Header Ads

  • সর্বশেষ

    মহাকাশে বংশবিস্তারঃ অন্য গ্রহে বসতি স্থাপনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাঁধা।

    নাসার এস্ট্রোনট হয়ে যদি মহাকাশে যেতে চান তবে আপনার কারডিওভাস্কুলার ডিজঅর্ডার থাকা যাবেনা, ল্যাসিক না করার ইতিহাস থাকা যাবেনা এবং কোন অবস্থাতেই প্রেগন্যান্ট হওয়া যাবেনা। কারণ আমরা প্রায় সকলেই জানি মহাকাশে মানুষের শরীরের সাথে কি কি অদ্ভুত ব্যাপার ঘটে। চোখ সমতল হয়ে যায়, হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়,শরীর তরলের পরিবহন ব্যবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে, পায়ের উপরের অংশে সেলুলোজ জমা হয় আর পায়ের পাতা বাচ্চাদের মত মসৃণ হয়ে যাতে,আমরা এখনও জানিনা মহাকাশে বাচ্চা পেতে থাকার সময় তার কি কি পরিবর্তন হবে।  

    নাসা এই রহস্য বের করার জন্য এখনও প্রস্তুত নয়। তাই নাসার মেডিক্যাল স্ট্যান্ডার্ডস ফর স্পেসফ্লাইট এর ধারাগুলিতে প্রেগন্যান্ট নারীদের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। এমনকি তারা প্রস্তুতির অনুশীলনও করতে পারেন না। স্পেসক্র্যাফটের উৎক্ষেপণের ১০ দিন আগে তাদের প্রেগন্যান্সীর পরীক্ষা দেওয়া লাগে। ২০০১ সাল থেকে ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে আরও অদ্ভুত জিনিস করে। তারা সেখানে DIY প্রেগন্যান্সী টেস্টের ব্যবস্থা রাখে যদি কেউ সেখানে প্রেগন্যান্ট হয়ে পড়ে তা বের করার জন্য। এটা নিয়ে একটা মুভি হয়েছিল। নাম "The Space Between Us"। মুভিতে দেখানো হয় মঙ্গলে যাত্রা শুরু করার পর এক এস্ট্রোনট বুঝতে পারে সে প্রেগন্যান্ট। সে বাচ্চা জন্ম দেবার সময়কার জটিলতায় মারা যায়। কিন্তু তার জন্ম দেয়া সন্তান গার্ডনার বেঁচে থাকে এবং মঙ্গলে তৈরি হওয়া প্রথম মনব কলোনিতে সে কৈশোরে পৌঁছে যায়।


    নাসাকে অবশ্য এখন ঐ মুভিটির অবস্থার সাথে মানিয়ে নিতে হচ্ছেনা। কিন্তু এমন ঘটনা তো ভবিষ্যতে হতেও পারে। তাই বিজ্ঞানীরা আগে থেকেই বের করতে চাচ্ছেন শূন্য গ্র্যাভিটি প্রেগন্যান্সীতে কি ধরণের প্রভাব ফেলবে। এর সাথে কসমিক রেডিয়েশনের প্রভাবও বের করা হবে। তখন বোঝা যাবে আদৌ মহাকাশ বাচ্চা জন্মদানের জন্য উপযুক্ত কিনা। এটা জেফ্রী আলবার্টস সারা জীবনের কাজ। তিনি ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটির বায়োলজিক্যাল এন্ড ব্রেইন সায়েন্সেস বিভাগের একজন প্রফেসর। তিনি প্রায় এক দশক খরচ করেছে নাসার সাথে। কাজের বিষয় ছিল প্রেগন্যান্ট ইঁদুর মহাকাশে পাঠালে তাদের কি হয়। এই গবেষণায় দেখা যায় যে ইঁদুরগুলি জিরো গ্র্যাভিটিতে তাদের ভেস্টিবুলার সিস্টেম ভালো করে তৈরি হতে পারেনা। ভেস্টিবুলার সিস্টেম আমাদের শরীরের কানের ভেতরে থাকে, শরীরের ব্যালান্স নিয়ন্ত্রন করে।     

    আলবার্ট বলে "জানিনা এই ফলাফল কিভাবে মানুষের সাথে সামঞ্জস্য হবে কি না, কিন্তু এটা আমাদের একটা ধারণা দেয় যে কি হতে পারে। সেই সাথে আমাদের মহাকাশে মানুষ পাঠাতে সতর্কও করে।"
    আলবার্ট এর গবেষণা ইউনাইটেড স্টেটস ও অন্যান্য দেশের মহাকাশে প্রানীর প্রজননের উপর গবেষণার অনেকগুলির একটা। এমন গবেষণা সরীসৃপ, পাখি, মাছ, স্যালামান্ডার এমনকি সী অর্চিনের উপরও হয়েছে। মনে হতে পারে মহাকাশে সম্পূর্ণ একটা চিড়িয়াখানা পাঠানো হয়েছিল।

