Header Ads

  • সর্বশেষ

    TRAPPIST-1 সৌরজগতের দুটি গ্রহ এখনও তার বায়ুমণ্ডল ধরে রাখতে পেরেছে যা গ্রহ দুটিতে জীবন থাকার সম্ভবনা দেখায়।

    পৃথিবীর বাইরে প্রাণ খোঁজার ব্যাপারে TRAPPIST-1 সৌরজগতটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। খুব সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে যে এই সৌরজগতের অন্ততঃ দুটি গ্রহ প্রায় এক বিলিয়ন বছর ধরে তার বায়ুমন্ডল ধরে রেখেছে। এই দুটি গ্রহের মধ্যে একটি গ্রহ আবার সৌরজগতটির বাসযোগ্য এলাকার সীমানা অর্থাৎ গোল্ডিলকস জোনের মাঝে পড়েছে, যে সীমানায় পানি তরল হিসেবে প্রবাহিত হতে পারে। এর মানে হলে এই গ্রহে প্রাণ থাকার জোরালো সম্ভবনা আছে।
    TRAPPIST-1 সৌরজগতের গ্রহগুলির অবস্থা এবং আমাদের সৌরজগতের সাথে এর গ্রহগুলির অবস্থানের তুলনা।

    TRAPPIST-1 সৌরজগতে অন্ততঃ সাতটি পৃথিবীর আকারের গ্রহ রয়েছে। TRAPPIST-1 একটি প্রচন্ড ঠান্ডা লোহিত বামন নক্ষত্র। পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৩৯.৬ আলোকবর্ষ বা ২৩৫ ট্রিলিয়ন মাইল। এটি খুঁজে পাওয়া যাবে একুয়ারিয়াস কন্সটিলেশনে। এই সৌরজগতটিকে এখন “The holy grail of alien life” বলা হচ্ছে। এর পেছনে কয়েকটি কারণও আছে। যেমন TRAPPIST-1 সৌরজগতের সাতটি গ্রহের নামকরণ করা হয়েছে TRAPPIST-1a থেকে TRAPPIST-1h দিয়ে। এই সাতটি গ্রহের মাঝে তিনটি গ্রহ TRAPPIST-1e, TRAPPIST-1f, এবং TRAPPIST-1g জীবন সচল থাকার জন্য যে দুটি অবস্থা সবচেয়ে বেশী দরকার পড়ে, সেগুলি ধারণ করে। পৃথিবীর মতই এগুলি পাথুরে গ্রহ এবং এগুলি গোল্ডিলকস জোনে অবস্থান করছে। গোল্ডিলকস জোনে তাপমাত্রা ও মাতৃনক্ষত্র থেকে আসা রেডিয়েশনের পরিমাণ সহনীয় মাত্রায় থাকে। এছাড়াও এই সৌরজগতের অন্ততঃ পাঁচটি গ্রহে পানি আছে বলে হাবল টেলিস্কোপের সাহায্যে চালানো এক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। হাবল যা খুঁজে পেয়েছে তা অনুসারে “সৌরজগতের বাইরের দিকে যে গ্রহগুলি আছে তাতে প্রচুর পরিমাণ পানির উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া গেছে। নাসা এই ব্যাপারটি ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সী এসা’র সাথে মিলিতভাবে ব্যাখ্যা দিয়েছে।
    TRAPPIST-1 সৌরজগতের গ্রহগুলির অবস্থান অনুসারে দেখানো হয়েছে পানি কোন স্থানে কোন অবস্থায় থাকতে পারে।

    TRAPPIST-1 নক্ষত্রটি একটি জি-টাইপ হলুদ বামন নক্ষত্র। সেই সাথে প্রচন্ড ঠান্ডা যাকে ইংরেজীতে বলা হচ্ছে “Ultra Cool”। এর উজ্বলতা আমাদের সূর্যের চেয়ে অন্ততঃ ২০০০ ভাগের এক ভাগ। এর মানে হল এই নক্ষত্রটি প্রাণের ধারণের জন্য যথেষ্ট ঠাণ্ডা এবং এই নক্ষত্রের গ্রহগুলি তার খুব কাছাকাছি অবস্থান করেও প্রাণের জন্য উপযুক্ত তাপমাত্রা ধরে রাখতে পারছে।

