Header Ads

  • সর্বশেষ

    সূর্যের মত একটি নক্ষত্র প্রায় অন্ততঃ ১৫টি পৃথিবীর সমান ভরের গ্রহ গিলে ফেলেছে।

    সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানা গেছে প্রায় সূর্যের সমান একটি নক্ষত্র ১৫টি বা তারও বেশী অন্ততঃ পৃথিবীর সমান আকারের গ্রহ গিলে ফেলেছে। গবেষকেরা এই নক্ষত্রের নাম দিয়েছেন “ক্রনস”। গ্রীক মিথলজিতে ক্রনস তার সিংহাসন হারাতে পারে এমন সম্ভবনার কারনে তার নিজের সন্তানদের খেয়ে ফেলে। ক্রনসের অবস্থান পৃথিবী থেকে প্রায় ৩৫০ আলোকবর্ষ দূরে। এটি একটি বাইনারী স্টার সিস্টেমের নক্ষত্র।
    এই বাইনারী সিস্টেমের অন্য নক্ষত্রটির নাম “ক্রিয়স”। ক্রিয়স হল গ্রীক মিথলজির কন্সটিলেশনের দেবতা আর ক্রনসের বড় ভাই। ক্রিয়স নক্ষত্রের রাসায়নিক গঠন নিয়ে পরীক্ষার সময় ক্রনসের এই খাদক স্বভাব বিজ্ঞানীদের কাছে ধরা পড়ে। পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায় ক্রনসে অস্বাভাবিক পরিমানে পাথর তৈরির খনিজ পদার্থ আছে। যে পরিমাণ ফলাফলে ধরা পড়ে তাতে প্রতীয়মান হয় যে ক্রনস তার সারা জীবনে অন্ততঃ ১৫টি পৃথিবীর সমান ভরের গ্রহ গলধঃকরন করেছে।
    ক্রনস ও ক্রিয়সের অফিসিয়াল নাম হল HD 240430 HD 240429। দুটি নক্ষত্রই আনুমানিক ৪ বিলিয়ন বছর বয়সের। এরা দুটিই আমাদের সূর্যের মত জি টাইপ নক্ষত্র। নক্ষত্র দুটি একে অন্যকে প্রদক্ষিণ করতে প্রায় ১০,০০০ বছর সময় নেয়।
    শুরুর দিকে বিজ্ঞানীরা একটু দ্বিধার মাঝে ছিলেন যে আদৌ এই দুটি নক্ষত্র বাইনারী সিস্টেমের অংশ কিনা। কারণ নক্ষত্র দুটির মাঝে দুরত্ব প্রায় দুই আলোকবর্ষ। পরবর্তীতে পৃথিবী থেকে দূরে যাওয়া এবং কাছে আসার গতি পর্যবেক্ষণ করে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হন যে নক্ষত্র দুটি বাইনারী সিস্টেমের অংশ। সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপারটি হল এই দুটি নক্ষত্র সম্পূর্ণ আলাদা পদার্থ দিয়ে তৈরি। কারণ ক্রনসে অস্বাভাবিক পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম, এলুমিনিয়াম, সিলিকন, আয়রন, ক্রোমিয়াম এবং ইট্রিয়াম আছে। এইসব ধাতু দিয়েই পৃথিবী তৈরি। অন্যদিকে উদ্বায়ী যৌগ যেগুলো সাধারণত গ্যাসীয় অবস্থায় থাকে, যেমন অক্সিজেন, কার্বন, নাইট্রোজেন খুবই কম পরিমাণে আছে। সেমইয়ং ওহ, প্রিন্সটন ইউনিভারসিটি’র একজন পিএইচডি শিক্ষার্থী এবং এই গবেষণার প্রধান লেখক বলেন “ধাতব পদার্থ বেশী আছে এমন বেশীরভাগ নক্ষত্রতেই এইসব পদার্থগুলির পরিমাণের মাঝে সামঞ্জস্যতা দেখা গেছে, কিন্তু ক্রনসের ক্ষেত্রে এমনটা দেখা যায়নি। একারণেই এই নক্ষত্রটি অন্যদের থেকে আলাদা।“ পাথর তৈরি হতে পারে এসব পদার্থ ক্রনসের উপরিভাগেই বেশী সনাক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হয়েছেন যে ক্রনসের উপরিভাগে যেসব পদার্থের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে তা উষ্ণ তাপমাত্রাতেও কঠিন অবস্থায় থাকতে পারে, যা পৃথিবীর মত পাথুরে গ্রহের বৈশিষ্ট্য প্রমাণ করে এবং এসব গ্রহগুলি সাধারণত তুলনামূলকভাবে মাতৃ-নক্ষত্রের কাছাকাছি থাকে। নক্ষত্রটি যদি অন্ততঃ ১৫টি পৃথিবীর ভরের সমান পাথুরে গ্রহ না টেনে নিয়ে থাকত, তবে তাতে উদ্বায়ী পদার্থের পরিমাণ বেশি থাকত। উদ্বায়ী পদার্থের পরিমাণ বেশি পাওয়া মানে কাছাকাছি বৃহস্পতির মত কোনও গ্যাস জায়ান্টকে টেনে নেয়া, যা ক্রনসের ক্ষেত্রে হয়নি। এই গবেষণায় কিভাবে নতুন নক্ষত্র ও নতুন এক্সোপ্ল্যানেট তৈরি হয় তা নিশ্চিত করে জানার ব্যাপারে একধাপ এগুনো হয়েছে।
    “এই মুহূর্তে আমরা এখনও পর্যবেক্ষণ গুলোকে জোড়া লাগানো পর্যায়েই আছি। এটা শেষ হলেই আমরা বুঝতে পারব কিভাবে ও কখন এইসব এক্সোপ্ল্যানেট গুলির সৃষ্টি হয়েছিল।“ বলেন ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজী (ক্যালটেক) এর নাসা এক্সোপ্ল্যানেট সায়েন্স ইন্সটিটিউটের এস্ট্রোনমার জেসি ক্রিস্টিন্সেন।
    “সদ্য জন্ম নেয়া একটি নক্ষত্রের চারিদিকে তৈরি হতে থাকা এক্সোপ্ল্যানেট পর্যবেক্ষণ করা খুবই দুঃসাধ্য কাজ। তৈরি হতে থাকা গ্রহটি ধুলির মেঘে আচ্ছন্ন থাকে আর নতুন জন্ম নেয়া নক্ষত্রটিও খুবই সক্রিয় থাকে। এই অবস্থায় গ্রহ থেকে সিগ্ন্যাল পাওয়াটা প্রায় অসম্ভব কাজ।“ বলেন ক্রিস্টিন্সেন। “তাই আমরা যতটুকু সংগ্রহ করতে পেরেছি সেটুকু থেকেই তথ্য বের করার চেষ্টা করছি। হয়ত এখান থেকেই বেরিয়া আসবে গ্রহ তৈরি হবার ব্যাপারে যুগান্তকারী কোনও তত্ত্ব।“

    No comments

    Post Top Ad

    Post Bottom Ad