বিগব্যাং এর আগের অবস্থা কেমন ছিল? প্রথম পর্ব।
মানুষের আগে পৃথিবীতে ডাইনোসরের
রাজত্ব ছিল। পৃথিবী সৃষ্টির আগে তার জায়গায় ছিল খোলা মহাকাশে ভেসে বেড়ানো ধুলি ও গ্যাসের
জমাট বাঁধা পুঞ্জ।
মহাকাশের সৃষ্টির আগে কি ছিল?
এই প্রশ্নের উত্তর লিখতে গেলেই পৃথিবীর সব
পদার্থবিদের কলমের কালি শেষ হয়ে যায়। কারণ আমরা কেউই জানি না বিগব্যাং এর মহাকাশের
শুরুর আগে কি ছিল। তবে এই ব্যাপারে এই গ্রহের অন্যতম মেধাবী সব বিজ্ঞানীদের উপস্থাপিত
বিভিন্ন তত্ত্ব আছে।
বিগব্যাং এর ব্যাপারটা বিভিন্ন
বিজ্ঞানী বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা দিলেও বিগব্যাং যে হয়েছিল এ ব্যাপারে কারও দ্বিমত নেই।
এই তত্ত্ব মতে আমাদের মহাকাশের শুরুটা হয় একটি অসীম গ্র্যাভিটি ও ঘনত্বসম্পন্ন বিন্দু
থেকে যার নাম সিঙ্গুলারিটি। একের পর ৩৭টি শুন্য দিন। তারপর তা দিয়ে ১ সেকেন্ড কে ভাগ
করুন। যা আসে সেই সময়ের ভেতরে বিস্ফোরিত মহাকাশের আকৃতি আলোর গতির চেয়ে দ্রুত গতিতে
বাড়তে থাকে। এই ব্যাপারটিকে পদার্থবিদেরা বলে “ইনফ্লেশন।“ যার বাংলা অর্থ হল ফুলে যাওয়া।
একটি বেলুনে যদি বাতাস ভরি তবে এর ফুলে ওঠাকে ইংরেজিতে বলে “ইনফ্লেশন”। মনে প্রশ্ন
আসতে পারে যে কোনও কিছু আলোর গতির চেয়ে বেশী গতির কিভাবে হতে পারে? ভুলে যাবেন না যে
পদার্থবিজ্ঞানের নিয়মকানুন কিন্তু তখনও খাটতে শুরু করেনি। যাই হোক, বিগব্যাং হবার পর
একটা জিনিস থেকে আরেকটি জিনিস সৃষ্টি হওয়া শেষ করে আমরা আজকের অবস্থায় এসে পৌঁছেছি।
কিন্তু আমরা জানতে চাই বিগব্যাং এর আগে কি ছিল? কিভাবে সেই বিগব্যাং সৃষ্টিকারী সিঙ্গুলারিটি
তৈরি হয়েছিল?
এই ব্যাপারটির ব্যাখ্যা দিতে গেলে আমাদের বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর জানা
লাগবে যেগুলির উত্তর আজও খুঁজছেন পদার্থবিজ্ঞানীরা। এদের মাঝে সবচেয়ে বড়টি হল মহাকাশের
“এনট্রপি” বিস্ময়কর রকমের কম। এনট্রপি অগোছালো থাকা ব্যাপারটার পদার্থবিজ্ঞানের ভাষা।
বেশীরভাগ ছেলেদের ঘরের এনট্রপি আমরা বেশী বলতে পারি। তার মা এসে সেই ঘরের এনট্রপি কমিয়ে
দিয়ে যান, অর্থাৎ ঘরটা গুছিয়ে দিয়ে যান। আরেকটি উদাহরণ হল একটা বরফের চাই এর এন্ট্রপিও
কিন্তু কম। কারণ এতে পানির অনুগুলি একটি নির্দিষ্ট ছাঁচে গোছানো হয়ে গেছে। তাপমাত্রা
কমে যাওয়াতে সেই বরফের অণুগুলির এনট্রপি বাড়তে পারছে না। এবার যদি তাপমাত্রা বাড়ানো
হয় তবে কি হবে? বরফের অনুগুলি অগোছালো হবার সুযোগ পেয়ে তরল পদার্থে পরিণত হবে অর্থাৎ
আমরা দেখব যে বরফের অণুগুলির এনট্রপি বা অগোছালো হবার মাত্রা বেড়ে গিয়েছে। তাপমাত্রা
না কমানোর আগে এই অবস্থার উল্টোটা আর হবে না। এই ব্যাখ্যায় আমরা কি দেখলাম? তাপমাত্রা
বাড়লে এনট্রপি বাড়ে। এবার বিগব্যাং এর সময়টার কথা চিন্তা করি। সে সময় মহাকাশ বন্দি
ছিল একটি বিন্দুতে, অর্থাৎ সিঙ্গুলারিটিতে। তার মানে সেটি গোছালো ছিল এবং তার এনট্রপি
এখনকার তুলনায় কম হবার কথা। কিন্তু পরীক্ষা নিরীক্ষায় প্রমাণিত যে বর্তমান মহকাশের
এনট্রপি অনেক কম। এ থেকে একটি ব্যাপার অনুমান করা যায় যে বিগব্যাং এর পর এনট্রপি কিছুটা
বেড়ে গিয়েছিল ফলে বিভিন্ন ধরণের মৌলিক কণার সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু আবার সেইসব মৌলিক
কণাগুলি তাদের এনট্রপি কমার ফলে গোছানো হয়ে অণুর সৃষ্টি করেছিল। তার মানে অবস্থার পরিবর্তন
ছাড়াই এনট্রপির দিকের পরিবর্তন অর্থাৎ রিভার্স করেছিল? এটা কিভাবে সম্ভব? তাই কিভাবে
মৌলিক কণাগুলি দিয়ে প্রথম পরমাণু সৃষ্টি হয়েছিল বা তৈরি হওয়া পরমাণু থেকে কিভাবে প্রথম
অণুর সৃষ্টি হয়েছিল তা এখনও পদার্থবিদদের কাছে রহস্য। এর একমাত্র ব্যাখ্যা মহাকাশের
জন্মের সময় তার এনট্রপি ছিল এখনকার চেয়েও কম।
No comments