Header Ads

  • সর্বশেষ

    প্লুটো'র জমে থাকা হার্ট থেকে আমরা কি শিখতে পারি?

    ১৮ই ফেব্রুয়ারী, ১৯৩০। হ্যাঁ, ৮৭ বছর আগের কথা। ফ্ল্যাগস্ট্যাফ, আরিজোনা'র লোয়েল অবজারভেটরীর একজন টেলিস্কোপ অপারেটর ক্লাইড টমবাউ। একটা একটা করে ফটোপ্লেট ওলটাচ্ছিলেন। গত কয়েকমাস ধরে যা খুঁজছিলেন সেটা খুঁজে পেয়েছেন তিনি। 

    সে সময় টমবাউয়ের বয়স ছিল মাত্র ২৪। তাকে নতুন গ্রহ খুঁজে বের করার মত পরিশ্রমের কাজ দেয়া হয়েছিল। প্রতি রাতে সারারাত ধরে আকাশের আলোকবিন্দুগুলির ছবি তুলতেন আর দিনের বেলায় আগের কয়েক রাতে তোলা ছবি গুলিতে আলোকবিন্দুর অবস্থানের পরিবর্তন খুজতেন। একেকটা ছবিতে হাজার দশেকের বেশী আলোকবিন্দু থাকত। বেশীরভাগেরই অবস্থানের তুলনামূলক কোন পরিবর্তন পাওয়া যেত না। কিন্তু একটি বিন্দুর অবস্থানের সামান্য পরিবর্তন তিনি খুঁজে পেলেন। টমবাউ বলেন "আমি জানতাম এটাই সেই গ্রহ।" 
    ক্লাইড টমবাউয়ের নোটবুক।
    টমবাউ আসলে প্রস্তাবিত গ্রহ প্ল্যানেট এক্স খুঁজছিলেন। গণিত বলছিল এর ভর পৃথিবীর কয়েকগুন হবে। প্ল্যানেট এক্স এখনও খুজছেন বিজ্ঞানীরা। এটা ছিল প্লুটো। একটি জ্যোতিষ্ক খুবই ছোট, গ্রহের সংজ্ঞাতেই পড়েনা। ধারণার চেয়ে এটা এতটাই ছোট ছিল টমবাউ প্রথমে আলোকবিন্দুটি দেখতেই পাননি। তিনি হয়ত সত্যিই এটা খুঁজে পেতেন না যদি প্লুটোয় একটা জায়গা না থাকত। তাঁর উজ্জ্বল হার্ট। 
    প্লুটো'র হার্ট। অন্য নাম টমবাউ রেজিও। বামন গ্রহটির গায়ে প্রায় ৯৯০ মাইল প্রশস্ত একটি এলাকা হার্ট আকৃতির। আমরা পৃথিবীর বাসিন্দারা প্রথমবারের মত এটা স্পস্ট করে দেখতে পাই ২০১৫ সালে। নাসার হরাইজোন স্পেসক্র্যাফটের বদৌলতে। যখন ছবিটা প্রথম আসে নাসার ওয়েবসাইটে এভাবে বলা হয় " প্লুটো পৃথিবীকে তাঁর ভালবাসার ছবি পাঠিয়েছে।" ব্যাঙ্গচিত্রও বেরিয়েছিল যে প্লুটো তাঁর হার্ট দেখিয়ে আবার গ্রহের মর্যাদা ফেরত চাচ্ছে।  

    কিন্তু জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও ভূতত্ত্ববিদদের কাছে এই হার্ট মানে অনেক কিছু। প্লুটো যে একটা সময় জীবন্ত ছিল এটা তাঁর প্রমাণ। এর পশ্চিম দিকটার নাম স্পুটনিক প্ল্যানিটিয়া, বিশাল একটা এলাকা যার সম্পূর্ণটা তৈরি নাইট্রোজেন বরফের। প্লুটো'র গড় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রী কেলভিন। চলন্ত গ্লেসিয়ারের জন্য খুবই উপযুক্ত। সেখানে নাইট্রোজেনের প্রপাতও থাকতে পারে। থাকতে পারে অসংখ্য আইস ভলক্যানো। এই এলাকায় কোন ক্রেটার নেই। জায়গাটি খুবই মসৃণ, ধারণা করা হয় এমনটা গত ১০ মিলিয়ন বছর ধরেই। হয়ত আগামী দশকের মাঝেই আমরা দেখতে পাব এই নাইট্রোজেনের ঝর্না। 
    জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এখনও অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছেন কিভাবে এই নাইট্রোজেনের গ্লেসিয়ার জীবন্ত হয়। প্লুটোর অবস্থান কাইপার বেল্টে, যেখানে প্লুটো ছাড়াও আরও তিনটি বামন গ্রহ আছে। আগের গবেষণায় দেখা গেছে এসব বামন গ্রহ এতটাই জমে গেছে যে এরা কোনভাবেই জীবন্ত হতে পারবেনা। কিন্তু প্লুটোর হার্ট আবিষ্কারের পর এই ধারণা বদলে গেছে।  
    প্রায় আশি বছর আগে প্লুটোর এই হার্ট আমাদের ইশারা করেছিল সৌরজগতের শেষ প্রান্তে দেখার জন্য। এখন আরও পর্যবেক্ষণ আমাদের হয়ত আরও দূরে দেখার জন্য আগ্রহী করে তুলবে। 

    No comments

    Post Top Ad

    Post Bottom Ad