প্রত্যেক ব্ল্যাকহোলের মাঝেই হয়ত একটি করে মহাবিশ্ব আছে।
বেশীরভাগ বিশেষজ্ঞরাই মহাবিশ্ব
যে একটি অসীম তাপমাত্রার অসীম ঘনত্বের একটি বিন্দু থেকে যাত্রা শুরু করেছে, যার নাম
সিঙ্গুলারিটি, সে ব্যাপারে সহমত পোষণ করেন। একটু দাঁড়ান, এটাই সেই বস্তু নয়? যেটাকে
আমরা ব্ল্যাকহোল বলি? কিছু কিছু পদার্থবিদের মতে সিঙ্গুলারিটি আর ব্ল্যাকহোল একে অন্যটির
সমার্থক। কারণ সিঙ্গুলারিটিই একটি ব্ল্যাকহোলের মাঝে সবকিছুর মিলনস্থল। প্রতিটি ব্ল্যাকহোলেই
একটি সিঙ্গুলারিটি থাকে এবং এদের প্রত্যেকটি থেকেই নতুন শিশু মহাবিশ্ব সৃষ্টি সম্ভব।
আমাদের মহাবিশ্ব যে এর থেকে আলাদা সেটা ভেবে নেবার কোনও কারণ নেই।
যখন কোন প্রচন্ড ভারী নক্ষত্র
ধংস হয় তখন তার কেন্দ্র একটি খুদ্র বিন্দুতে ঘনীভূত হয় এবং এতটাই পদার্থ এই বিন্দুতে
ঘনীভূত হয় যে সেটি প্রচন্ড গ্যাভিটি অর্জন করে। সেই গ্র্যাভিটি এতটাই প্রচন্ড যে সেটা
থেকে আলো পর্যন্ত বেরিয়ে আসতে পারে না। প্রতিটি ব্ল্যাকহোলেই ইভেন্ট হরাইজোন নামের
একটি সীমানা তৈরি হয় যেটি অতিক্রম করলে কোনও কিছুই আর ব্ল্যাকহোলের ভেতরে পতন এড়াতে
পারে না। ব্ল্যাকহোল যত বেশী পদার্থ গলধঃকরন করে তত এর ইভেন্ট হরাইজোনের পরিধি বাড়তে
থাকে। এই গলধঃকরনের গতি যত বেশী, ইভেন্ট হরাইজোনের বর্ধনের গতিও তত বেশী। এর অর্থ হল
ব্ল্যাকহোলের সৃষ্টির শুরুর দিকে এর ইভেন্ট হরাইজোনের বর্ধনের গতি বেশী থাকে। সময়ের
সাথে সাথে এই গতি কমতে থাকে।
বিগ ব্যাং এর প্রথম এক সেকেন্ডের
এক ট্রিলিয়ন ভাগের এক ভাগ সময়টাতে মহাবিশ্ব খুবই দ্রুত পরিবর্ধিত হয়েছিল। এই গতি আলোর
গতির চেয়েও বেশী ছিল। সময়ের সাথে সাথে এই বর্ধনের গতি কমে এসেছে। আচ্ছা, ব্যাপারটা
ইভেন্ট হরাইজোনের বর্ধনের ধরণের সাথে মিলে যাচ্ছে না? এটা হতে পারে কি যে আমাদের মহাবিশ্ব
আসলে অন্য আরেকটি মহাবিশ্বের কোন ব্ল্যাকহোলের ইভেন্ট হরাইজোন? কিন্তু একটা ব্যাপার,
আমাদের মহাবিশ্বে তিন মাত্রার ব্ল্যাকহোলের ইভেন্ট হরাইজোন হয় দুই মাত্রার। এর মানে
হল আমাদের মহাবিশ্বকে যদি কোন ব্ল্যাকহোলের ইভেন্ট হরাইজোন হতে হয় তবে সেই ব্ল্যাকহোলটিকে
হতে হবে চার মাত্রার এবং চার মাত্রার একটি ব্ল্যাকহোলকে ধারণ করতে পারবে একটি চার মাত্রার মহাবিশ্ব। পাগলের প্রলাপ মনে হচ্ছে, না?
একটি ব্ল্যাকহোলের সিঙ্গুলারিটিতে
কোন ধরনের হিসাব-নিকাশ আমরা করতে পারি না, কারণ সেখানে পদার্থবিজ্ঞানের সকল নিয়মকানুন
ভেঙ্গে পড়ে। কিন্তু একটি ব্ল্যাকহোলের ইভেন্ট হরাইজোনের বাইরের সীমানা পর্যন্ত যেকোনও
ধরণের হিসাবনিকাশই আমরা করতে পারি। একটি ব্ল্যাকহোলে যখন কোনও বস্তু পতিত হয় তখন ইভেন্ট
হরাইজোনে সেটার তথ্য জমা হয়। একটি ব্ল্যাকহোল এবং তার ইভেন্ট হরাইজোন একই গতিতে বর্ধিত
হয় যাতে ব্ল্যাকহোলে পতিত সকল বস্তুর সকল তথ্যাবলী সেটায় ধারণ করতে পারে। আমাদের মহাবিশ্বে
যা কিছু আছে সেসবের ব্যাখ্যা এসব তথ্য দিয়ে দেওয়া সম্ভব। এবং বিশ্বাস করবেন কি না জানিনা,
এইভাবে হিসাবনিকাশের ফলে অনেক দীর্ঘমেয়াদী সমস্যার সমাধান পাওয়া গেছে।
এসব নিয়ে সর্বপ্রথম প্রস্তাব
করা হয় ২০১৪ সালে। প্রস্তাব করেন পেরিমিটার ইন্সটিটিউট এবং ইউনিভার্সিটি অব ওয়াটারলু
এর কিছু গবেষক।
হতে পারে, তবে কোন দিনই হয়ত প্রমাণ করা সম্ভব হবে না, অনুমানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।
ReplyDelete