথিবীর মত এত বেশী সংকুচিত নয়। একারনে এর কেন্দ্র বেশ বড় এবং প্রায় পুরোটাই লোহার তৈরি।

       
    ভূতত্ত্ববিদ দের মতে বুধের মোট আয়তনের প্রায় শতকরা ৫৫ ভাগই হল তার কেন্দ্র। পৃথিবীর ক্ষেত্রে এটা মাত্র ১৭%। ২০০৭ এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয় বুধের একটি গলিত কেন্দ্র আছে। কেন্দ্রের উপরিভাগে ৫০০-৭০০ কিলোমিটার পুরু একটি সিলিকেটের তৈরি ম্যান্টল আছে। মেরিনার ১০ মিশনে প্রাপ্ত তথ্য ও পৃথিবী থেকে পর্যবেক্ষণে বোঝা যায় যে বুধের পৃষ্ঠ প্রায় ৩৫ কিলোমিটার পুরু। বুধের পৃষ্ঠের একটি লক্ষ্যনীয় ব্যাপার হল কয়েকশ কিলোমিটার লম্বা অসংখ্য অপ্রশস্ত পর্বত সারি। অনেকের মতে এগুলোর সৃষ্টি হয়েছিল যখন বুধের কেন্দ্র ও ম্যান্টল শীতল হচ্ছিল। 
    সৌরজগতের যে কোন গ্রহের চেয়ে বুধের কেন্দ্রে লোহার ঘনত্ব বেশী। এটার ব্যাখ্যা দেবার জন্য অনেক মতবাদ এসেছে। সবচেয়ে গৃহীত মতবাদ হল বুধে ধাতু ও সিলিকেটের অনুপাত ছিল সাধারণ কন্ড্রাইট উল্কার মত এবং ভর ছিল এখনকার চেয়ে প্রায় ২.২৫ গুণ। সৌরজগতের সৃষ্টির শুরুর দিকে বুধের তার ভরের প্রায় ছয় ভাগের একভাগ ভরের একটি গ্রহের সাথে সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষের ফলে বুধের পূর্বতন পৃষ্ঠ ও ম্যান্টলের অনেক খানি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।সেই সাথে কেন্দ্রে একই ধরণের মৌলিক পদার্থের আধিক্য দেখা যায়। জায়ান্ট ইম্প্যাক্ট হাইপোথিসিস নামে প্রায় একই রকম মতবাদ আছে পৃথিবীর চাঁদ সৃষ্টির ব্যাপারে।    
    আরেকটি প্রস্তাবনা হল বুধ সৌর নেবুলা থেকে সূর্য সহ অন্যান্য গ্রহ সৃষ্টির সাথেই তৈরি হয়েছিল। প্রাথমিক অবস্থায় বুধের ভর ছিল বর্তমানের প্রায় দ্বিগুণ। কিন্তু যতই প্রোটোসানের ঘনত্ব বেড়েছে সাথে সাথে প্রোটোসানের তাপমাত্রাও বেড়েছে। ফলে ঐ সময়টায় বুধের তাপমাত্রা প্রায় ৩,৫০০ কেল্ভিনের কাছাকাছি ছিল, এমনকি প্রায় ১০,০০০ কেলভিনও হতে পারে।এই প্রচন্ড তাপে বুধের অনেক খানি পদার্থ বাষ্প হয়ে উড়ে গেছে। ঐ সময় বুধের হয়ত পাথরের বাষ্পের বায়ুমন্ডল ছিল। 
    আরও একটি প্রস্তাবনা হল সৌর নেবুলা থেকে বুধ যখন তৈরি হয় তার এক্রিশন ডিস্ক থেকে হালকা মৌলিক পদার্থ গুলি বেরিয়ে যায়। প্রতিটি প্রস্তাবনা অনুসারে বুধের পৃষ্ঠ বিভিন্ন পদার্থ দিয়ে তৈরি হবার কথা। মেসেঞ্জার ও বেপিকলম্বো নামে দুটি মিশন পাঠানো হয় এই সব প্রস্তাবনা পরখ করার জন্য। মেসেঞ্জারের পাঠানো তথ্য অনুসারে বুধে ধারণার চেয়ে বেশী পটাশিয়াম ও সালফার আছে। এটি জায়ান্ট ইম্প্যাক্ট হাইপোথিসিসকে সমর্থন করে। পৃষ্ঠ ও ম্যান্টল যে বাষ্পে পরিণত হয়নি এবং তার কারনে এদুটি মৌলিক পদার্থ সেখানে রয়েছে। ১০,০০০ কেলভিনে পটাশিয়াম ও সালফার উড়ে যাবার কথা। 
    কোন প্রস্তাবনা যে সত্য তা নিশ্চিত হতে আরও গবেষণা দরকার। 

    No comments

    Post Top Ad

    Post Bottom Ad