২০১৮ সালেই আমরা সরাসরি ব্ল্যাকহোলের ছবি দেখতে পাব। শেষ পর্ব।
যদি একটি টেলিস্কোপ ব্যবহার
করা হয় যার আকার পৃথিবীর সমান এবং পৃথিবী ও ব্ল্যাকহোলের মাঝে আলো চলাচলে বাঁধা দেবার
মত যদি কিছু না থাকে তবে হয়ত ব্ল্যাকহোলটি ভালভাবেই দেখা যাবে। কিন্তু পথ তো ফাঁকা
পাওয়া যাবে না। কিছু কিছু তরঙ্গ আছে যেগুলি এই মাঝামাঝি স্থানে থাকা পদার্থগুলিতে বাধাপ্রাপ্ত
হয় না। তাই যদি দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্য যেমন রেডিও ওয়েভ ব্যবহার করা হয় তবে ব্ল্যাকহোল
চোখে পড়বে। সমস্যা হল এই মুহূর্তে আমাদের হাতে পৃথিবীর সমান বড় টেলিস্কোপ নেই। তাহলে
সমাধান কি? সমাধান হল কয়েকটি টেলিস্কোপ একসাথে যোগ করে ব্যবহার করা। সমস্ত টেলিস্কোপের
সাহায্যে যে ডেটা পাওয়া যাবে তা একত্রিত করে একটি ছবি তৈরি করা। এই পরিকল্পনাকৃত ইভেন্ট
হরাইজোন টেলিস্কোপ আমাদের সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে কাজ করবে। আমরা আশাবাদী
হতেই পারি যে এটা আমাদের প্রথমবারের মত একটি ব্ল্যাকহোলের ছবি দেখার সুযোগ করে দেবে।
যেখানে যেখানে টেলিস্কোপ গুলি থাকবে। |
একটি টেলিস্কোপের জায়গাতে
সমগ্র পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত অন্ততঃ ১৫ থেকে ২০টি রেডিও টেলিস্কোপ একই সাথে
ব্যবহার করা হবে। আর এই টেলিস্কোপ সিরিজের মাঝে সবচেয়ে দূরে অবস্থিত দুটি টেলিস্কোপের
মাঝে পরস্পরের দূরত্ব থাকবে প্রায় ১২,০০০ কিলোমিটার। এতে ১৫ মাইক্রোআর্কসেকেন্ডের মত
ছোট বস্তুও ধরা পড়তে বাধ্য। যদি চাঁদে একটি মাছি উড়তে থাকে, এই টেলিস্কোপ সিস্টেম দিয়ে
সেটাও দেখা যাবে। স্যাজিটারিয়াস এ* এর দূরত্ব ও ভর দিয়ে হিসাব করে দেখা যায় যে এর ব্যাস
হবে ৩৭ মাইক্রোআর্কসেকেন্ডের সমান। রেডিও তরঙ্গে চলমান চার্জড পার্টিকেল প্রচুর পরিমাণে
দেখা যাবে, কিন্তু যেখানে ইভেন্ট হরাইজোন টা আছে সেখানে একটি খালি জায়গা দেখা যাবে।
যদি সমস্ত তথ্য উপাত্ত ঠিক মত ব্যবহার করা যায় তবে আমরা প্রথম বারের মত একটি ব্ল্যাকহোলের
ছবি দেখব।
যেসব রেডিও টেলিস্কোপ দিয়ে
ইভেন্ট হরাইজোন টেলিস্কোপ তৈরি সেগুলো স্যাজিট্যারিয়াস এ* এর দিকে তাদের প্রথম দৃষ্টি
২০১৭ সালেই দিয়ে দিয়েছে। সেই তথ্য সংগ্রহও করা হয়েছে এবং এই মুহূর্তে সেগুলিকে বিশ্লেষণ
করে প্রস্তুত করা হচ্ছে। তাই প্রথম ছবিটি পেতে হয়ত আর খুব বেশী দেরী হবে না। কিন্তু
কিছু অবিশ্বাস্য ব্যাপার কিছু পরীক্ষা এখনও করতে হবে।
১)
ব্ল্যাকহোলটি আকার কি জেনারেল রিলেটিভিটি দিয়ে করা ভবিষ্যতবাণী অনুসারে যা পাওয়া গিয়েছিল
সেটাই দেখা যাচ্ছে কি না।
২)
ইভেন্ট হরাইজোন কি বৃত্তাকার নাকি অন্য কোনও আকৃতির?
৩)
যা হিসাব করা হয়েছিল রেডিও এমিশন কি তার চেয়েও বেশী?
৪)
যে স্বভাবগুলি থাকবে বলে হিসাব করা হয়েছিল সেগুলির কোনও বিচ্যুতি আছে কি না।
আমরা আবিষ্কার করা থামিয়ে
দিই আর না দিই, প্রথমবারের মত ব্ল্যাকহোলের ছবি দেখাটা একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
এটা হলে আমাদের ব্ল্যাকহোলের ছবির জন্য কম্পিউটার সিমুলেশন বা শিল্পীর ধারণার ছবির
প্রয়োজন হবে না। আর এটায় যদি আমরা সফল হতে পারি তবে এরপর মহাকাশে গিয়ে টেলিস্কোপ সিরিজ
বানানো হবে। তখন আমাদের সুযোগ একটি, দুটি ব্ল্যাকহোল নয় হাজার হাজার ব্ল্যাকহোলের ছবি
নিতে পারব। যদি ২০১৬ সাল গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভের আবিষ্কারের হয়, ২০১৭ সাল হয় নিউট্রন
স্টার একীভূত হবার, তবে ২০১৮ সাল হবে ইভেন্ট হরাইজোনের বছর। যারা এস্ট্রোফিজিক্স, ব্ল্যাকহোল
এবং জেনারেল রিলেটিভিটির ভক্ত, তাদের জন্য এখন স্বর্ণযুগ চলছে। একসময়ে যেসব বিষয় পরীক্ষা
নিরীক্ষা করা যেতনা তা হঠাত করেই বাস্তব হয়ে গেছে।
আপনাদের ওয়েবসাইটের মহাকাশ বিষয়ক তথ্যাবলী সমৃদ্ধ আর্টিকেলগুলো অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক এবং এর উপস্থাপনা অত্যন্ত সুন্দর। আমার খুব ভাল লেগেছে। এখানে মহাকাশ বিষয়ের উপর প্রশ্নের কোন জবাব দেওয়া হয় কিনা একটু বলবেন। ধন্যবাদ আপনাকে।
ReplyDeleteমাকসুদ ভাই, সব প্রশ্নের উত্তর হয়ত জানবনা। তবে প্রশ্ন চোখে পড়লে এবং সেটার উত্তর জানা থাকলে অবশ্যই উত্তর দেয়া হবে।
Delete