সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলের কারনেই গ্যালাক্সীতে নতুন নক্ষত্র তৈরি হতে পারে না।
আমরা যেভাবে বেড়ে উঠি, মহাকাশের
গ্যালাক্সীগুলিও অনেকটা সেভাবেই বেড়ে ওঠে। যখন এরা কম বয়সের থাকে, এগুলোও তখন খুবই
কর্ম চঞ্চল থাকে, প্রচুর নতুন নক্ষত্রের জন্ম হয় সেখানে। যখন বয়স অনেক বেড়ে যায় তখন
নক্ষত্র তৈরির হারও কমে যায়। একসময় নতুন নক্ষত্র তৈরি হওয়া সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।
গ্যালাক্সী হয়ে যায় তুলনামূলক শান্তিপূর্ণ ও নীরব।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের দীর্ঘ
দিনের প্রশ্ন যে কেন নতুন নক্ষত্র তৈরি বন্ধ হয়ে যায়। এই ব্যাপারটার নাম “কোয়েঞ্চিং।“
বেশীরভাগ সিমুলেশনেই দেখা যায় যে গ্যালাক্সীর কেন্দ্রে থাকা সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলের
কোয়েঞ্চিং এর ওপর কোনও না কোনও ভুমিকা আছে। ব্ল্যাকহোল পছন্দ করে খাওয়া খাদকের মাঝে
পড়ে না। এরা সব খায়। সে ধুলির পুঞ্জ বা গ্যাসের মেঘই হোক আর নক্ষত্রই হোক যাই এটার
গ্যাভিটির থাবার মাঝে চলে আসুক না কেন তা এটা খেয়ে নেবে। যখন ব্ল্যাকহোল কোনও কিছু
গিলে নেয় তখন সেখানে তাপের উতপত্তি হয় এবং উজ্বল আলো ছড়ায়। ব্ল্যাকহোলের জীবনচক্রে
এই ধাপের নাম দেয়া হয়েছে এজিএন বা একটিভ গ্যালাক্টিক নিউক্লিয়াস। এজিএন এর সময়
প্রচুর শক্তি নিঃসরিত হয়। এতে গ্যালাক্সীতে থাকা গ্যাসের মেঘ উত্তপ্ত হয় এবং ঘনীভূত
হয়ে নতুন নক্ষত্রে পরিণত হয়।
ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া-
স্যান্টাক্রুজ এর পোস্টডক্টোরাল গবেষক ইগ্নাসিও মারটিন ন্যাভারো বলেন “ব্ল্যাকহোল ও
নতুন তারা জন্ম নেবার মাঝে কি সম্পর্ক তা বোঝার ব্যাপারে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মাঝে
ব্যাপক বিতর্ক আছে।“ এই দুই এর মাঝে কি সম্পর্ক তা জানার জন্য মারটিন ন্যাভারো ও
তাঁর গবেষক দল খুব সম্প্রতি খুবই ভারী গ্যালাক্সী ও তাদের কেন্দ্রে থাকা
সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল পর্যবেক্ষণ করেছেন। তারা প্রমাণ পেয়েছেন ব্ল্যাকহোল আসলেই
গ্যালাক্সীর কোয়েঞ্চিং এর উপর প্রভাব আছে। আর সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলের ভর নির্ধারণ
করে গ্যালাক্সী কি করে কোয়েঞ্চ হয়।
যেসব গ্যালাক্সীর কেন্দ্রের
সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলের ভর যত বেশী সেসব গ্যালাক্সীর কোয়েঞ্চিংও তত বেশী তাড়াতাড়ি
হয়। যদি কোন গ্যালাক্সীর সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলের ভর খুবই বেশী হয় তবে নতুন নক্ষত্র
তৈরির হার ঐ গ্যালাক্সীর জন্মের শুরুতেই অনেক বেশী হয়। কিন্তু যেসব গ্যালাক্সীর
কেন্দ্রে কম ভরের সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল আছে সেসব গ্যালাক্সীতে দীর্ঘ সময় ধরে
নতুন নক্ষত্র জন্ম নেয়। এর কারণ হল সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলের গ্র্যাভিটি। ভর বেশী
এর অর্থ হল গ্র্যাভিটিও বেশী। ফলে বেশী ভরের সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলের গ্যালাক্সীতে
যেসব গ্যাসের মেঘ ছিল তাদের উপর ঐ ব্ল্যাকহোলের গ্র্যাভিটির প্রভাব বেশী থাকায়
সেগুলি একই স্থানে পুঞ্জীভূত হতে পারেনি যা নতুন নক্ষত্র তৈরি হতে পারার প্রধান শর্ত।
তাছাড়া সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলের গ্র্যাভিটির কারনে অনেক গ্যাসের মেঘ সেখানে পতিত
হয়েছে। ফলে দীর্ঘ সময় ধরে নতুন নক্ষত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় রসদ বেশী ভর সম্পন্ন
সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলের গ্যালাক্সীগুলি পায়না। ঠিক এর উল্টোটা হয় কম ভর সম্পন্ন
সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল থাকা গ্যালাক্সীতে। কারণ ঐসব ব্ল্যাকহোল গুলির যথেষ্ট শক্তিশালী
গ্র্যাভিটি থাকে না, যার কারনে পুঞ্জীভূত হতে থাকা গ্যাসকে ছিন্নভিন্ন করে দিতে
পারবে। ফলে তাতে দীর্ঘ সময় ধরের নতুন নক্ষত্র তৈরি হবার ধারা চলমান থাকে। একই কারণে
কম ভর সম্পন্ন সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল থাকা গ্যালাক্সীতে কম বয়েসী নক্ষত্রের সংখ্যা
তুলনামূলক বেশী থাকে।
গত ১লা জানুয়ারী ২০১৮, সোমবারে “নেচার” জার্নালে এই ব্যাপারে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করা হয়। এটি এখানে থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন। মারটিন ন্যাভারো ও তাঁর দল অসংখ্য গ্যালাক্সী থেকে আলোর নমুনা সংগ্রহ করে সেগুলিকে দুটি ভিন্ন ধরণের তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোতে বিচ্ছিন্ন করতেন। এই পদ্ধতিটি এস্ট্রোফিজিক্সে বহুলভাবে ব্যবহার করা হয়। যে কোনও নক্ষত্রের বয়সসহ নক্ষত্র সম্পর্কে বহু মুল্যবান তথ্য এই পদ্ধতিতে সংগ্রহ করা যায়। এই পদ্ধতিতে মারটিন ন্যাভারো ও তাঁর দল প্রত্যেক গ্যালাক্সীর নক্ষত্র সৃষ্টি হবার ধাঁচের ইতিহাস বের করেছেন। তারপর সেই তথ্যগুলিকে তাতে থাকা সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলের ভরের সাথে তুলনা করেছেন। সেই সব ব্ল্যাকহোলের ভর থেকে জানা গিয়েছে প্রত্যেক গ্যালাক্সীতে কি পরিমাণ শক্তি আছে। ব্ল্যাকহোল যত বেশী ভারী, তত বেশী শক্তি সেই গ্যালাক্সীর এবং তত তাড়াতাড়ি সেই গ্যালাক্সীর কোয়েঞ্চিং ঘটেছে।
No comments