Header Ads

  • সর্বশেষ

    এই টেলিস্কোপের একেকটি আয়না তৈরিতে খরচ প্রায় ২০ মিলিয়ন ডলার।

    বড় কোন টেলিস্কোপের জন্য আয়না বানানো কোন সহজ কাজ নয়। একটি বিশাল টেলিস্কোপ তৈরি করে সেটা কাজে লাগাতে গেলে তাতে থাকতে হয় বিশাল আকারের আয়না, সেই আয়নার বাঁক ন্যানোমিটার লেভেলে সঠিক হতে হয়। আর এই দুটি ব্যাপার সঠিক হলে উপযুক্ত সফটওয়্যার প্রয়োজন হয় এটা পরিচালনা করতে। কিন্তু সম্প্রতি তৈরি হতে থাকা জায়ান্ট ম্যাজিলান টেলিস্কোপ (GMT) এর আয়নাগুলি তৈরি আগের সব মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
    জায়ান্ট ম্যাজিলান টেলিস্কোপ তৈরির প্রজেক্টটি এক বা দুই বছরের নয়। প্রায় দশক জুড়ে এর কাজ হবে। দ্য জায়ান্ট ম্যাজিলান টেলিস্কোপ অর্গানাইজেশন বা GMTO এবং ইউনিভার্সিটি অব এরিজোনা’র রিচারড এফ ক্যারিস মিরর ল্যাবরেটরী এই টেলিস্কোপের মোট সাতটি আয়নার একটির কাজ ২০০৫ সালে শুরু করেছিল। ২০২৫ সাল নাগাদ এই টেলিস্কোপের কাজ সম্পূর্ণরূপে শেষ হবে বলে তারা আশাবাদী। যখন কাজ শেষ হবে তখন এটিই হবে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় টেলিস্কোপ। সাতটি আলাদা আলাদা ৮.৪ মিটার প্রশস্ত আয়নাকে যখন একটি টেলিস্কোপের রুপ দেয়া হবে তখন সম্পূর্ণ টেলিস্কোপের প্রশস্ততা হবে ২৪.৫ মিটার। এর রেজুলেশন হবে হাবল টেলিস্কোপের ১০ গুণ বেশী। বিজ্ঞানীদের আশা যে এই টেলিস্কোপ দিয়ে যখন কাজ শুরু করা হবে তারপর আমরা মহাকাশের আরও দূরে দেখাতে পাব হয়ত গ্যালাক্সী গুলি কিভাবে তৈরি হওয়া শুরু করেছে সেটাও।
    একেকটি আয়নার জন্য খরচ হচ্ছে প্রায় ২০ মিলিয়ন ইউএস ডলার। তৈরি করতে একেকটি আয়নার জন্য সময় লাগছে গড়ে দুই বছর। এই আয়না তৈরির সময় পরিকল্পনা হতে হয়েছে একদম নিখুঁত। একদম শুরুতে প্রায় ১৭ কেজি বিশেষ ধরণের কাঁচ নির্দিষ্টভাবে সাজানো হয়েছে এবং তাতে খুঁত আছে কিনা তা পুংখানুপুঙ্খ ভাবে পরীক্ষা করা হয়ছে। তারপর প্রায় ১৫ মেট্রিক টন ভরের একটি সিরামিকের ছাঁচ বানানো হয়েছে। কাঁচ গুলিকে খুবই ধীরে ধীরে গলানো হয়েছে এবং একটি পরাবৃত্তাকার আকার দেবার জন্য ফারনেসে উপর খুবই সাবধানতার সাথে ঘোরানো হয়েছে। এরপর প্রায় তিন মাস সময় নিয়ে একে ঠান্ডা করা হয়ছে। এটাতো মাত্র শুরু।
    ঠাণ্ডা হবার পর এই বিশাল আয়নাকে একটি আরও বিশাল ভরের মেশিন দিয়ে তুলে হাল্কা কাত করে আনুভূমিক ভাবে রাখা হয়। এরপর ছাঁচ থেকে ধুয়ে তুলে শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় এবং আবার ঘোরানো হয়। নিখুঁতভাবে কর্মরত দল আয়নার পিছন টা সমান করে। এরপর তারা আয়নাকে প্রয়োজনীয় পরিমাণ বাঁক দেয়া। আয়নাটি এতটাই মসৃণ যে এর সামনের দিকে কোনও অংশই ২০ ন্যানোমিটারের বেশী উঁচুনিচু নয়। এই কাজটি করতে সময় লেগেছে প্রায় ১৮ মাস। এতকিছু করার পর কিছু অপটিক্যাল টেস্ট, যার অনেকগুলি আবার শুধুমাত্র এই প্রজেক্টের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। ক্যারিস মিরর ল্যাবরেটরীর জন্য এই কাজটি শেষ করতে পারা হবে একটি বিশাল অর্জন।
    চারটি আয়নার কাজ শেষ হলে সেগুলি চিলিয়ান আন্দিজে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে একটি পর্বতের চূড়ায় এই টেলিস্কোপটি বসানো হবে। আয়নাগুলি চিলি পর্যন্ত নিয়ে যাওয়াও একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ, যে দলটি কাজ করছে তাঁরাও এখনও জানে না কিভাবে কাজটি করা হবে। GMTO আশাবাদী যে ২০২৩ সাল নাগাদ এই চারটি আয়না সম্পূর্ণরূপে বসানোর কাজ শেষ হবে, হয়ত তখনই এই টেলিস্কোপ দিয়ে প্রথমবারের মত আলো প্রবেশ করবে। 

    No comments

    Post Top Ad

    Post Bottom Ad