সৌরজগতের কোন গ্রহে আপনি কতক্ষণ বাঁচবেন।
যতই
বিভিন্ন ধরণের সমস্যা থাকুক না কেন, এখন পর্যন্ত পৃথিবী সবচেয়ে সুন্দর জায়গা। রঙ্গিন
সূর্যাস্ত, সমুদ্রের উষ্ণ হাওয়া, পোষা পাখি এসবের ব্যাপারে একটু চিন্তা করুন, দেখুন
মন খারাপ থাকলে ভাল হয়ে গেছে। অন্তত পৃথিবীতে থাকা অবস্থায় আমরা গরমে বাষ্পে বা ঠাণ্ডায়
কঠিনে পরিণত হয়ে যাচ্ছি না। জীবন আসলেই সুন্দর, যখন সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহতে জীবনের
অবস্থা কেমন হতে পারে চিন্তা করা হয় তখন তো আরও সুন্দর মনে হয়। এই চিন্তা করার সময়
আপনি পৃথিবীতে যেভাবে কোন কৃত্তিমতার সাহায্য নিয়ে বাঁচেন না, তেমন করেই চিন্তা
করবেন।
সূর্যঃ
সূর্যের তিন
মিলিয়ন মাইল দুরত্বে তাপমাত্রা থাকে প্রায় ২৪৮ ডিগ্রী ফারেনহাইট, যা একজন এস্ট্রোনটকে
মেরে ফেলার জন্য যথেষ্ট। এক মিলিয়ন মাইলের ভেতর কোনও কিছু অক্ষত থাকতে পারবে না।
কোনও কিছু যদি এরও কাছে পৌঁছে তবে তা কত সময়ে সম্পূর্ণ বাষ্পে পরিণত হবে তা নির্ভর
করছে বস্তুর গঠনের ওপরে। যদি সেই বস্তু মানুষ বা কোনও প্রানী হয় তবে তা এক সময়েরও
কম সময় টিকবে। উল্লেখ্য যে সূর্যের পৃষ্ঠ, যা এর সবচেয়ে ঠাণ্ডা জায়গা, তার
তাপমাত্রা হল ৯,৯৪০ ডিগ্রী ফারেনহাইট।
বুধ বা মার্কারিঃ
বুধ গ্রহের
যে দিকটা সূর্যের তাপ পায় অর্থাৎ এর দিনের বেলায় তাপামাত্রা থাকে প্রায় ৪২৭ ডিগ্রী
সেলসিয়াস। আর যে দিকে রাত থাকে সেদিকের তাপমাত্রা মাইনাস ১৭৯ পর্যন্ত নামতে পারে। কোনও
মানুষ যদি বুধের দিন বা রাত যেকোনো দিকেই যায়, তবে বেঁচে থাকার সম্ভবনা খুবই কম।
কিন্তু যদি সে বুধের এমন জায়গাতে যেতে পারে যেখানে সন্ধ্যা হচ্ছে সেখানে হয়ত
তাপমাত্রা মানুষের সহনীয়তার পর্যায়ে থাকবে, তবে তার বেঁচে থাকতে পারাটা নির্ভর
করবে যতক্ষণ সে শ্বাস ধরে রাখতে পারবে ততক্ষণ। তাই বুধে বেঁচে থাকতে পারার আনুমানিক
সময় হতে পারে দুই মিনিট। কারণ বুধের বায়ুমন্ডল প্রায় নেই বললেই চলে।
শুক্র বা ভেনাসঃ
সৌন্দর্যের
দেবীর নামে নাম হলেও গ্রহের পরিবেশ কিন্তু ঘষেটি বেগমের মত। শুক্রের পৃষ্ঠ
তাপমাত্রা প্রায় ৪৮২ ডিগ্রী সেলসিয়াস যা একে আমাদের সৌরজগতের সবচেয়ে উষ্ণ গ্রহ
বানিয়েছে। নেইল টাইসন ডিগ্রাসে বলেন “ শুক্রের গ্র্যাভিটি পৃথিবীর প্রায় সমান, তাই
যতক্ষণ পর্যন্ত বাষ্পে পরিণত না হচ্ছেন ততক্ষণ অন্ততঃ হেটে বেড়াতে কোনও অসুবিধা হবে
না।“ বায়ুমন্ডলে সালফিউরিক এসিড থাকা এই গ্রহে মানুষ বড় জোর এক সেকেন্ড টিকবে।
পৃথিবী বা আর্থঃ
বায়ুমন্ডলে
অক্সিজেন, খাবার, পানি আর যা কিছুর জন্য আমাদের এই গ্রহটি বাসযোগ্য, সবকিছু উপভোগ
করে অপঘাতে মৃত্যু না হলে মানুষ এখানে গড়ে ৮০ বছর বাঁচে এই তথ্য তো আপনারা প্রায়
সকলেই জানেন। যদি আপনি “ব্লু জোনে” থাকেন, যেসব দেশে বা জায়গাতে মানুষ সাধারণ মানুষদের
চেয়ে বেশীদিন বাঁচে, তবে এর চেয়ে বেশী দিনও হয়ত বাঁচতে পারেন।
মঙ্গল বা মার্সঃ
“মঙ্গলে শীত
প্রচন্ড। কিন্তু বাতাস খুবই পাতলা। তাই পৃথিবীতে শীত যেমন কাবু করে ফেলতে পারে, মঙ্গলে
হয়ত ততটা নাও অনুভূত হতে পারে।“ বলেন নেইল টাইসন ডিগ্রাসে। যদি উপযুক্ত শীতের কাপড়
নিয়ে হাঁটা শুরু করেন তবে দম ধরে রাখা পর্যন্ত হাঁটতে পারবেন। কারণ বাতাসে নেই অক্সিজেন।
তাই এখানে হয়ত মিনিট দুয়েক টিকবেন।
বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস ও নেপচুনঃ
প্রতিটি
গ্রহই গ্যাসের বল। জীবনের জন্য মোটেও অনুকূল নয়। সব গ্রহে ল্যান্ড করার জন্য কোনও
কঠিন জায়গা খুঁজে পাবেন না। যে গ্যাস আছে তা মূলত হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম। তাই এসব
গ্রহে যদি কেউ নামে তবে সে গ্রহটির কেন্দ্রের দিকে পড়তে থাকবে। তবে কেন্দ্রে পৌঁছাবে
না কখনও। যত নীচের দিকে যেতে থাকবে বায়ুচাপ তত বাড়তে থাকবে। একসময় এই চাপের কারনে ছিন্নভিন্ন
হয়ে যাবে সেই ব্যাক্তি প্রানী। তাই এই সবকটি গ্রহেই বেঁচে থাকার আনুমানিক সময় এক
সেকেন্ড।
No comments