আচ্ছা, জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা নক্ষত্র বা গ্যালাক্সী গুলোর দূরত্ব কি করে মাপে?
এই নক্ষত্রটি এত আলোকবর্ষ দূরে।
ঐ গ্যালাক্সী অত আলোকবর্ষ দূরে। মহাকাশের শুরু এত আলোকবর্ষ দূরে। কিন্তু
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এসব জানে কি করে?
আমি একটি স্থায়ী অবস্থানে আছি
যেখান থেকে এমন একটি বস্তুর কথা বলছি যেটি অচিন্তনীয় দূরত্বে অবস্থান করছে। এটা
কল্পনা করা প্রায় অসম্ভব যে আমাদের মহাকাশ আসলে কতটা বড়। আমাদের মস্তিষ্ক অনেক
কিছুর সাহায্য কাছাকাছি দূরত্বের কিছু সঠিক ভাবে কল্পনা করতে পারে। আমরা ১০০
কিলোমিটার দূরত্বের ব্যাপারটা বুঝতে পারি কারণ আমরা কোনভাবে এই দূরত্ব অতিক্রম
করতে পারি বা ঐ দূরত্বে পৌছাতে পারি।
কিন্তু মহাকাশ আসলেই বড়। আমরা
অনেকেই চিন্তাও করতে পারিনা এর আকার কত বড়, মাপা তো দূরের কথা। তাহলে
জ্যোতির্বিদেরা কিভাবে বের করেন মহাকাশের কোন জিনিসটা কতদূরে আছে? তাহলে কি সব ভাঁওতাবাজি?
জ্যোতির্বিদেরা খুবই চতুরতার সাথে কিছু পদ্ধতি ব্যবহার করেন মহাকাশের বিভিন্ন জিনিসের দূরত্ব বের করার জন্য। একেটি জিনিসের জন্য এক একটি পদ্ধতি। আরও পরিস্কার করে বলতে গেলে তারা ত্রিকোণমিতি ব্যাবহার করেন। কোণকে ব্যবহার করেন দূরত্বের এই ধাঁধার উত্তর বের করার জন্য। সেই সাথে কিছু প্রমাণ সংখ্যা, যেমন কোন নির্দিষ্ট নক্ষত্র একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ আলো বিকিরণ করে, যা থেকে বলা যায় নক্ষত্রটি কত দূরের। খুব দূরের জিনিসের দূরত্ব মাপতে মহাকাশের প্রসারতার হার ব্যবহার করেন। ভাগ্যক্রমে এসব পদ্ধতি একটার সাথে আরেকটা ব্যবহার করা যায়। তাই আপনি কাছের কোন জ্যোতিষ্কের দূরত্ব বের করতে ত্রিকোনমিতি ব্যবহার করতে পারেন। আমাদের সৌরজগৎ ও সৌরজগতের কাছাকাছি জ্যোতিষ্কের দূরত্ব বের করতে মূলত ত্রিকোণমিতিই কাজে লাগে।
জ্যোতির্বিদেরা প্রথমে বছরের একটি সময়ে একটি নক্ষত্রের অবস্থান বের করেন। এরপর ছয় মাস পর পৃথিবী যখন আগের অবস্থানের ঠিক বিপরীত দিকে যায় তখন আরেকবার ঐ নক্ষত্রের অবস্থান পরিমাপ করা হয়। দেখা যায় যে নক্ষত্রটির অবস্থানের খুব সামান্য পরিবর্তন ঘটেছে। এতাকে প্যারালাক্স বলে। আমরা পৃথিবী কক্ষপথের এক অবস্থান থেকে তার বিপরীত অবস্থানের দূরত্বের পরিমাণ জানি।নক্ষত্রটির অবস্থানের খুব সামান্য পরিবর্তনের কারণে এটি পৃথিবীর নতুন অবস্থানের সাথে একটি কোণ তৈরি করবে। সেই সাথে একটি ত্রিভুজের সৃষ্টি হবে। এই ত্রিভুজের অতিভুজই পৃথিবী থেকে নখত্রটির দূরত্ব। উপরের ছবিটা দেখুন।
আমি নিশ্চিত যে এই পদ্ধতির একটি
ভুল বের করতে পারবেন। কারণ যেসব নক্ষত্র পৃথিবী থেকে অনেকে দূরে অবস্থিত সারা বছর
