২০১৮ সালেই আমরা সরাসরি ব্ল্যাকহোলের ছবি দেখতে পাব। প্রথম পর্ব।
ব্ল্যাকহোল হল মহাকাশের
সবচেয়ে অবিশ্বাস্য বস্তুগুলির একটি। এটি সেই জায়গা যেখানে প্রচুর পরিমাণ পদার্থ একটি
ক্ষুদ্র জায়গাতে পতিত হয়ে ঘনীভূত হয়ে এতটাই গ্র্যাভিটি অর্জন করে যে কোন বস্তু আর তার
সাধারণ অবস্থায় থাকতে পারে না। সবশেষে বস্তুগুলি একটি বিন্দুতে গিয়ে জমা হয় যাকে আমরা
বলি সিঙ্গুলারিটি। এই সিঙ্গুলারিটিকে একটি গোলক আকৃতির এলাকা ঘিরে থাকে যার নাম ইভেন্ট
হরাইজোন, যার ভেতরে একবার কিছু ঢুকলে তা আর ইভেন্ট হরাইজোনের বাইরে বেরিয়ে আসতে পারে
না। বস্তুটির গতি যাই হোক না কেন তার যাত্রার একমাত্র দিক হয় সিঙ্গুলারিটি। এখন পর্যন্ত
আমরা তিনটি পদ্ধতি জানি যেগুলোর সাহায্যে একটি ব্ল্যাকহোল তৈরি হতে পারে। তাছাড়াও আমরা
হাজারেরও বেশী ব্ল্যাকহোল শনাক্ত করেছি। এতকিছু করলেও আমরা এখনও জানিনা একটি ব্ল্যাকহোলের
ইভেন্ট হরাইজোন দেখতে কেমন হয়। কিন্তু এবছর অর্থাৎ ২০১৮ সালে অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে
যাচ্ছে। ইভেন্ট হরাইজোন টেলিস্কোপ দিয়ে ইভেন্ট হরাইজোনের ছবি তোলার সমস্ত ব্যবস্থা
নেয়া হচ্ছে।
ব্ল্যাকহোলের ধারণাটা নতুন
নয়। শত শত বছরের গবেষণার ফলে বিজ্ঞানীরা জেনেছেন যদি আমরা নির্দিষ্ট একটি আয়তনের জায়গাতে
প্রচুর ভর জমাতে থাকি তবে এটি থেকে যে গ্র্যাভিটেশনাল কূপ তৈরি হয় তাতে তলিয়ে যাওয়া
থেকে বাঁচতে হলে ঐ নির্দিষ্ট আয়তনের জায়গাটিকে তার গতি যথেষ্ট পরিমাণ বাড়াতে হবে। যেহেতু
যে কোন কিছুর গতির একটি সর্বোচ্চ সীমা আছে যা আলোর গতির সমান, তাই একটা সময় আসবে যার
পর যা কিছুই ঐ নির্দিষ্ট আয়তনের জায়গাতে ঢোকানো হোক না কেন সেখান থেকে আর বের হতে পারবে
না। ভেতরে যে পদার্থ জমা হচ্ছে সেগুলি প্রতিনিয়ত উৎপন্ন হওয়া গ্র্যাভিটি থেকে বাঁচতে
চাবে। কিন্তু গ্র্যাভিটির শক্তি বেশী হবার জন্য সবকিছু একটি বিন্দুর দিকে ধাবিত হবে
যা হল সেই সিঙ্গুলারিটি। সেখান থেকে বেরিয়ে আসার কোনও উপায় নেই। সিঙ্গুলারিটিকে পরাজিত
করার শক্তি কোনও কিছুর নেই। এই সিঙ্গুলারিটিকে ঘিরে আছে একটি এলাকা যার নাম ইভেন্ট
হরাইজোন। যা কিছুই এর সীমানার ভেতরে আসুক না কেন তার জায়গা হবে ঐ সিঙ্গুলারিটিতে।
বাস্তবে ব্ল্যাকহোল তৈরির
পদ্ধতি হল তিনটি।
১) যখন একটি খুবই ভারী নক্ষত্র
তার জ্বালানী শেষ করে সুপারনোভা হিসেবে মৃত্যুবরণ করে তখন তার কেন্দ্র ভেতরের দিকে
ঘনীভূত হয়। এ থেকে তৈরি হয় স্টেলার ব্ল্যাকহোল বা মহাকাশের সাধারণ ব্ল্যাকহোল।
২) যখন সূর্যের ভরের ২.৫
থেকে ২.৭৫ গুণ ভরের দুটি নিউট্রন স্টার সংঘর্ষে পতিত হয় তখনও ব্ল্যাকহোল তৈরি হয়।
