আপনার বাড়ীর ছাদেই হয়ত জমা হয়ে আছে মহামূল্যবান উল্কাখন্ড।
বাড়ীর ছাদে প্রচুর ময়লা জমা হয়, সেগুলো পরিস্কার করা ব্যাপক ঝক্কি ঝামেলার কাজ। সেখানে ধুলাবালি, পাতা এমনকি অনেক প্রানীও বাসা বাঁধে। বছরে অন্তত একবার হলেও সেগুলি পরিস্কার করতে হয়। খুব সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে যে ঐ সব ধুলাবালির মাঝে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মাইক্রোমিটিওরাইটও জমা হয়। একটি বড় আকৃতির গ্রহাণু বা উল্কা যখন পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করে তখন বায়ুমন্ডলের সাথে প্রচন্ড গতিতে ঘর্ষণের ফলে সেটি জ্বলে ওঠে। এতে ঐ বড় খণ্ডটি চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যায়। বিচূর্ণ হওয়া কিছু খন্ড বায়ুমণ্ডলেই পুড়ে নিঃশেষ হয়ে যায় আবার কিছু সম্পূর্ণ পুড়তে পারেনা। এগুলো মাইক্রোমিটিওরাইট হিসেবে পৃথিবীর মাটিতে জমা হয়।
গত নভেম্বর'২০১৬ তে জিওলজি জার্নালে ইউরোপীয়ান বিজ্ঞানীদের একটি গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়। ঐ প্রজেক্টের নাম ছিল "প্রজেক্ট স্টারডাস্ট"। ঐ দলের বিজ্ঞানীরা নরওয়ের অসলো'ব বাসিন্দাদের তাদের বাড়ির ছাদে জমা হওয়া ময়লা সংগ্রহ করে তাদের কাছে জমা দেবার অনুরোধ জানান। প্রাপ্ত ৬৬১ পাউন্ড ময়লার ভেতর অন্তত ৪৮টি স্যাম্পল পাওয়া গেছে যেগুলি মাইক্রোমিটিওরাইট। এই সব মাইক্রোমিটিওরাইট গুলির ভেতরে ছিল সবচেয়ে বড় ও সাম্প্রতিক মাইক্রোমিটিওরাইট। এখানে বড় বলতে বোঝানো হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ মাইক্রন আকারকে। এক মাইক্রন সমান এক মিটারের দশ লাখ ভাগের এক ভাগ।এগুলো অণুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া দেখা খুবই কষ্টসাধ্য।
"যেসব মাইক্রোমিটিওরাইট পাওয়া গেছে সেগুলির বয়স সর্বচ্চো ৫০ বছর। তাই ধরে নেয়া যায় এগুলি ০-৫০ বছর ধরে পৃথিবীতে অবস্থান করছে।" বলেন প্রজেক্টের প্রধান লারসেন। শহরেও যে মাইক্রোমিটিওরাইট পাওয়া যেতে পারে তা এতদিন কল্পকাহিনী বলে উড়িয়ে দেয়া হত। এই গবেষণায় প্রমাণিত হল যে মাইক্রোমিটিওরাইট সংগ্রহের জন্য এখন আর সবসময় সুদূর এন্টার্কটিকা বা আফ্রিকার কোন মরুভূমিতে যেতে হবেনা।
ধরা হয় প্রতি বছর ১০০ বিলিয়নেরও বেশী মাইক্রোমিটিওরাইট পৃথিবীতে পড়ে। তাই যদি আপনি মহাকাশ পছন্দ করেন কিন্তু আলসেমীর জন্য বাড়ি পরিস্কার করতে চান না, তাহলে পরিস্কার করতে একটু হলেও আগ্রহ পাবেন।
No comments