শরীরের মৌলিক পদার্থগুলির উৎপত্তি।
মহাকাশের শুরু হয় বিগ ব্যাং থেকে। যখন মহাকাশের বয়স মাত্র কয়েক মিনিট ছিল, আমাদের শরীরের মৌলিক পদার্থগুলির প্রোটন, নিউট্র্ন ও ইলেক্ট্রনের প্রথম উদ্ভব হয়। আমরা আসলে খুবই পুরাতন জিনিস দিয়ে তৈরি। যদিও এসব পার্টিকেল বিগব্যাং'র পরপরই তৈরি হয়েছে তারপরও এখন যেসব পরমাণু আমরা চিনি তার সাথে এগুলো সংযুক্ত নয়।
মহাকাশের শুরুর দিকের পদার্থের বেশীরভাগই হাইড্রোজেন এবং প্রায় ২৫ ভাগ ছিল হিলিয়াম। আমাদের শরীরে হিলিয়াম নেই, কিন্তু শরীরের সমস্ত হাইড্রোজেন সেই শুরুর দিকের তৈরি হাইড্রোজেনই। প্রমাণ আছে যে বিগ ব্যাং'র সময় হিলিয়ামের চেয়ে ভারী পদার্থের সৃষ্টি হয়নি। বিগ ব্যাং'র কয়েকশত মিলিয়ন পর পদার্থ একীভুত হয়ে প্রথম গ্যালাক্সীর সৃষ্টি হয়।
নক্ষত্রের কেন্দ্রে নিউক্লিয়ার রিএকশন হয় যার মাধ্যমে কম ভরের মৌলিক পদার্থ তুলনামূলক বেশী ভরের পদার্থ তৈরি হয়। যুগের পর যুগ নক্ষত্র তার কেন্দ্রে এই প্রক্রিয়া চালিয়ে যায় । এক সময় কার্বন , নাইট্রোজেন ও অক্সিজেনের মত তুলনামূলক ভারী মৌলিক পদার্থের উৎপাদন হয়। এমনকি হাড়ের ক্যালসিয়ামও ঐসব নক্ষত্রের কেন্দ্রেই তৈরি।
খুবই বেশী ভরের নক্ষত্রের কেন্দ্রে লোহা তৈরি হয়। কিন্তু এসব নক্ষত্র যখন সুপারনোভায় পরিণত হবার সময় নিজের গ্র্যাভিটির কারণে নিজের কেন্দ্রে সংকুচিত হতে থাকে তখন অনেকখানি লোহা হারিয়ে ফেলে। পৃথিবী ও আমাদের শরীরের বেশীরভাগ লোহা তৈরি হয়েছে টাইপ আইএ সুপারনোভা বিস্ফোরণে কার্বন ফিউশনের সময়। টাইপ টু সুপারনোভা বিস্ফোরণের সময় যে তেজস্ক্রিয় পদার্থ নির্গত হয় তার রেডিওএকটিভ ডিকেই থেকেও কিছু লোহা তৈরি হয়। লোহার চেয়ে ভারী পদার্থ যেমন স্বর্ণ, রূপা ও আয়োডিন তৈরি হতে পারে দ্রুত নিউক্লিয়ার রিএকশন, যেমন সুপারনোভা বিস্ফোরণ। আয়োডিন আমাদের থাইরয়েড গ্ল্যান্ড ঠিক মত কাজ করার জন্য খুবই দরকারী। তার মানে হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম বাদে আমাদের শরীরের সব মৌলিক পদার্থের সৃষ্টি কোন না কোন নক্ষত্র থেকেই।
আমাদের গ্যালাক্সী মিল্কিওয়ে প্রায় ১০০ বিলিয়ন নক্ষত্রের সমন্বয়ে তৈরি। প্রায় পাঁচ বিলিয়ন বছর আগে গ্যাস ও ধুলার মেঘ থেকে সূর্যের সৃষ্টি।আমাদের শরীরের মৌলিক পদার্থগুলি তখন ঐ মেঘের অংশ ছিল।
জিওলজিস্ট প্রেস্টন ক্লাউড বলেন " নক্ষত্র ধ্বংস হয় বলেই আমরা তৈরি হতে পেরেছি।"
No comments