Header Ads

  • সর্বশেষ

    আমরা কোথায় প্রাণ খুঁজব?

    পৃথিবীর বাইরে প্রাণ খোঁজার কাজটি আমরা বিভিন্ন ধাপে করতে পারি। তবে এসব ধাপের মাঝে সর্বপ্রথম যে কাজটি করতে হবে তা হল পৃথিবীতে প্রাণের খোঁজ করা। পৃথিবীতে কোথায় কোব পরিবেশে প্রাণের উদ্ভব হতে পারে তা আমরা এখনও শিখছি। অনেক বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ব্যস্ত নতুন নতুন প্রজাতির প্রানী আবিষ্কারের জন্য। আসল কথা হল আমরা যত আমাদের পৃথিবীর প্রাণের ব্যাপারে জানব, তত ভালভাবে পৃথিবীর বাইরের প্রাণ খোঁজার সুবিধা হবে।

    আমাদের সৌরজগতে প্রাণ খোঁজার চেষ্টা।

    পৃথিবীর বাইরে যদি আমরা প্রাণ খোঁজার চেষ্টা করি তবে সবার আগে আমাদের সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহ উপগ্রহের কথাই মাথায় আসবে। আমাদের সৌরজগতে অনেক গ্রহ উপগ্রহ আছে যেখানে প্রাণের উপস্থিতি পাওয়া যেতে পারে। এখানে গ্রহ আছে, বামন গ্রহ আছে যারা সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে। অসংখ্য উপগ্রহ আছে যারা বিভিন্ন গ্রহকে প্রদক্ষিণ করছে। আর আছে অগণিত সংখ্যার গ্রহাণু ও ধুমকেতু।


    উপরের ছবিটিই পরিস্কার করে দিচ্ছে পৃথিবী সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহগুলির চেয়ে কতটা আলাদা। আমাদের পৃথিবীই একমাত্র জায়গা যেখানে পানি তরল অবস্থায় প্রবাহিত হতে পারে। একমাত্র পৃথিবীর পৃষ্ঠেই পানি দিয়ে তৈরি মহাসাগর আছে, যা প্রাণ থাকার ব্যাপারে সরাসরি সূত্র দেয়। পৃথিবীর যেকোনো ধরণের প্রাণের জন্য পানি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদিও আরও কিছু তরল আছে যেখানে প্রাণের উদ্ভব হবার সম্ভবনা আছে।

    একদম প্রাথমিক অবস্থায় আমরা এমন প্রাণ খুঁজছি যা প্রায় পৃথিবীর প্রাণীদের মত। এসব প্রানী পানি বা অন্য কোনও তরলের উপর নির্ভর করে বেঁচে থাকে। সৌরজগতের যত গ্রহ আছে তাদের মাঝে মঙ্গল হল সবচেয়ে সম্ভবনাময় গ্রহ। খুবই নির্দিষ্ট প্রমাণাদি আমাদের কাছে এসে গেছে যার প্রমাণ করে করে এখন যে শুষ্ক প্রাণ শুন্য মঙ্গল আমরা দেখি তাতে এক সময় পানির প্রবাহ ছিল। ফলে হয়ত সে সময় মঙ্গলের বুকে প্রাণের উপস্থিতি ছিল। মঙ্গলে এখনও যথেষ্ট পরিমাণ পানির বরফের মজুদ আছে, সেখানে হয়ত এখনও কিছু প্রাণের অস্তিত্ব থাকতে পারে। হয়ত এমন জায়গাতে লুকিয়ে আছে যেখানে আগ্নেয়গিরির উত্তাপ পানিকে তরল অবস্থায় রাখে।

