Header Ads

  • সর্বশেষ

    আকাশের সবচেয়ে উজ্বল নক্ষত্র সিরিয়াস কিছু একটা লুকিয়ে রেখে ছিল।


    ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সী’র “গায়া মিশন” শুরু হয় ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে। তারপর থেকে এই স্পেস অবজারভেটরি অসংখ্য মহাজাগতিক বস্তু পর্যবেক্ষণ শেষ করেছে। এগুলোর মাঝে আছে নক্ষত্র, গ্রহ, ধুমকেতু এবং গ্যালাক্সী। এটা করা হয়েছে যাতে এই সব মহাজগতিক বস্তুগুলির একটি ত্রিমাত্রিক বা থ্রি ডাইমেনশনাল ক্যাটালগ তৈরি করা যায়। আসা করা যায় যে মিশনটি শেষ হওয়া নাগাদ আমরা আরও অনেক অজানা বিষয় নিয়ে জানব।
    যখন গায়া মিশনের প্রথম ডেটা সবার জন্য উন্মুক্ত করা করা হয় দেখা গেল যে গায়া এমন কিছু একটা আবিষ্কার করেছে যা এতদিন জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের চোখের আড়ালেই ছিল। সিরিয়াস হল আমাদের মহাকাশের সবচেয়ে উজ্বল নক্ষত্র। গায়া যখন এই সিরিয়াসকে পর্যবেক্ষণ করে, এটি একটি তারার গুচ্ছ বা স্টার ক্লাস্টার আবিষ্কার করে। কয়েকশ বা কয়েক হাজার নক্ষত্রের সমন্বয়ে একেকটি স্টার ক্লাস্টার তৈরি হয়। সিরিয়াস নক্ষত্রের প্রচন্ড উজ্বলতার কারনে এই স্টার ক্লাস্টার দেখা যেত না। এই স্টার ক্লাস্টারের নাম এখন “গায়া ১”। আর এই স্টার ক্লাস্টারের ছবি প্রথম তুলেছেন জার্মানির একজন সৌখিন জ্যোতির্বিদ।
    শিল্পীর কল্পনায় সিরিয়াস এ ও সিরিয়াস বি।
    সিরিয়াসের উজ্বলতা অনেক বেশী হবার কারনে এটাকে পৃথিবীর প্রায় সব জায়গা থেকেই দেখা যায়। সিরিয়াস নক্ষত্রের একটি প্রাচীন ইতিহাস আছে। অনেক সভ্যতার জ্যোতির্বিদ্যা সংস্কৃতির সাথে এই নক্ষত্রটি খুবই গুরুত্ব নিয়ে জড়িত ছিল। প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতায় এই নক্ষত্রের অবস্থানের ব্যাপারে নজর রাখা হত যাতে সময় নির্ণয় ও কৃষিকাজ সঠিকভাবে করা যায়। সিরিয়াস আকাশে ফেরত আসা মানেই নীল নদ থেকে বন্যা হবে বলে প্রাচীন মিশরীয়রা নিশ্চিত থাকত।
    প্রাচীন গ্রীক মিথলজিতে সিরিয়াসকে ক্যানিস মেজর কন্সটিলেশনের কেন্দ্র ধরা হত। চাইনিজ জ্যোতির্বিদ্যায় এই নক্ষত্রকে বলা হত “মহাজাগতিক নেকড়ে বা সেলেস্টিয়াল অলফ”। উনিশ শতকের মাঝামাঝিতে এসে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করলেন যে সিরিয়াস আসলে একটি বাইনারী স্টার সিস্টেম। এই দুটি নক্ষত্রের একটি মেইন সিকুয়েন্স হোয়াইট ডোয়রফ নক্ষত্র যার ভর আমাদের সূর্যের প্রায় দ্বিগুন (সিরিয়াস এ) এবং অন্যটি একটি সাধারণ হোয়াইট ডোয়রফ নক্ষত্র (সিরিয়াস বি) যার ভর আমাদের সূর্যের ভরের চেয়ে সামান্য বেশী। সিরিয়াসের ব্যাপক উজ্বলতার অর্থ হল জ্যোতির্বিদদের এই নক্ষত্রের স্বভাব জানতে হলে এই নক্ষত্রের আলো নিয়ে প্রচুর বিশ্লেষণ করতে হবে। কারণ এর উজ্বলতার কারণে এর কাছাকাছি কোনও মহাজাগতিক বস্তুই ভালোভাবে দেখা বা বোঝা যায় না।
    তাই সিরিয়াস নক্ষত্র সিস্টেমের কাছাকাছি থাকা এইসব নক্ষত্রের সংখ্যা যে আসলে কত তা বের করতে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এই “গায়া ১” স্টার ক্লাস্টার আবিষ্কার করেন। এর পর সেখানে আরও একটি স্টার ক্লাস্টার আবিষ্কার হয় যার নাম “গায়া ২”। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সর্বপ্রথম এইসব তথ্য সাধারণের জন্য প্রকাশ করা হয়। এই তথ্য জানার পর জ্যোতির্বিজ্ঞান মহলে ব্যাপক সাড়া পড়ে এবং সিরিয়াসের কাছাকাছি থাকা এই সব নক্ষত্র নিয়ে অনেক গবেষণা শুরু হয়ে যায় যা এখনও প্রকাশের অপেক্ষাতে আছে।
    স্টার ক্লাস্টার আবিষ্কারের খবর প্রকাশের পর অনেকেই সরাসরি এটার ছবি তোলাতে লেগে পড়েন। প্রায় বছর খানেক আগে কারলস্রুহে, জার্মানির একজন সৌখিন জ্যোতির্বিদ হেরাল্ড কেইসার গায়া মিশন নিয়ে একটি সেমিনারে অংশগ্রহন করেন। সেখান থেকে তিনি জানতে পারেন “গায়া ১” স্টার ক্লাস্টারের ব্যাপারে। তারপর থেকে কেইসার পরবর্তী পরিস্কার রাতের জন্য তার ৩০সেন্টিমিটার টেলিস্কোপ নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন।
    প্রথমে তিনি সিরিয়াস সিস্টেমের কিছু ছবি তোলেন যাতে সেটার উজ্বলতা সম্পর্কে ধারণা নেয়া যায়। এই উজ্বলতা কমানোর পর তিনি “গায়া ১” স্টার ক্লাস্টারের ছবি তুলতে সক্ষম হন। স্টার ক্লাস্টারটি সিরিয়াস নক্ষত্র সিস্টেমের দুটি নক্ষত্রের ঠিক মাঝখানে অবস্থিত (যদি দর্শকের অবস্থান পৃথিবীতে হয়)।
    কার্নেগী মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের সারগেই কপ্সোভ গত বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে একটি গবেষণা প্রকাশ করেন। সেখানে বলা হয় "গায়া ১" আসলে একটি বিশাল ও প্রচন্ড ভারী স্টার ক্লাস্টার। এর ওট ভর সূর্যের চেয়ে প্রায় ২২,০০০ গুণ বেশী, ব্যাস প্রায় ২৯ আলোকবর্ষ এবং পৃথিবী থেকে এর অবস্থান প্রায় ১৫,০০০ আলোকবর্ষ দূরে।
    জ্যোতির্বিজ্ঞানীর এখন তাকিয়ে আছেন আগামী ২৫শে এপ্রিল, ২০১৮ এর দিকে। এটি গায়া মিশনের দ্বিতীয় প্রেস রিলিজের প্রস্তাবিত তারিখ। হয়ত তখন আরও গুরত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশিত হবে।

    No comments

    Post Top Ad

    Post Bottom Ad