আকাশ দেখাঃ পর্ব-২। নক্ষত্রের ভেতরটা কেমন?
আমরা সকলেই জানি আকাশে মিটিমিটি করা আলোকবিন্দুগুলির বেশিরভাগই একেকটা নক্ষত্র। এই অসাধারণ ঝিকিমিকি নক্ষত্রগুলির প্রত্যেকেই মূলত হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম নামক মৌলিক পদার্থের তৈরি। প্রতিটি পরমাণু গ্র্যাভিটি নামের অদ্ভুত শক্তির কারণে একত্রিত হয়ে এসব নক্ষত্রের সৃষ্টি করেছে। এতে এতটাই বেশী পদার্থের জমায়েত হয়েছে এর গ্র্যাভিটি প্রচন্ড আকার ধারণ করেছে আর কেন্দ্রের তাপমাত্রা প্রায় ১৫ মিলিয়ন ডিগ্রীর কাছাকাছি উঠেছে।
প্রমানুর কেন্দ্রকে নিউক্লিয়াই বলে। এত উচ্চ তাপমাত্রায় হাইড্রোজেন পরমাণুর নিউক্লিয়াই প্রচন্ড গতিশক্তি অর্জন করে। এই গতিতে চলমান দুটি হাইড্রোজেন নিউক্লিয়াই সংঘর্ষ করে মিলিত হয়ে একটি হিলিয়াম নিউক্লিয়াই তৈরি করে। এই ঘটনাকে বলে নিউক্লিয়ার ফিউশন। এতে প্রচুর শক্তির উৎপাদন ঘটে। উৎপন্ন হওয়া এই প্রচন্ড শক্তি বাইরে বেরিয়া আসতে চায়। কিন্তু বাইরের দিকে থাকা প্রচুর হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম আবার কেন্দ্রে গ্র্যাভিটির কারণে কেন্দ্রের দিকে যেতে চায়। এই দুই বিপরীতমুখী বল একটি আরেকটি সামঞ্জস্যতায় আনে। ফলে একটি নক্ষত্রের আকার সব সময় ঠিক থাকে। সংঘর্ষের ফলে আরও দুই ধরণের শক্তির উৎপত্তি হয়, আলো ও তাপ। এরা কিছুতেই বাধাপ্রাপ্ত হয়না। নক্ষত্রের বাইরে চলে এসে খোলা মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ে।
পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের নক্ষত্র হল সূর্য। যেসব নক্ষত্র আমরা খালি চোখে আকাশে দেখি তাদের প্রায় সবাই সূর্যের চেয়ে বড়। তাদের উজ্জ্বলতা অনেক বেশী বলেই আমরা খালি চোখে দেখতে পাই। অসংখ্য নক্ষত্র আছে যেগুলো সূর্যের চেয়ে আকারে ছোট এবং সূর্যের চেয়ে অনেক নিষ্প্রভ। একটি বড় নক্ষত্রের উদাহরণ হল ইটা ক্যারিনা। এর ভর সূর্যের চেয়ে প্রায় ১০০ গুণ বেশী এবং প্রায় ৫ মিলিয়ন গুণ বেশী শক্তির বিকিরণ করে। বড় ভারী নক্ষত্রের কেন্দ্র হিলিয়ামের চেয়ে ভারী মৌলিক পদার্থ যেমন কার্বন, অক্সিজেন ও নাইট্রোজেন তৈরি করতে পারে।
কোন নক্ষত্রের কেন্দ্র অনেকটা পেঁয়াজের মত। একটা স্তরের পড়ে আরেকটা স্তর। সাধারণত একটি নক্ষত্রের তিনটি স্তর থাকে।
- কোরঃ যেখানে নিউক্লিয়ার ফিউশন হয়।
- রেডিয়েটিভ জোনঃ কোরের ঠিক উপরের স্তর। কোরে উৎপন্ন হওয়া আলো ও শক্তি এর উপরের স্তরে যায় এই স্তর দিয়ে।
- কনভেকশন লেয়ারঃ এই স্তরের আচরণ অনেকটা ফুটতে থাকা পানির মত।
অনেক বড় নক্ষত্রের কনভেকশন লেয়ার থাকেনা। অনেক ছোট নক্ষত্রের রেডিয়েটিভ জোন থাকেনা। নক্ষত্রের সবচেয়ে বাইরের স্তরকে বলে ফটোস্ফিয়ার।
No comments