    খুবই সম্প্রতি একটি নতুন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে এই সৌরজগতের বাইরের দিকের অন্ততঃ দুইটি গ্রহে, TRAPPIST-1g এবং TRAPPIST-1h,মাতৃনক্ষত্রের সৌরবাতাস উপেক্ষা করে তাদের বায়ুমন্ডল অক্ষত অবস্থায় ধরে রাখতে পেরেছে। এই গবেষণায় কয়েকটি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা জড়িত ছিলেন। এগুলোর মাঝে আছে প্রিন্সটন এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। তারা এই দুটি গ্রহের বায়ুমণ্ডল বিশ্লেষণ করে দেখেছেন যে তাতে জীবন থাকার সম্ভবনা উড়িয়ে দেয়া যায়না। “দীর্ঘ সময় ধরে একটি বায়ুমণ্ডল অক্ষত থাকা ব্যাপারটা জীবনের শুরুর জন্য একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক।“ বলেন এই গবেষণায় অংশগ্রহণকারী একজন বিজ্ঞানী। তাদের এই গবেষণা পত্রটি “Proceedings of the National Academy of Sciences” এর জার্নালে ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭ তে প্রকাশিত হয়। গবেষণাপত্রটি চাইলে এখান থেকে সংগ্রহ করতে পারেন।
    TRAPPIST-1f গ্রহের আকাশ ও পরিবেশ কেমন হতে পারে সে ব্যাপারে শিল্পীর ধারণা।  

    এই গবেষক দলটি একটি এনালাইটিক্যাল মডেল তৈরি করে যা দিয়ে TRAPPIST-1 নক্ষত্রটির সৌরবাতাস সিমুলেট করতে পারে। সেই সাথে এই নক্ষত্রটিকে প্রদক্ষিণরত সাতটি গ্রহের উপর এই সৌরবাতাসের কি প্রভাব সেটাও ক্যালকুলেট করতে পারে। সাধারণত সৌরবাতাস বা স্টেলার উইন্ড সেকেন্ড প্রায় ১০০০ মাইল বেগে গ্রহের পৃষ্ঠে আঘাত করতে পারে। কোন গ্রহের যদি উপযুক্ত শক্তির চৌম্বকক্ষেত্র না থাকে তবে তা এই সৌরবাতাসকে প্রতিহত করতে পারে না। এতে ঐ গ্রহ ধীরে ধীরে তার বায়ুমন্ডল হারাতে থাকে। প্রতিটি নক্ষত্রই সৌরবাতাস নির্গত করে যা আসলে খুবই উচ্চ চার্জের কণা। আমাদের সূর্যও সৌরবাতাস নির্গত করে প্রতিনিয়ত। কিন্তু পৃথিবীর খুবই শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্র থাকায় পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল এখনও অক্ষত আছে। TRAPPIST-1 থেকেও সৌরবাতাস নির্গত হয় যা তার গ্রহ গুলির জন্য বেশী ক্ষতিকর হতে পারে। কারণ এর সবগুলি গ্রহই সূর্য থেকে বুধ গ্রহের যা দূরত্ব, সেই দুরত্বের মাঝে নক্ষত্রটিকে প্রদক্ষিণ করছে। তাই এই সৌরজগতের গ্রহগুলির বায়ুমণ্ডল অক্ষত না থাকার সম্ভবনা বেশী ছিল। যাই হোক, প্রিন্সটন ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা তাদের করা সিমুলেশনে প্রমাণ পেয়েছেন যে TRAPPIST-1g এবং TRAPPIST-1h গ্রহ দুটির তার নক্ষত্র থেকে আসা প্রচন্ড গতির এর সৌর বাতাস থেকে নিজের বায়ুমণ্ডলকে রক্ষা করার মত যথেষ্ট শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে। এ কারণেই এই গ্রহ দুটিতে জীবন থাকার সম্ভবনা যথেষ্ট জোরালো হয়েছে।


    এই গবেষণায় আরও প্রমাণিত হয়েছে যে এই সৌরজগতের নক্ষত্রের সবচেয়ে কাছের গ্রহ TRAPPIST-1a সৌরবাতাসের কারণে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত।  

    No comments

    Post Top Ad

    Post Bottom Ad