    মঙ্গল ছাড়া আমাদের সৌরজগতে আর যেসব জায়গাতে প্রাণ খুঁজে পাবার সম্ভবনা আছে সেগুলি হল বিভিন্ন গ্রহের বড় বড় উপগ্রহগুলি। কমপক্ষে ছয়টি উপগ্রহ আছে যেখানে প্রাণ থাকার সম্ভবনা সবচেয়ে বেশী। এর মাঝে বৃহস্পতির চাঁদ ইউরোপার সম্ভবনা সবচেয়ে বেশী। এখন পর্যন্ত যেসব প্রমাণ পাওয়া গেছে তাতে দেখা যায় ইউরোপার কঠিন পানির বরফের পৃষ্ঠের নীচে পানির এক বিশাল মহাসাগর আছে। আর পানির পরিমাণ পৃথিবীর সকল মহসাগরের পানি একত্র করলেও তার চেয়ে বেশী। যেহেতু আমরা মনে করছি যে পৃথিবীতে প্রাণের শুরুটা পানিতেই হয়েছিল তাই হয়ত ইউরোপার পানিতেও প্রাণের শুরুটা হয়েছে এবং টিকেও আছে আমাদের কাছে আবিষ্কার হবার জন্য। বৃহস্পতির আরও দুটি উপগ্রহ গ্যানিমিড ও ক্যালিস্টোতেও পৃষ্ঠের নীচে মহাসাগর থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। প্রাণের সম্ভবনায় চতুর্থ হল শনির উপগ্রহ টাইটান। টাইটানই হল আমাদের সৌরজগতের একমাত্র উপগ্রহ যেখানে স্থায়ী বায়ুমণ্ডল আছে। শনিকে বর্তমানে প্রদক্ষিণ করা ক্যাসিনি স্পেসক্র্যাফটের মাধ্যমে আমরা জেনেছি যে টাইটানের পৃষ্ঠে তরল মিথেনের হ্রদ আছে। টাইটানের মাটির নীচে হয়ত তরল পানি থাকতে পারে, কিন্তু যেকোনো ধরণের পানি যদি এর পৃষ্ঠে থাকে তবে তা জমাটবদ্ধ পাথরের মত হয়ে থাকবে। টাইটানে প্রাণ যদি নাও থাকে তবে সেখানে আকর্ষণীয় জৈব রসায়ন আছে। পঞ্চম ও ষষ্ঠ উপগ্রহ যেখানে পানির উপস্থিতি পাওয়া গেছে সেগুলি হল যথাক্রমে শনির উপগ্রহ এন্সেলেডাস ও নেপচুনের উপগ্রহ ট্রাইটন।

    অন্য নক্ষত্রে প্রাণ খোঁজার চেষ্টা।

    সংখ্যার দিক দিয়ে বিবেচনায় নিলে আমাদের সৌরজগতে অনেকগুলি জায়গা আছে যেখানে প্রাণের সম্ভবনা অনেক বেশী। নক্ষত্রগুলির মাঝে দুরত্ব অবিশ্বাস্য হবার কারণে অন্য নক্ষত্রের গ্রহ-উপগ্রহে প্রাণ খোঁজার চেষ্টা করা খুবই দুরহ ব্যাপার। প্রতিটি নক্ষত্র এতটাই দূরে অবস্থিত যে সেখানে অভিযানের জন্য স্পেসক্র্যাফট পাঠাতে হলে আমাদের প্রযুক্তিকে আরও কয়েক ধাপ উন্নতি করতে হবে। যেমন আমাদের এখন যে প্রযুক্তি আছে সেটা ব্যাবহার করে সবচেয়ে কাছের যে নক্ষত্র, সেখানে যেতেই কমপক্ষে ১০০,০০০ বছরের কাছাকাছি সময় লাগবে।

    যেহেতু আমরা সেখানে সহসাই যেতে পারছিনা তাই আমাদের এখন টেলিস্কোপের উপরই ভরসা করে থাকতে হচ্ছে। এখন যে প্রযুক্তি আছে তা দিয়ে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কিছু উপায়ে অন্য নক্ষত্রের গ্রহ শনাক্ত করতে পারা যায়। কিন্তু প্রযুক্তির উন্নয়ন হচ্ছে দুর্বার গতিতে। হয়তবা আগামী কয়েক দশকের মাঝেই আমরা বেশ শক্তিশালী টেলিস্কোপ বানিয়ে ফেলতে পারব যা দিয়ে অন্য নক্ষত্রের গ্রহ উপগ্রহের ছবি তোলা যাবে, সেই সাথে বর্ণালীমিতির পরীক্ষার সাহায্যে বের করে ফেলতে পারব সেখানে প্রাণ আছে কি নেই। 

    No comments

    Post Top Ad

    Post Bottom Ad