এস্ট্রোনটেরা প্রথমবারের মত মহাকাশে অণুজীব শনাক্ত করলেন।
যেখানেই মানুষ যাক না কেন, সেখানেই অণুজীব বা মাইক্রোব খুঁজে পাওয়া যাবে। এটা একটি অকাট্য সত্য যে আমরা মানুষেরা যেখানেই যাই না কেন সেই জায়গাকে বা জিনিসটাকে দূষিত করে দিই। এর থেকে বোঝা যায় যে মাটির প্রায় ১০০ কিলোমিটারেরও উপর দিয়ে যে ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে সেখানেও ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। সেখানে এই ধরণের অণুজীব যাতে শনাক্ত করা যায় সেটা নিয়ে নাসা বেশ সময় ধরে কাজ করছিল।
আমরা যদি এইসব অণুজীব গুলির
জেনেটিক সিকুয়েন্স মহাকাশেই সনাক্ত করতে পারি তবে তা এস্ট্রোনটদের মহাকশেই চিকিৎসা
করতে পারব। এছাড়াও এই সব অণুজীব কিভাবে মাইক্রোগ্র্যাভিটিতে টিকে আছে তাও জানা
দরকার। যাতে যদি মহাকাশের ওই প্রতিকূল পরিবেশে যদি কোন প্রাণ থেকে তবে খুব দ্রুতই
শনাক্ত করা যায়।
“জিনস ইন স্পেস-৩” প্রজেক্টের
নাসা এস্ট্রোনট ও বায়োকেমিস্টরা এই কাজটি সম্ভবপর করেছেন। প্রথমবারের মত তাঁরা
ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে অণুজীব শনাক্ত করতে পেরেছেন। সাধারণত মানুষের
আনাগোনা যেখানেই থাকে এই অণুজীব সেখানেই পাওয়া যায়। কিন্তু যেই পদ্ধতিতে এই
আবিষ্কার হয়েছে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হতে পারছেন না যে পরবর্তীতেও একই পদ্ধতিতে ভাল
ফলাফল পাওয়া যাবে। এর আগে নতুন অণুজীব সনাক্তকরনের একমাত্র উপায় ছিল কোন কিছু
সন্দেহ হলে তা পৃথিবীতে পাঠিয়ে পরীক্ষা করা। হয়ত এসব অণুজীবের জেনেটিক সিকুয়েন্স
বের করা হয়েছে ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনেই, কিন্তু এর প্রস্তুতির সব কাজ করা
হয়েছিল পৃথিবীতেই।
গত এপ্রিলে ওয়ালেস বলেছিলেন “স্পেস
স্টেশনের একটি অংশে পানির পাইপে কিছু ছত্রাক জমে পাইপলাইন আটকে গিয়েছিল। তারপর
সেটা পরিস্কার করে সেগুলো পৃথিবীতে পাঠানো হয় পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য।“
আমাদের ধারণার চেয়েও অনেক
অণুজীব মহাকাশে আছে বলে আপনি ভাবতে পারেন। পৃথিবী ছাড়ার আগে স্পেসে যেসব
যন্ত্রপাতি নিয়ে যাওয়া হবে সেগুলিকে যথাসাধ্য জীবাণুমুক্ত করা হয়। কিন্তু আমাদের
সবচেয়ে ভাল প্রযুক্তির জীবাণুমুক্ত করার প্রক্রিয়া ব্যবহারের পরেও অণুজীবের সংখ্যা
প্রতি বর্গমিটারে ৩০০ এর নীচে নামানো সম্ভব হয় না। যেখানে একটি রান্নাঘরের মেঝেতে
পরিস্কারের পরেও কয়েক বিলিয়ন অণুজীব অক্ষত থেকে যায়। এর আগে পরীক্ষায় দেখা গেছে
কিছু কিছু অণুজীব বায়ুশূন্য পরিবেশে টিকে থাকতে পারে। এরপরে শনাক্ত হয়েছে যে সেসব
অণুজীব পৃথিবী থেকেই সেখানে গেছে। কিন্তু এমন কোনও অণুজীব পাওয়া যায়নি যার উৎপত্তি
পৃথিবীতে নয়।
অণুজীব শনাক্ত করা হয় দুই
ধাপে। প্রথম ধাপে নাসা এস্ট্রোনট ও বায়োকেমিস্ট পেগী হুইটসন নমুনা সংগ্রহ করেন এবং
তাতে পলিমারেজ চেইন রিএকশন করেন। এই পদ্ধতিতে যে কোনও ডিএনএ এর একই রকম অসংখ্য কপি তৈরি করা
যায়। পরের ধাপে সিকুয়েন্সিং ও অণুজীব শনাক্ত করা হয়। এটা করার জন্য হুইটসন স্পেস
স্টেশনের বিভিন্ন জায়গা থেকে অণুজীব পেট্রিডিশে সংগ্রহ করেন। এরপর সেখানে এক সপ্তাহ রাখার পর কিছুটা নমুনা একটি ছোট টেস্ট
টিউবে নিয়ে মাইক্রোগ্র্যাভিটি সায়েন্স গ্লোভবক্সে রাখা হয়। প্রথমবারের মত এই
পদ্ধতি স্পেস স্টেশনে ব্যবহার করা হয়। হারিকেন হারভে যখন আঘাত হানে তখন জনসন স্পেস
সেন্টারে মাইক্রোবায়োলজিস্টরা কাজ করতে পারছিলেন না। তখন তাঁরা এই কাজটি ইন্টারন্যশনাল
স্পেস সেন্টারে করতে চান। পেগী হুইটসন “হ্যান্ডহেল্ড মিনআয়ন সিকুয়েন্সার” ব্যবহার
করেন এই কাজটি করার জন্য এবং ওয়ালেস এটি ব্যবহারের জন্য তাকে নিজের ব্যক্তিগত
মোবাইল ফোন থেকে সবসময় সহায়তা করেছেন। একই সিকুয়েন্সার ব্যাবহার করেছিলেন নাসা এস্ট্রোনট
কেট রুবিন যখন ২০১৬ সালে তিনি প্রথমবারের মত মহাকাশে থাকা অবস্থায় ডিএনএ
সিকুয়েন্সিং করেছিলেন। সেই ডেটা হিউস্টনে থাকা নাসা টিমের কাছে পাঠানো হয়েছিল
পরবর্তী বিশ্লেষণের জন্য।
ওয়ালেস বলেন “ আমরা দেখলাম
প্রথমে একটি মাইক্রোঅরগানিজম বেড়ে উঠল, এরপর দ্বিতীয়টি। এইসব মাইক্রোঅরগানিজম
সেগুলোই যেগুলো আমরা প্রায়শই স্পেস স্টেশনে দেখে থাকি।“
এ ক্ষেত্রে পাওয়া সকল অণুজীবই
মানুষ যেখানে থাকে, সেখানে খুঁজে পাওয়া যায়। নাসা এখনও নিশ্চিত করেনি কোন কোন
অণুজীব পাওয়া গেছে। নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যাবে যখন ওই অণুজীবগুলো পৃথিবীতে এনে
পরীক্ষা করা হবে এবং দেখা যাবে যে স্পেস স্টেশনে করা সনাক্তকরণ সঠিক ছিল।
No comments