বায়োলজী কিভাবে মহাকাশে প্রাণের সন্ধান পেতে সাহায্য করছে?
এস্ট্রোনমি,
প্ল্যানেটারী সায়েন্স এবং বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখাগুলি নানাভাবে প্রাণ খুঁজে পেতে
গবেষণায় ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। কিন্তু যখন আমরা মহাকশে প্রাণ খুঁজছি, সেখানে
বায়োলজীর ভূমিকা কোনও ভাবেই অস্বীকার করা যায় না। যদি আমরা না জানি যে প্রাণ
কিভাবে কাজ করে তবে মহাকাশে প্রাণ আমরা সংজ্ঞায়িত করব কিভাবে?
আমরা মহাকশের
যেখানেই দেখিনা কেন, দেখব সব জায়গাতেই প্রকৃতির সব নিয়মকানুন একই। মহাকাশে পদার্থ
বিজ্ঞানের নিয়মকানুন যেমন সবখানে একই রকম, তেমনই আমরা আশা করি যে রসায়নের যে নিয়ম
পৃথিবীতে আছে একই নিয়ম মহাকাশের সবখানেই আছে। অনেক দূরের বিভিন্ন নক্ষত্র
পর্যবেক্ষণে আমরা প্রমাণ পাই যে, যে রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে আমাদের সৌরজগৎ তৈরি, এই
একই ধরণের রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে আন্তঃনাক্ষত্রিক গ্যাসের মেঘ তৈরি। এর মানে হল
আমাদের পৃথিবীতে এই সব রাসায়নিক পদার্থের যেভাবে সূচনা, মহাকাশের অন্যান্য জায়গাতেও
এর সূচনা বা সৃষ্টি একইভাবে। পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নবিজ্ঞানের নিয়মকানুন মহাকাশের
সব জায়গায় একই হবার কারনেই আমরা মহাকাশে অনেক গ্রহ খুঁজে পাব। এই সব নিয়মকানুন
দিয়েই আমরা বিচার করব কোনটায় প্রাণ থাকার সম্ভবনা বেশী, কোনটাতে কম।
এখন একটা প্রশ্ন।
যেহেতু পদার্থ ও রসায়ন বিজ্ঞানের নিয়মকানুন সম্পূর্ণ মহাকাশে একই, তবে কি মহাকাশের
সবখানে বায়োলজীও একই? যে ধরণের প্রাণ আমরা পৃথিবীতে দেখি, যদি পৃথিবীর বাইরে মহাকাশের
অন্য কোথাও প্রাণ থেকে থাকে তবে কি সমগ্র মহাকাশেই কি একই ধরণের প্রাণ আছে? তার
মানে বায়োলজীর নিয়মকানুনও মহাকাশের সবখানেই এক? যদি তাই হয় তবে পৃথিবীর বাইরে
প্রাণ খুঁজে পাওয়াটা হবে খুবই উত্তেজনাকর এবং ফলপ্রসূ। যদি উত্তর না হয়, তবে প্রাণ
মহাকাশে একটি বিরল ব্যাপার। এমনটা হবার কারণ হল আমরা এখন পর্যন্ত পৃথিবীর বাইরে
কোথাও প্রাণের অস্তিত্ব পাইনি। এখন পর্যন্ত জানিনা যে প্রাণ পৃথিবীতে আছে সেটা
মহাকাশের সবখানেই একই রকম কিনা। আমাদের পৃথিবী থেকে আমরা যে প্রমাণ পাই তা আমাদের
সেটাই মনে করায়। পরীক্ষাগারে জানা যায় পৃথিবীর প্রাথমিক পর্যায়ে যেসব রাসায়নিক
পদার্থের উপস্থিতি ছিল সেগুলি নানা ধরণের রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে জটিল জৈবরাসায়নিক
পদার্থে পরিণত হয়, এমনকি জীবনের অসংখ্য “ইট” যৌগও তৈরি হয়। বস্তুতঃ বিজ্ঞানীরা
