সৌরজগতের সবচেয়ে অদ্ভুত চাঁদ। ২য় পর্ব।
ইয়াপিটাস, শনিকে প্রদক্ষিণ করা সবচেয়ে বাইরের চাঁদ, অন্য যে কোন চাঁদের চেয়ে কমপক্ষে দ্বিগুণ দূরত্ব দিয়ে শনিকে প্রদক্ষিণ করছে। এর পৃষ্ঠ দেখলে মনে হয় যেন সে ময়লা জমা করছে। অন্য কোন শনির চাঁদের ক্ষেত্রে এমন হয়নি।
ফিবি। |
কিন্তু ইয়াপিটাসের চেয়েও দূরে দিয়ে শনিকে প্রদক্ষিণ করছে ফিবি। ধারণা করা হয় যে এটি শনির গ্র্যাভিটিতে ধরা পড়া একটি কাইপার বেল্ট অবজেক্ট। শনির অন্যান্য চাঁদ যে ডিরেকশনে শনিকে প্রদক্ষিণ করছে ফিবি করছে তার উল্টো ডিরেকশনে। অনেক দূর দিয়ে, তবে তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল এটা খুবই অন্ধকার। শনির যেকোন চাঁদের চেয়ে এটি বেশী অন্ধকার। শুধু ইয়াপিটাসের কম উজ্জ্বল দিকের সাথেই এর তুলনা করা যায়। ফিবি থেকে খুব দীর্ঘ সময় ধরে পারটিকেলের একটি স্থায়ী ধারা প্রবাহিত হচ্ছে। ফিবির ভূপৃষ্ঠের গঠন এতটাই দুর্বল যে সূর্য থেকে আসা চার্জড পারটিকেলের সাথে সংঘর্ষই যথেষ্ট তা ভেঙ্গে ফেলার জন্য।
স্পিটজার স্পেস টেলিস্কোপের সাহায্য ফিবি সম্পর্কে একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার করা গেছে। এটি শনির চারিদিকে তার নিজের বলয় সৃষ্টি করে প্রদক্ষিণ করছে। এই বলয় শনির অন্য যেকোন বলয়ের চেয়ে বড়, ছড়ানো এবং কম ঘনত্বের। এই বলয়টির ঘনত্ব এতটাই কম যে এর প্রতি ঘন কিলোমিটারে মাত্র সাতটি বালির কণা পাওয়া যাবে। ফিবি ও তার বলয় ঘড়ির কাঁটা যে দিকে যায় সেদিক দিয়ে শনিকে প্রদক্ষিণ করে কিন্তু ইয়াপিটাস করে তার বিপরীত দিক দিয়ে। যত সময় গেছে এসব পারটিকেল ইয়াপিটাসের এক দিকে জমা হয়েছে। কিন্তু এটা গল্পের শুরু মাত্র।
যদি এরকম না হত, ইয়াপিটাসের উজ্জ্বলতার কারণ বরফের উপর এত পরিমানে জমা হতে পারতনা। একসময় এসব পারটিকেল শেষ হয়ে যেত, তার উপর আবার বরফের আস্তরণ পড়ত। আর ইয়াপিটাসের দুই দিকেই সমান উজ্জ্বলতা থাকত অর্থাৎ সাদা থাকত। কালো বা কম উজ্জ্বল বস্তু দ্রুত গরম হয় আর সাদা বস্তু দেরীতে, পদার্থবিজ্ঞানের এই নিয়ম ইয়াপিটাসেও সত্য। যখন পানি ইয়াপিটাসের উজ্জ্বল দিকে জমতে চেষ্টা করে কোন বাধাই পায়না। কিন্তু অনুজ্জ্বল দিকে পানি বরফ হিসেবে জমাতো দূরে থাক, তরল হিসেবেও বেশীক্ষণ থাকতে পারেনা, তার আগেই বাষ্পে পরিণত হয়ে যায়। আমরা জানি বরফের উপর পড়া আলো বেশীরভাগই প্রতিফলিত হয়। বরফই যদি না জমে তবে আলোর প্রতিফলন কি করে হবে?
ফলাফল? একটি চাঁদ যার দুই দিকের রং দুই রকম। প্রায় ৩০০ বছরের পুরাতন একটি রহস্যের সমাধান হল।অনেক আগে একটি ব্যর্থ ধুমকেতু শনির গ্র্যাভিটিতে আটকে পড়ে। প্রায় কয়েকশ মিলিয়ন বা তারও বেশী বছর এর আবর্জনা ইয়াপিটাসের একদিকে জমা হতে থাকে, সেই সাথে রঙেরও পরিবর্তন হতে থাকে এবং সূর্যের আলো শোষণ করা বাড়তে থাকে। আস্তে আস্তে যখন ঐ দিকের সমস্ত বরফ বাষ্পে পরিণত হয়ে যায় আলোর প্রতিফলন বরফের মত করে ভালোভাবে করার মত কিছু থাকেনা। কক্ষপথ হেলানো হবার ও ঠিক নিরক্ষরেখা বরাবর পর্বতমালা তৈরি হবার রহস্য কিন্তু এখনও রহস্যই আছে।
No comments