    প্রজননের অনেকগুলি স্তর আছে। কনসেপশন, গেস্টেশন,প্যারেন্টাল ডেভেলপমেন্ট, বার্থ, ল্যাক্টেশন, সর্বশেষ ডেভেলপমেন্ট টু এডাল্টহুড। মহাকাশের পরিবেশ এদের সবগুলি স্তরে প্রভাব ফেলতে পারে। কসমিক রেডিয়েশন স্পারম কাউন্ট কমিয়ে দিতে পারে যা কনসেপশনের সম্ভাব্যতা কমিয়ে দেবে। গ্র্যাভিটির অভাবও কম যায়না। স্পারম কাউন্ট কমে যাওয়া, স্পারম এবনরমালিটি, অণ্ডকোষের আকার পরিবর্তন সবই কম গ্র্যাভিটির বাজে প্রভাব। এক গবেষণায় দেখা গেছে ছয় মাস মহাকাশে থাকার পর পুরুশ ইঁদুরের অণ্ডকোষের আকার এতটাই কমে গেছে যে সে আর স্পারমই তৈরি করতে পারছেনা। রেডিয়েশন মেয়েদের প্রজনন তন্ত্রেও বাজে প্রভাব ফেলে। ওভারিয়ান ক্যান্সার ও ইউরেটারী ক্যান্সারের ঝুঁকি প্রচন্ড রকম বেড়ে যায় যা উর্বরতায় খুবই বাজে প্রভাব ফেলে। 

    অন্য একটি গবেষণায় পাওয়া গেছে যে জিরো গ্র্যাভিটিতে কনসেপশন হলেও গর্ভ ঠিক মত তৈরি হয়না। একজন জাপানী গবেষক দেখিয়েছেন যে গর্ভের কোষ মাইক্রোগ্র্যাভিটিতে ঠিকমত বিভাজিত ও বেড়ে ওঠেনা। যদি রেডিয়েশনে উন্মুক্ত থাকে তবে শরীরে ত্রুটি নিয়ে জন্মাতে পারে। আরেক গবেষণায় দেখা গেছে মাইক্রোগ্র্যাভিটিতে গর্ভে থাকা বাচ্চা ঠিকমত বাড়তে পারেনা।বাচ্চার পায়ের মাংশপেশী সংকুচিত হয়, হার লম্বা হয়ে যায়, বাম নিলয়ের আকার বেড়ে যায়। এ ধরণের অসামঞ্জস্যতা নিয়ে জন্মালে বাচ্চা হয়ত বসতেও পারবেনা। এখন পর্যন্ত কোন বাচ্চা মহাকাশে জন্ম নেয়নি। তাই স্বাভাবিক বেবি ডেলিভারী সম্ভব কিনা তা এখনও জানা যায়নি। মাইক্রোগ্র্যাভিটিতে খুবই অদ্ভুত ভাবে বাচ্চার শরীরের বৃদ্ধি করে। মাংশপেশী হালকা হয়ে যাওয়া, হারে ঘনত্ব কমে যাওয়া, যেটা বাচ্চা জন্ম দেবার সময় জটিলতা তৈরি করতে পারে। আরেকটি গবেষণায় দেখা যায় যেসব ইঁদুর গুলি জিরো গ্র্যাভিটিতে ছিল তাদের বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হবার সময় কোষের মাঝে যোগাযোগের ব্যাঘাত ঘটে। এ কারণে বাচ্চা ভূমিষ্ঠ করা তাদের জন্য খুব কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।    

    যদি একটি বাচ্চা এতসব বিপদ পেরিয়ে সুস্থভাবে জন্মও নেয়, বাইরের মহাকাশ তাদের বেড়ে অথার জন্য মোটেও অনুকূল জায়গা নয়। এজন্য আবারও ইঁদুরের উপর গবেষণার ফলাফলের দিকে তাকাই। ১৯৯৮ সালে একটি নাসা মিশনে খাবার দেয়া, ময়লা পরিস্কার করা ও খাঁচার কারণে মৃত্যুহার অনেকে বেশী দেখা যায়। আর পৃথিবীর বাইরের এই প্রতিকূল পরিবেশ যেমন অসহ্য কম বা বেশী তাপমাত্রা, উচ্চমাত্রার রেডিয়েশন এবং গ্র্যাভিটির অনুপস্থিতি একটি নতুন জন্ম নেওয়া বাচ্চার সুস্থ স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠা খুবই দুষ্কর। .

    যদিও বিজ্ঞানীরা এখনও মহাকাশে নির্ভুল প্রজননের ব্যাপারে আশা হারিয়ে ফেলেন নি। যখন আমরা এই সমস্যা সমাধানর করতে পারব তার হয়ত কয়েক দশকের মাঝেই অন্য গ্রহে মানব জাতি সুস্থ ও সুন্দরভাবে বসবাস করতে শুরু করতে পারব।    

    No comments

    Post Top Ad

    Post Bottom Ad