বিভিন্ন জৈব যৌগ বিভিন্ন মেটিওরাইটেও পেয়েছেন। বর্ণালীমিতির সাহায্য নক্ষত্রপুঞ্জের
মাঝে অবস্থিত বিভিন্ন গ্যাসের মেঘেও এসব যৌগের উপস্থিতি পেয়েছেন। তাঁর মানে হল
প্রাণের জন্য প্রয়োজনীয় এইসব যৌগ খুবই বিরূপ পরিবেশের মাঝেও ভালভাবেই তৈরি হতে
পারে। আর এই তৈরি হওয়াটা মহাকাশে খুবই সাধারণ ব্যাপার হতেও পারে।
অবশ্যই কিছু
সামান্য জৈব যৌগের উপস্থিতির মানে এই না যে সেখানে প্রাণের উদ্ভব হবে, কিন্তু
পৃথিবীর ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় এইসব রাসায়নিক বিক্রিয়াগুলি বায়োলজী হয়ে ওঠা খুব
একটা কথন ব্যাপার না। পৃথিবীর ভূতাত্ত্বিক ইতিহাস বলে প্রাণের উদ্ভব পৃথিবীতে বেশ
দ্রুতই হয়েছিল। পৃথিবীর এই শুরু দিকের ইতিহাস আমাদের সম্ভবনা দেখায় কিন্তু প্রমাণ
করে না যে, হয়ত মহাকাশের অন্য কোনও জায়গাতেও একই ধরণের প্রক্রিয়া চলমান আছে। যদি
রসায়ন থেকে বায়োলজীতে উত্তরণের সম্ভবনা এত কমই হত তবে হয়ত পৃথিবীতে প্রাণের শুরুটা
হতে আরও অনেক সময় লাগত। তাই পৃথিবীর প্রাথমিক অবস্থা আমাদের ভাবার অনুমতি দেয় যে
প্রাণ যদি পৃথিবীর মত একই পরিবেশ পায় তবে, হয়ত মহাকাশের অন্য কোনও গ্রহে বা
উপগ্রহে খুব তাড়াতাড়িই প্রাণের উদ্ভব হয়েছে বা হচ্ছে।
যদি প্রাণের
উদ্ভবের জন্য সঠিক পরিবেশের প্রয়োজন হয় তবে এখ প্রশ্ন হল সেই সঠিক পরিবেশটা কি এবং
মহাকাশের সেটা কতটা বিরল। সাম্প্রতিক আবিষ্কারগুলি আমাদের বলে মহাকাশে বায়োলজী
খুবই সাধারন ব্যাপার হবার সম্ভবনা আছে। বায়োলজিস্টরা প্রমাণ করতে পেরেছেন যে
মাইক্রোস্কপিক প্রাণ বিভিন্ন ধরণের পরিবেশে টিকে থাকতে পারে এবং বংশবিস্তারও করতে
পারে। এমন সব পরিবেশে এরা বংশবিস্তার করতে পারে যা আমরা কয়েক দশক আগে কল্পনাও করতে
পারতাম না। যেমন, এখন আমরা জানি প্রাণ গভীর সাগরে ভলক্যানিক ভেন্ট, যেখান থেকে
প্রতিনিয়ত মানুষের জন্য বিষাক্ত গ্যাস বের হচ্ছে, সেখানেও টিকে থাকতে পারে।
এন্টার্কটিকার প্রচন্ড ঠাণ্ডার মাঝেও অসংখ্য প্রানীর টিকে থাকা সম্ভব হয়েছে। এমনকি
এক কিলোমিটার বা তারও বেশী গভীরতা থেকে তুলে আনা পাথরখন্ডের ভেতরও প্রাণের অস্তিত্ব
পাওয়া গেছে। আমরা যদি এইসব অদ্ভুত প্রানীদেরকে পৃথিবীর বাইরে অন্য কোথাও যেমন
মঙ্গল বা বৃহস্পতির চাঁদ ইউরোপায় পাঠায় তবে তাদের কিছু অংশ হয়ত টিকে থাকতে পারে। এর
মানে হল প্রাণের জন্য সঠিক পরিবেশের বিস্তারটা অনেক বিশাল। তাই ভবিষ্যতে হয়ত এমনও
কোন গ্রহ বা উপগ্রহে প্রাণ খুঁজে পাওয়া যাবে যেটি পৃথিবী থেকে পরিবেশগতভাবে
সম্পূর্ণই আলাদা।
No comments