আজ সৌরজগতের বাইরে গ্রহ আবিষ্কারের রজত জয়ন্তী।
২৫ বছর আগে আজকের দিনে প্রথম এক্সোপ্ল্যানেট আবিষ্কারের ঘোষণা এসেছিল। জানুয়ারী ৯, ১৯৯২ সালে জ্যোতির্বিজ্ঞানী এলেক্স অলজকজ্যান ও ডেল ফ্রেইল নেচার জার্নালে একটি গবেষণা প্রকাশ করেন। সেখানে বলা হয় খুবই বেশী ঘনত্বের এবং প্রচন্ড ঘূর্ণন গতির একটি পালসারকে দুটি গ্রহ প্রদক্ষিণ করছে। এটাই শুরু ছিল। আর এখন অসংখ্য এক্সোপ্ল্যানেট আবিষ্কার হয়েছে। অলজকজ্যান ও ফ্রেইলই প্রথম প্রমাণ সংগ্রহ করেছিলেন আমাদের সৌরজগৎ ছাড়াও অন্য কোথাও গ্রহ আছে।
"এটা জানার পর থেকেই সবার ভেতর একটা ধারণা চলে আসে যে অন্যান্য তারারও গ্রহ থাকাটা স্বাভাবিক। সেগুলোর গঠন বিভিন্ন রকমের হতে পারে। শুধুমাত্র আমাদের সৌরজগৎ দেখলে এসব ধারণা পাওয়া প্রায় অসম্ভব ছিল।" বলেন অলজকজ্যান। তিনি পেন্সিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি'র সাথে সংযুক্ত ছিলেন। ইন্টারন্যাশনাল এস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন এই গ্রহের নাম দেবার জন্য "নেম এক্স- ওয়ার্ল্ড" নামে একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল। সে সময় অলজকজ্যান ঐ পালসার গ্রহ সম্পর্কে এসব কথা বলেন।
শিল্পীর কল্পনা। |
পালসার PSR B1257+12 পৃথিবী থেকে ভারগো কন্সটিলেশনে প্রায় ২,৩০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। অলজকজ্যান ও ফ্রেইল যে দুটি ইতিহাস সৃষ্টিকারী গ্রহ আবিষ্কার করেন সেই দুটি গ্রহই পৃথিবীর ভরের প্রায় চার গুণ ছিল। তার পুয়েরতো রিকো'র এরেসিবো অবজারভেটরী ব্যবহার করেন। গ্রহ দুটি যথাক্রমে প্রায় ৬৬ ও ৯৮ দিন সময় নেয় পালসারটিকে একবার প্রদক্ষিণ করতে।১৯৯৪ সালে তারা একই পালসারকে প্রদক্ষিণ করা আরও একটি গ্রহ খুঁজে পান। সেটা প্রায় ২৫ দিনে একবার পালসারটিকে প্রদক্ষিণ করত। এটা এখন পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে কম ভরের এক্সোপ্ল্যানেট। ভর আমাদের চাঁদের ভরের প্রায় দ্বিগুণ। এই অদ্ভুত তিনটি গ্রহের নাম যথাক্রমে PSR1257+12b, PSR1257+12c ও PSR1257+12d। প্রথমটি পালসারের সবচেয়ে কাছের আর শেষেরটি পালাসার থেকে সবচেয়ে দূরের। কিন্তু ২০১৫ সালের সেই "নেম এক্স- ওয়ার্ল্ড" প্রতিযোগিতায় তাদের নাম হয় যথাক্রমে ড্রগার, পল্টারজিস্ট ও ফোবেটর।
এক্সোপ্ল্যানেট বিজ্ঞান জগতে আরও একটি মাইলফলক অর্জন হয় ১৯৯৫ সালে। এই সময় ইউনিভার্সিটি অব জেনেভা, সুইজারল্যান্ডের মিশেল মেয়র ও দিদিয়ের কুয়েলজ হট জুপিটার 51 Pegasi b আবিষ্কারের ঘোষণা দেন। এটি সর্বপ্রথম আবিষ্কৃত গ্রহ যেটা সূর্যের মত একটি নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করে। মার্চ ২০০৯ সালে নাসা কেপলার স্পেস টেলিস্কোপ চালুর পর থেকে এক্সোপ্ল্যানেট আবিষ্কারের গতি বাড়তে থাকে। যখন কোন গ্রহ তার নক্ষত্রের সামনে দিয়ে পার হয় তখন ঐ নক্ষত্রের উজ্জ্বলতার কিছুটা পরিবর্তন হয়। কেপলার স্পেস টেলিস্কোপ উজ্জ্বলতার সামান্য পরিবর্তনও ধরতে পারে। এই পরিবর্তন পরিমাপ করে গ্রহটির সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য সংগৃহীত হয়। এই পদ্ধতির নাম "ট্রানজিট পদ্ধতি"। এই পদ্ধতিতে কেপলার স্পেস টেলিস্কোপের সাহায্য নিয়ে এখন পর্যন্ত প্রায় ২,৩৩০ টি এক্সোপ্ল্যানেট নিশ্চিত করা হয়েছে।এখন পর্যন্ত জানা এক্সোপ্ল্যানেটের সংখ্যা প্রায় ৩,৫০০ এর বেশী। কেপলার স্পেস টেলিস্কোপের অবজারভেশনে জানা যায় যে আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সীর প্রায় প্রতিটি নক্ষত্রের অন্তত একটি করে গ্রহ আছে। আশার কথা হল এই সব ট্রিলিয়ন গ্রহের মাঝে যথেষ্ট পরিমাণ গ্রহ তার নক্ষত্রের বাসযোগ্য এলাকা বা গোল্ডিলকস এলাকায় অবস্থান করছে, যে অবস্থানে থাকলে কোন জ্যোতিষ্কে পানি তরল অবস্থায় প্রবাহিত হতে পারে।
এতসব গ্রহের ভেতর মানুষ একসময় আরও একটি পৃথিবীর মত গ্রহ খুঁজে পেতেই পারে যেখানে এই পৃথিবীর মত প্রাণ আছে।
No comments