Header Ads

  • সর্বশেষ

    মিল্কিওয়ের মাঝে দিয়ে আমাদের সূর্য বা অন্যান্য নক্ষত্র কিভাবে চলমান?


    চলুন আমাদের সৌরজগতের সাথে কাছাকাছি অন্যান্য নক্ষত্রের গতির সাথে তুলনা করে শুরু করা যাক। সৌরজগতের কাছাকাছি এইসব নক্ষত্রগুলিকে একসাথে ইংরেজিতে বলা হয় Local solar neighborhood, চলুন বাংলায় বলি “সৌরজগতের প্রতিবেশী নক্ষত্ররাজি।“ ছবিতে ছোট বাক্সের মাঝে এই Local solar neighborhood এর একটি তুলনামূলক চিত্র দেখানো হয়েছে। এই এলাকার নক্ষত্রগুলির গতি একটির সাথে আরেকটির তুলনা করলে দেখা যাবে যে কারো সাথে কারো গতির কোনও নির্ভরশীলতা নেই। ইংরেজীতে যাকে বলে Random. এই সব নক্ষত্রের গতি খুবই বেশী। যেমন সূর্য তার কাছের একটি নক্ষত্রের দিকে ঘন্টায় প্রায় ৭০,০০০ কিলোমিটার বেগে ছুটে চলেছে, যা ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন যে গতিতে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে তার প্রায় তিন গুন। 


    এত বেশী গতি থাকলেও আমরা কাছাকাছি এই নক্ষত্ররাজিকে নড়তে বা চলতে দেখিনা কেন? উত্তরটা হল একটি নক্ষত্র থেকে আরেকটা নক্ষত্রের মাঝে ব্যাপক দুরত্ব। হয়তবা আপনি খেয়াল করে থাকবেন যে, দূরে উড়তে থাকা কোন বিমানকে মনে হয় প্রায় স্থির বা গতি খুব ধীরগতির, কিন্তু প্রায় মাথার উপরে থাকা বা কাছাকাছি দুরত্বে উড়ছে এমন বিমানের গতি মনে হয় দূরের বিমানের চেয়ে অনেক বেশী। তাই কোন নক্ষত্রের গতি ঘন্টায় প্রায় ৭০,০০০ কিলোমিটার হলেও দুরত্ব এতটাই বেশী থাকে যে কেউ যদি প্রায় হাজার বছর ধরে সেটার দিকে তাকিয়ে থাকে তবেই সেটা চলছে বলে দর্শকের চোখে ধরা পড়বে। তাই আকাশে সপ্তর্ষিমন্ডল বা কালপুরুষ নক্ষত্রমণ্ডলকে আমরা দিনের পর দিন একই রকম দেখি। কিন্তু আজ থেকে ১০,০০০ বছর বা ৫০,০০০ বছর বা ৫০০,০০০ বছর আগে তাদের একসাথে দেখতে এমন লাগতনা এবং আজ থেকে ১০,০০০ বছর বা ৫০,০০০ বছর বা ৫০০,০০০ বছর পরও তাদের দেখতে এমন লাগবে না। তখন তাদের এই উচ্চগতির চলতে থাকার ব্যাপারটা ধরা পড়বে। নক্ষত্রদের এই চলতে থাকার ব্যাপারটা যদি এতসময় ধরে ভিডিও করে রাখা যেত তাহলে নিশ্চিতভাবেই তাদের এই অবস্থানের পরিবর্তনটা ধরা পড়ত। দেখতে পারতে নক্ষত্রগুলি মহাকাশে কি দ্রুত গতিতে ছুটছে।

    গ্যালাক্সীর ঘূর্ণনঃ

    মনে করুন কিছু পাতা একটি পুকুরের পানিতে পড়ে আছে। হাল্কা বাতাস বইছে। পাতা গুলির দিকে তাকালে মনে হবে তারা এলোমেলোভাবে পানিতে ভাসছে। এবার আপনার দৃষ্টিসীমার মাঝে সম্পূর্ণ পুকুরটা নিন। দেখবেন ভাসতে থাকা ওই সব গুলি পাতাই একটি নির্দিষ্ট দিকে ছুটছে। কোন দিকে ছুটছে তা নির্ভর করবে বাতাস কোন দিক থেকে আসছে অর্থাৎ শক্তি কোন দিক থেকে আসছে তার উপর। তেমনি যদি আমাদের দৃষ্টিসীমা Local solar neighborhood হয় তবে আমরা দেখব যে এতে থাকা নক্ষত্ররাজির প্রত্যেকের গতি আলাদা আলাদা এবং গতি খুবই দ্রুত। কিন্তু দৃষ্টিসীমায় যদি সম্পূর্ণ গ্যালাক্সীকে আনা হয় তবে দেখব ওই গ্যালাক্সীতে থাকা সমস্ত নক্ষত্র একটি নির্দিষ্ট দিকে চলমান এবং ওই দিকটা হল যেদিকে নক্ষত্রটি নিজের অক্ষের উপর পাক খাচ্ছে। আমরা যে গ্যালাক্সীতে আছি তার নাম আমরা দিয়েছি “মিল্কিওয়ে।“ আমাদের নক্ষত্র সূর্য মিল্কিওয়ের কেন্দ্র থেকে প্রায় ২৭,০০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। মিল্কিওয়েকে একবার পাক দিতে সূর্যের লেগে যায় পৃথিবীর হিসেবে প্রায় ২৩০ মিলিয়ন বছর। মিল্কিওয়ের বাইরে থেকে দেখলেও খালি চোখে এই গতিকে ধরা যাবেনা। যদি হিসাব করা হয় তবে দেখা যাবে যে আমাদের সূর্য মিল্কিওয়েকে ঘন্টায় প্রায় ৮০০,০০০ কিলোমিটার বেগে প্রদক্ষিণ করছে।

    মিল্কিওয়ের এই ঘূর্ণন নিয়ে গবেষণা করে একটি অসাধারণ ব্যাপার আবিষ্কার হয়েছে। গ্যালাক্সীকে প্রদক্ষিণ করতে থাকা নক্ষত্রগুলির গতি বিভিন্ন দুরত্বে বিভিন্ন রকম। এই গতি থেকে আমরা জানতে পারি একটি গ্যালাক্সীর বিভিন্ন জায়গায় ভরের বন্টন কম না বেশী। এই গবেষণা থেকে জানা গেছে একটি গ্যালাক্সীতে যেসব  নক্ষত্রগুলি দেখা যায়, সেগুলির একত্রিত ভরকে একটি আইসবার্গের উপরে থাকা কিছু বরফের ভরের সাথে তুলনা করা যায়। গ্যালাক্সীর বেশীরভাগ ভর থাকে তার দৃশ্যমান চাকতির বা গ্যালাক্টিক ডিস্কের বাইরে। আমরা এই ভর কেমন আচরণ করে তা জানিনা, তাই এর নাম দিয়েছি ডার্ক ম্যাটার। এই নাম হবার আরও একটি কারণ হল তা থেকে কোনও আলোর প্রতিফলন ঘটে না। মিল্কিওয়ে ছাড়াও অন্যান্য গ্যালাক্সীর ক্ষেত্রেও একই ফলাফল পাওয়া গিয়েছে। এর মানে হল এই সব গ্রহ বা নক্ষত্র যে ধরনের পদার্থ দিয়ে তৈরি, ডার্ক ম্যাটার অবশ্যই সে ধরণের পদার্থ নয়।

    No comments

    Post Top Ad

    Post Bottom Ad