তাদের অবস্থানের খুব বেশী পরিবর্তন হয়না বললেই চলে। এ জন্য অন্য একটি পদ্ধতি
ব্যবহার করা হয় বেশী দূরের নক্ষত্রের দূরত্ব মাপার জন্য। এজন্য একটি প্রমাণ
নক্ষত্র বা স্ট্যান্ডার্ড ক্যান্ডেল ব্যবহার করা হয়। যার নাম সেফিড ক্যান্ডেল।
সেফিড হল একটি বিশেষ ধরণের নক্ষত্র। জ্যোতির্বিদেরা জানেন নক্ষত্রটি কোন দূরত্বে
থাকলে তার উজ্জ্বলতা বেশী দেখায়, কোন দূরত্বে থাকলে কম দেখায়। আপনি যদি সেফিড'টির জ্বলা-নেভার মাঝের বিরিতির
সময় বের করতে পারেন তবে তার প্রমাণ উজ্জ্বলতাও বের করতে পারবেন, সেই সাথে দূরত্ব। এই সব সেফিড
নক্ষত্র আপনাকে ঐ গ্যালাক্সীর দূরত্ব বলে দেবে।
যদি জ্যোতিষ্কটি চল্লিশ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের হয় তবে অন্য পদ্ধতি ব্যাবহার করতে হবে। একটি বিশেষ ধরণের বাইনারী নক্ষত্রের সিস্টেমে একটি নক্ষত্র তার জীবন শেষে সাদা বামনে পরিণত হয়, অন্যটি টিকে থাকে। সাদা বামন নক্ষত্রটি তার সঙ্গী নক্ষত্রকে খেতে শুরু করে। এই খাওয়া শেষ হয় না যতক্ষণ না সঙ্গী তারাটির ভর সূর্যের ১.৪ গুণ না হয়। এই সময় সঙ্গী নক্ষত্রটি টাইপ 1A সুপারনোভা হিসেবে বিস্ফোরিত হয়। বিস্ফোরণ এতটাই প্রচন্ড হয় যে মহাকাশের অর্ধেক অংশ থেকে দেখা যায়। যেহেতু এই ধরণের নক্ষত্র গুলো সব সময় একই ভর নিয়ে বিস্ফোরিত হয় তাই আমরা এর দূরত্ব বলতে পারি একই সাথে প্রকৃত উজ্জ্বলতাও।
আরও দূরের জ্যোতিষ্কের দূরত্ব বের করতে হাবল ধ্রুবক ব্যবহার করা হয়। মহাকাশের প্রসারণ থেকে জ্যোতির্বিদ এডউইন হাবল এই ধ্রুবক আবিষ্কার করেন। টেলিস্কোপ দিয়ে যত দূরে দেখার চেষ্টা করা হয়, দেখা যায় যে দূরের ঐসব জ্যোতিষ্ক ক্রমান্বয়ে দূরে সরে যাচ্ছে। দূরের ঐ সব গ্যালাক্সী থেকে আসা আলোর রেডশিফট থেকে বলা যায় যে গ্যালাক্সীটি কত দ্রুত দূরে সরে যাচ্ছে। এই হার থেকে বের করা হয় গ্যালাক্সীটি কত দূরে।
আরও দূরের বস্তুর দূরত্ব বের করতে আপনাকে বের করতে হবে কসমিক মাইক্রোওয়েভ রেডিয়েশনের মাত্রা। এটাই আমাদের সীমা যতদূর পর্যন্ত এখন আমরা মাপতে পারি।
জ্যোতির্বিদেরা সব সময়ই বিভিন্ন ধরণের স্ট্যান্ডার্ড ক্যান্ডেল নক্ষত্র খোঁজার চেষ্টা করেছেন সেই সাথে দূরত্ব মাপার বিভিন্ন চতুর সব উপায় বের করেছেন। জ্যোতির্বিজ্ঞানের অন্যতম কঠিন কাজ এই দূরত্ব সঠিকভাবে পরিমাপ করা। তাদেরকে ধন্যবাদ দেয়া উচিত। কারণ তাদের জন্য আমরা অন্তত অনুমান করতে পারি যে আমাদের এই মহাকাশ কতটা বিশাল।
জ্যোতির্বিজ্ঞানের কোন বিষয়টি আপনার কাছে সবচেয়ে কঠিন লাগে? মন্তব্য করুন কমেন্ট সেকশনে।
এন্ড্রুমিডা গ্যালাক্সি খালি চোখে দেখা।
ReplyDeleteIt's really amazing to know and I really appreciate this article.
ReplyDelete