Header Ads

  • সর্বশেষ

    একটি নক্ষত্র যেটি প্রায় অমর।

    এখন যতগুলি নক্ষত্রকে জ্বলতে দেখা যায় সেগুলোর প্রত্যেকটিকেই একদিন ধ্বংস হতে হবে। আমাদের ৪.৬ বিলিয়ন বচরের সূর্যকেও আর প্রায় ৭.৮ বিলিয়ন বছরের ভেতরে সাদা বামন নক্ষত্রে পরিণত হতে হবে। এওখন বিজ্ঞানীরা বলছেন ওরায়ন কন্সটিলেশনের দক্ষিণে অবস্থিত একটি অনুজ্জ্বল লাল নক্ষত্র অন্য যেকোন নক্ষত্রের চেয়ে বেশীদিন পড়ে ধ্বংস হবে। জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী সারজিও ডেইটেরিখ বলেন "নক্ষত্রটি বর্তমান মহাকাশের চেয়েও বেশীদিন বাচবে, সেটা ট্রিলিয়ন বছরও হতে পারে। 


    একটি নক্ষত্রের ভর যত কম হবে, সেটি তত বেশীদিন টিকবে। সূর্যসহ বেশীরভাগ নক্ষত্র তাদের কেন্দ্রে নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ায় হাইড্রোজেনকে হিলিয়ামে পরিণত করে তাদের শক্তি তৈরি করে। এদের সংখ্যা অনেক বেশী বলে এগুলোকে মেইন সিকুয়েন্স স্টার বলা হয়।এসব নক্ষত্রের জন্য ভর যেমন সৌভাগ্য তেমনি বোঝাও। একদিকে ভর নক্ষত্রের জ্বালানি যা দিয়ে নক্ষত্রটির শক্তি তৈরি হয়। অন্যদিকে নক্ষত্রের ভর যত বেশী হয় তার কেন্দ্র তত উত্তপ্ত হয়, ফলে নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ার গতি বেড়ে যায়। এতে নক্ষত্রটি আরও উজ্জ্বলভাবে আলো দেয় এবং তার জ্বালানি দ্রুত শেষ হয়ে যায়। সবচেয়ে কম ভর ও সবচেয়ে বেশীদিন টিকে থাকে এমন মেইন সিকুয়েন্স স্টারের জন্মের শুরুতে ভর থাকে সূর্যের ভরের ৮% থেকে ৬০%। এগুলোকে লাল বামন নক্ষত্র বলে। এরা ঠান্ডা,অনুজ্জ্বল ও খুবই ছোট আকারের হয়। এ ধরণের নক্ষত্রের সংখ্যাই মহাকাশে সবচেয়ে বেশী। এগুলোকে খালি চোখে দেখা যায়না। সবচেয়ে ছোট ও কম ভরের লাল বামন নক্ষত্র ট্রিলিয়ন বছরেরও বেশীদিন বহাল তবিয়তে টিকে থাকবে।      