৩) যখন একটি যথেষ্ট ভর সম্পন্ন
গ্যাসের মেঘ পুঞ্জীভূত হয় তখন সাধারণ নক্ষত্র তৈরি না হয়ে সরাসরি ব্ল্যাকহোল তৈরি হতে
পারে। এক্ষেত্রে গ্যাসের পুঞ্জের যে প্রাথমিক ভর থাকে তৈরি হওয়া ব্ল্যাকহোলের ভরও তত
থাকে।
গ্র্যাভিটেশনাল লেন্সিং |
যত সময় অতিবাহিত হতে থাকে,
ব্ল্যাকহোলও পদার্থ খেতে থাকে। একই সাথে আকারে ও ভরেও বাড়তে থাকে। যদি এর ভর দ্বিগুণ
হয়ে যায় এর ব্যাসার্ধও দ্বিগুণ হবে। যদি এর ভর দশগুন হয় তবে এর ব্যাসার্ধও একই হারে
বাড়বে। সেই সাথে ব্ল্যাকহোলটির ইভেন্ট হরাইজোনের ব্যাসার্ধও একই হারে বাড়বে। যেহেতু
ইভেন্ট হরাইজোনের ভেতরে যা কিছুই যাক না কেন, আর তা ফেরত আসতে পারে না, তাই এই ইভেন্ট
হরাইজোনটিই একটি বিশাল অন্ধকার গর্ত হিসেবে দেখা যাবে। আর এর পেছনে যাই থাকুক না কেন
তার কিছুই দেখা যাবে না। সাথে আরেকটি কাজ করবে সেটি হল গ্র্যাভিটেশনাল লেন্সিং। ব্ল্যাকহোলের
ইভেন্ট হরাইজোনের বাইরের দিকের কাছাকাছি জায়গাতে গ্র্যাভিটির জন্য আলো বেঁকে যাবে।
আমরা ইভেন্ট হরাইজোনের যে ছবিটি দেখব তা এই লেন্সিং এর কারণে অন্তত হিসাব করা আকারের
অন্ততঃ ২৫০% বড় দেখব।
ইভেন্ট হরাইজোন টেলিস্কোপে যেভাবে ব্ল্যাকহোলের ছবি আসতে পারে। |
সবকিছু ধর্তব্যের মাঝে নিয়ে সবগুলি ব্ল্যাকহোলকে দেখা হবে। তাদের ভর ও কতদূরে আছে তাও বের করা হবে। তারপর
বের করা হবে পৃথিবী থেকে কোনটা সবচেয়ে বড় দেখায়। বলুন তো কে হবে বিজয়ী? বিজয়ী হবে স্যাজিটারিয়াস
এ*। আমাদের মিল্কিওয়ের কেন্দ্রে থাকা সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল। পৃথিবী থেকে মাত্র(!)
প্রায় ২৭,০০০ আলোকবর্ষ দূরের এই সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলের ভর আমাদের সূর্যের চেয়ে
অন্ততঃ ৪,০০০,০০০ গুণ বেশী। দ্বিতীয় স্থান যে ব্ল্যাকহোলটি নেবে তা হল এম৮৭ গ্যালাক্সীর
কেন্দ্রীয় সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল। এর অবস্থান ভারগো সুপারক্লাস্টারে এবং এই গ্যালাক্সী
এই সুপারক্লাস্টারের সবচেয়ে বড় গ্যালাক্সী। এই সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলের ভর সূর্যের
প্রায় ৬,০০০,০০০ গুণ। যেহেতু এই সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলটি পৃথিবী থেকে প্রায় ৫০-৬০
মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে আছে তাই এর ইভেন্ট হরাইজোন স্যাজিটারিয়াস এ* এর চেয়ে ছোট দেখাবে।
তাই যদি কোনও ব্ল্যাকহোলের ইভেন্ট হরাইজোনের ছবি ভালভাবে দেখতে চান তবে এর দিকেই চোখ
রাখা উচিত।
No comments