যে কারণে ব্ল্যাকহোল শক্তির একটি খুবই ভাল উৎস হতে পারে।
ব্ল্যাকহোলের ভেতরে যাওয়া
অসম্ভব। ব্ল্যাকহোলের ভেতরে যেতে চাওয়া যে একটি বাজে ইচ্ছা তার পক্ষে চাইলে হাজারটা
কারণ দেয়া যাবে। ব্ল্যাকহোলের ইভেন্ট হরাইজোনের কাছাকাছি পৌঁছানোর অনেকে আগেই বেঁচে
থাকার সম্ভবনা শূন্যের কোঠায় গিয়ে দাঁড়াবে। এই মারাত্মক ব্যাপারটার কারণই ব্ল্যাকহোল
শক্তির একটি খুবই ভাল উৎস।
আলবার্ট আইনস্টেইনের বিখ্যাত
ফর্মুলা E=mc2 অনুসারে যে কোনও বস্তু বা পদার্থ অর্থাৎ যার ভর আছে, তা প্রচুর
শক্তি ধারণ করে। কিছু কিছু পদ্ধতিও আছে যার সাহায্যে ভরকে শক্তিতে রুপান্তরিত করা যায়
যেমন রাসায়নিক বিক্রিয়া, নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া, গ্র্যাভিটেশনাল বিক্রিয়া ইত্যাদি। এসব
পদ্ধতি দিয়ে শক্তির রুপান্তর করা গেলেও তাতে অনেক শক্তি হারিয়ে যায়। যেমন নিউক্লিয়ার
ফিশন ও ফিউশন প্রক্রিয়াতে যা শক্তি উৎপন্ন হবার কথা তার পরিবর্তে যথাক্রমে মাত্র ০.০৮%
ও ০.৭% শক্তি উৎপন্ন হয়। তার মানে হল বেশীরভাগ শক্তিই আমরা সংরক্ষণ করতে পারিনা। আমরা
এসব পদ্ধতি ব্যাবহার করি কারণ এখনও আমাদের হাতে শক্তি উৎপাদনের জন্য এর চেয়ে ভাল পদ্ধতি
নেই।
তত্ত্বমতে শক্তি উৎপাদনের
জন্য উপরের পদ্ধতিগুলির চেয়ে আরও ভাল পদ্ধতি রয়েছে। এই জায়গাটিতেই ব্ল্যাকহোল চলে আসে।
একটি ধুমকেতুর কথা চিন্তা করুন। যখন এটি তার চেয়ে বেশী ভরের কোনও বস্তুর গ্যাভিটেশনাল
ফিল্ডে আটকা পড়ে, তখন বড় বস্তুর দিকে তার গতি প্রতিনিয়ত বাড়তেই থাকে, একই সাথে তাপ
ও শক্তি ছড়াতে থাকে। তবে এক্ষেত্রেও যে শক্তি উৎপন্ন হয় তা খুবই সামান্য। যদি ধুমকেতুর
মত একটি বস্তু থেকে তার গতিশক্তি দিয়ে তা থেকে এর থেকে বেশী শক্তি উৎপন্ন করতে হয় তবে
তা পাওয়া যাবে যদি এটিকে একটি ব্ল্যাকহোলের দিকে ধাবিত করা হয়। আর যদি এমনটি আমরা করতে
পারি তবে আমরা ধুমকেতুটির মোট ভরের সর্বচ্চো ৪২% পর্যন্ত ভরকে শক্তিতে পরিণত করতে পারব।
আমাদের শুধু সতর্ক থাকতে হবে যেন আমরা ধুমকেতুটি ব্ল্যাকহোলের ইভেন্ট হরাইজোন পার হবার
আগেই তার ভর থেকে রুপান্তরিত শক্তিকে সংরক্ষণ করে ফেলতে পারি। কারণ ইভেন্ট হরাইজোনে
পৌঁছে গেলে কোন বস্তুই আর ব্ল্যাকহোলের গ্র্যাভিটি থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে না।
এরচেয়েও একটি ভাল পদ্ধতি
হল ম্যাটার ও এন্টিম্যাটারের সংঘর্ষ করানো। এতে তারা একে অপরকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলবে এবং
তাদের ভর থেকে প্রায় ১০০% শক্তি উৎপাদন করা যাবে। কিন্তু পৃথিবীতে এন্টিম্যাটার তৈরি
করা খুবই দুরহ ব্যাপার। তবে ব্ল্যাকহোলে এন্টিম্যাটার তৈরি হয়। আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সীর
কেন্দ্রে যে সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল স্যাজিটারিয়াস এ* আছে সেটা থেকে এন্টিম্যাটারের
একটি ধারা প্রতিনয়ত বের হচ্ছে বলে জ্যোতিরবিদেরা প্রমাণ পেয়েছেন। যে ধারাটি বের হচ্ছে
তার দৈর্ঘ্য প্রায় ৩,৫০০ আলোকবর্ষ।
No comments