    একটি সফল কম ভরের নক্ষত্রের ভরের একটি সীমা আছে। একটি নতুন জন্মানো নক্ষত্র যদি খুবই কম ভরের হয় তবে তা লাল বামন নক্ষত্র হবেনা। হবে একটি ব্যর্থ নক্ষত্র যাকে বাদামী বামন বলে। জন্মের শুরুর দিকে একটি বাদামী বামন নক্ষত্র লাল বামন নক্ষত্রের মত উজ্জ্বলতায় আলো দেয়, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এই উজ্জ্বলতা কমতে থাকে। যেহেতু একটি শিশু বাদামী বামন নক্ষত্র লাল বামন নক্ষত্রের মত প্রায় একই উজ্জ্বলতায় আলো দেয় তাই এদেরকে আলাদা করা খুব কঠিন। এই দুই ধরণের নক্ষত্রের মাঝে পার্থক্যের একটি মাধ্যম বের করতে ডেইটেরিখ সূর্যের কাছাকাছি ৬৩টি নক্ষত্রের আকার নিয়ে গবেষণা করেন। মেইন সিকুয়েন্স স্টার এবং লাল ও বাদামী বামন নক্ষত্র সবাই জন্মের শুরুতে আকারে বড়ই থাকে, কিন্তু পড়ে তাদের নিজের গ্র্যাভিটির জন্যই সংকুচিত হয়। জন্মের সময় ভর যত কম থাকে আকারে তত ছোট হয় এবং সংকুচিত হতে তত বেশী সময় নেয়। লাল বামনের চেয়ে কম ভর থাকায় বাদামী বামন নক্ষত্র সংকুচিত হতে বেশী সময় নেয়। যেসব বাদামী বামন নক্ষত্র যথেষ্ট উজ্জ্বলতা দেখায় সেগুলি আসলে সবচেয়ে ছোট লাল বামনের চেয়ে আকারে বড়।এখন যদি মেইন সিকুয়েন্স স্টার থেকে কম বয়েসী বাদামী বামন নক্ষত্রের আকার নিম্নক্রমে সাজানো হয় তবে উজ্জ্বল হলুদ সূর্যের পর কম উজ্জ্বল লাল বামন নক্ষত্র আসবে, সবশেষে আসবে বাদামী বামন নক্ষত্র। ডেইটেরিখ পদার্থবিজ্ঞানের একটি সুত্র স্টেফান-বোল্টজম্যান ল'র সাহায্যে উজ্জ্বলতা ও তাপমাত্রার মান বসিয়ে সবগুলি নক্ষত্রের ব্যাস বের করে। উজ্জ্বলতা বের করতে হলে লাল ও বাদামী বামন নক্ষত্রের দূরত্ব সঠিকভাবে জানতে হবে। তাপমাত্রার মান বের করা হয় ইনফ্রারেড রশ্মির সাহায্য। এবার তাপমাত্রার বিপরীতে ব্যাসের একটি গ্রাফ তৈরি করেন ডেইটেরিখ।তিনি বলেন "এই গ্রাফ দেখে আপনার নিঃশ্বাস এক মুহূর্তের জন্য হলেও থমকে যাবে। এতে দেখা যায় সবচেয়ে ছোট নক্ষত্রের ব্যাস সূর্যের মাত্র ৮.৬%, যা শনির সমান।" যে নক্ষত্রের আকার এত ছোট তার নাম 2MASS J0523-1403, সূর্য থেকে প্রায় ৪০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। ডেইটেরিখের মতে তারাটি ব্যর্থ ও সফল নক্ষত্রের একদম সীমান্তে। 

    যেহেতু এর ভর কম তাই এর উজ্জ্বলতাও কম। এর অবস্থান যদি সূর্যের কাছে হত তবে এর উজ্জ্বলতা পূর্ণিমার চাঁদের চেয়েও কম হত। সূর্য এক ঘণ্টায় যে শক্তি তৈরি করে সমপরিমাণ শক্তি এই নক্ষত্রের তৈরি করতে এক বছর লাগবে। আর যেহেতু এর ভর সূর্যের মাত্র ৮% তাই এর জীবনকাল হবার কথা কম করে হলেও ১২ ট্রিলিয়ন বছর। জীবনের শেষের দিকে যত যাবে, এর তাপমাত্রা ও উজ্জ্বলতা বাড়তে থাকবে সেই সাথে হাইড্রোজেন হিলিয়ামে পরিবর্তিত হতে থাকবে। এক সময় এর রং হবে কমলা, কিন্তু সূর্যের উজ্জ্বলতার ১% ও অর্জন করতে পারবেনা। তারপর এটি ঠাণ্ডা ও অনুজ্জ্বল হয়ে যাবে। নক্ষত্রটির বর্তমান তাপমাত্রা ২০৭৫ ডিগ্রী কেলভিন যেখানে সূর্যের ৫৭৮০। কিন্তু তত্ত্বীয় মডেল অনুসারে লাল ও বাদামী বামন নক্ষত্রের সীমান্ত আরও কম তাপমাত্রায় হবার কথা। 

    ডেইটেরিখের পরবর্তী পরিকল্পনা সূর্যের কাছকাছি আরও কিছু নক্ষত্র পর্যবেক্ষণ করা, কিন্তু এটা শেষ করতে কয়েক বছর লেগে যাবে। কিন্তু মহাকাশের কথা চিন্তা করলে এটি খুবই ক্ষুদ্র সময়কাল। 

    No comments

    Post Top Ad

    Post Bottom Ad